দিল্লি, ২৯ জুলাই – উত্তপ্রদেশের পর দিল্লির রাজেন্দ্রনগরেও চললো বুলডোজার। আইএএস কোচিং সেন্টারে দুর্ঘটনার পর বেআইনি নির্মাণগুলি চিহ্নিত করে সোমবার সকাল থেকেই নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু করেছে দিল্লি পুরনিগম। সূত্রের খবর, এই নির্মাণগুলি ভাঙার আগে দিল্লি পুলিশের অনুমতিও চাওয়া হয়। পুলিশ অনুমতি দেওয়ার পরই বেশ কয়েকটি বুলডোজ়ার নিয়ে রাজেন্দ্রনগরে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু করেন পুরনিগমের আধিকারিকরা। তাঁদের সঙ্গে ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী।
এদিকে নিরাপত্তায় গাফিলতির কারণে এদিন ১৩ টি কোচিং সেন্টার সিল করে দেয় দিল্লি প্রশাসন। এই কোচিং সেন্টারগুলি বেসমেন্টে তাদের শিক্ষা সংক্রান্ত কাজকর্ম চালাচ্ছিল। পুর প্রশাসনের সেগুলি নজরে আসার পরই সিল করে দেওয়া হয়। দিল্লিতে রাজেন্দ্রনগরে ইউপিএসসি কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জল ঢুকে তিন পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতেই তৎপর হয় প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেসমেন্টগুলিতে পার্কিং এবং স্টোরেজের অনুমোদন ছিল। সেই নিয়ম অগ্রাহ্য করে শিক্ষার কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছিল বেসমেন্টগুলি। ইতিমধ্যেই দিল্লি পুরনিগম কমিশনার অশ্বিনী কুমার এক জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করেছেন। কোচিং সেন্টারের ঘটনার পর এই প্রথম দফতরের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করল পুরনিগম। বৃষ্টিতে রাস্তায় জল জমার নেপথ্যে পুরনিগমের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন স্থানীয় মানুষজন এবং পড়ুয়ারা। কোচিং সেন্টারের ঘটনার জন্য পুরনিগমের বিরুদ্ধে একাংশের অভিযোগ ওঠার পরই দুই ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
মেয়র শেলী ওবেরয় ঘটনার দিনই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, যত বেআইনি নির্মাণ আছে, সেগুলি চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। তার পরই রবিবার থেকে সেই কাজ শুরু করে দেয় পুরপ্রশাসন। কোন কোন কোচিং সেন্টার নিয়মবিরুদ্ধ কাজ করছে, তা খতিয়ে দেখাও শুরু হয়। তার মধ্যেই রাজেন্দ্রনগরের কোচিং সেন্টারের এই ঘটনায় পুরপ্রশাসনের উপর আরও চাপ বাড়ল বলে মনে করছেন অনেকেই।
কোচিং সেন্টারের ঘটনার পর থেকেই উত্তাল দিল্লি । বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পড়ুয়ারা। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরপ্রশাসন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে পুরনিগমের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কোচিং সেন্টারের মালিকের গাফিলতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। পড়ুয়ারা সহজেই বেসমেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু বেসমেন্টের জন্য যে নিয়ম রয়েছে, তা মানেননি কোচিং সেন্টার কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সোমবার দিল্লির কোচিং সেন্টারে জলে ডুবে তিন পরীক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ। সোমবার এই নিয়ে লোকসভা, রাজ্যসভায় আলোচনা শুরু হতেই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে কোচিং সেন্টারগুলির কড়া সমালোচনা করেন জগদীপ ধনখড়। তাঁর মন্তব্য, ”কোচিংয়ের নামে সব ব্যবসা চলছে। প্রতিদিন খবরের কাগজের প্রথম বা দ্বিতীয় পাতায় এসব কোচিং সেন্টারের বড় বড় বিজ্ঞাপন দেখা যায়।” তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব পেশ করেছিলেন সাংসদরা। তাই অধিবেশনের আগে ধনখড় সবকটি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন।
সর্বভারতীয় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে এভাবে মৃত্যুমুখে পড়ার ঘটনা কোচিং সেন্টারগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে । আর সেই প্রশ্ন আরও উসকে দিলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়।
শনিবার রাজেন্দ্রনগরের এক কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে বৃষ্টির জল ঢুকে তিন আইএএস পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় কোচিং সেন্টারের মালিক-সহ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।