কেন্দ্রকে তোপ সাকেত, সাগরিকা, কুনাল সহ তৃণমূলের
নিজস্ব প্রতিনিধি: নবগঠিত এনডিএ সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় বাজেট মঙ্গলে পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তবে, এটিকে ‘কেন্দ্রীয়’ বাজেট বলার পক্ষপাতী নয় বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তার পরিবর্তে, এই বাজেটকে ‘বিহার-অন্ধ্রপ্রদেশ’-এর বাজেট, ‘ব্ল্যাকমেল’, ‘বাংলা বিরোধী বাজেট’ বলেই কটাক্ষ করছে তৃণমূল। বাজেটে ‘পূর্বোদয় পরিকল্পনার’ কথা বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করবে এই ‘পূর্বোদয় পরিকল্পনা’। অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব রেলের কথা বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে অমৃতসর-কলকাতা বাণিজ্যিক করিডরের কথা। তবে সেটা বলার সময়েও বিহারের গয়া কী ভাবে উপকৃত হবে, সে কথাই বেশি করে বলেছেন অর্থমন্ত্রী। নির্মলার বক্তব্য থেকে কেন্দ্রীয় বাজেট, সবেতেই উধাও পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের পাশাপাশি বাজেটে এই রাজ্য বৈষম্য -এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও কটাক্ষের সুর চড়িয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বগণ।
কেন্দ্রীয় বাজেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “এই কেন্দ্রীয় বাজেটে আবারও প্রকাশ্যে নির্লজ্জ বৈষম্য। বন্যা ত্রাণ ও পুনর্গঠন তহবিল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র বাংলাকেই বাদ দেয়। ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলার মানুষকে উপেক্ষা করে অন্য রাজ্যে তহবিল প্রদান করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব প্রদান করে, কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় বাজেটে আবারও বাংলা বর্জনের শিকার।” তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ এ প্রসঙ্গে এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “কেন্দ্রীয় বাজেটের প্রতিবাদে রাজ্যসভা থেকে তৃণমূল নেতৃত্বরা ওয়াক আউট করেছেন, যা সংকীর্ণ রাজনীতির বেদীতে যুক্তরাষ্ট্রীয় চেতনাকেই বলিদান করে। এই বাজেট একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বিরোধী, বাংলা বিরোধী বাজেট। বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশ কেবলমাত্র বাজেটে লাভবান হয়েছে কারণ এনডিএ সরকার নিজেকে বাঁচানোর জন্য জোটের শরিকদের ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এই সরকার দ্রুত বিপর্যস্ত হচ্ছে জেনেই এই পরিকল্পনা।” রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ এ প্রসঙ্গে তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “কেন্দ্রীয় বাজেট নয়, এটা কুর্সি রাখতে অন্ধ্র ও বিহারকে তোষণের বাজেট। বাংলাকে আবার বঞ্চনা! অথচ বাংলার কিছু কাজকে নকল করার চেষ্টা। দেশের মূল সমস্যাগুলির সমাধানের দিশা নেই। শব্দ আর সংখ্যার জাগলারিতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা! কেন্দ্রের আর্থিক ও রাজনৈতিক দেউলিয়ার প্রতিফলন এই বাজেট।” রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র ঋজু দত্ত লেখেন, “বাজেট হলো প্রহসন! বাজেটটি মিলি-ঝুলি সরকারের প্রতিফলন। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, গরিবদের জন্য কিছুই নেই বাজেটে, কেবল ফাঁকা প্রতিশ্রুতি! সমস্ত অ-বিজেপি রাজ্য সহ পশ্চিমবঙ্গকে আবারও উপেক্ষা করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য বাংলাকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার জন্য এই রাজ্যের বাসিন্দাদের শাস্তি দেওয়া হল।”
উল্লেখ্য, বাজেটে এক গুচ্ছ সুযোগ সুবিধা, উন্নয়নমূলক প্রকল্প ইত্যাদি বরাদ্দ হয়েছে বিহার এবং অন্ধ্রের জন্য। বিহারের বিভিন্ন সড়ক প্রকল্পের জন্য ২৬ হাজার কোটি, অন্ধ্রপ্রদেশকে চলতি অর্থবর্ষে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। আদতে এনডিএ সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ শরিক বিহারের জেডিইউ এবং অন্ধ্রের টিডিপিকে খুশি রাখতেই এই বাজেট নির্মিত হয়েছে, স্পষ্ট দাবি তৃণমূলের। কেন্দ্রের বাজেটে আর্থিক ও রাজনৈতিক দেউলিয়া এবং এনডিএ জোট সরকারের শরিক দলগুলির নিজস্ব স্বার্থই প্রতিফলিত হয়েছে বলে দাবি করছেন তৃণমূলের একাংশ। বাজেটে কলকাতা-অমৃতসর ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে, অরুণাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিমের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ বরাদ্দ করা হলেও রাজ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে ঘাটাল এবং দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ কিছু ঘোষণা করা হয়নি। একটিমাত্র বাণিজ্য সড়ক নির্মাণ ছাড়া বাংলার প্রাপ্তির ভাঁড়া শূন্য বলেই দাবি তৃণমূলের।