• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

বিয়েতে নারাজ হওয়ায় নাবালিকাকে খুন করল ‘হবু বর’

ব্যাঙ্গালোর, ১১ মে – জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় সফল হয়েছিল নাবালিকা মেয়েটি। ৯ মে,  বৃহস্পতিবার বছর ১৫-র মীরার দশম শ্রেণির ফল প্রকাশ হয়েছিল। আনন্দে উচ্ছ্বল মীরা বাড়ি ফিরে অভিভাবকদের তার ফল দেখিয়েছিল।দু’চোখে তখন তার ভরপুর স্বপ্ন। অনেক লেখাপড়া শিখে বড় হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু সেই আনন্দ, সেই স্বপ্ন স্থায়ী হয় মাত্র কয়েক ঘণ্টা। কারণ তার পরেই নৃশংস ভাবে খুন করা

ব্যাঙ্গালোর, ১১ মে – জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় সফল হয়েছিল নাবালিকা মেয়েটি। ৯ মে,  বৃহস্পতিবার বছর ১৫-র মীরার দশম শ্রেণির ফল প্রকাশ হয়েছিল। আনন্দে উচ্ছ্বল মীরা বাড়ি ফিরে অভিভাবকদের তার ফল দেখিয়েছিল।দু’চোখে তখন তার ভরপুর স্বপ্ন। অনেক লেখাপড়া শিখে বড় হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু সেই আনন্দ, সেই স্বপ্ন স্থায়ী হয় মাত্র কয়েক ঘণ্টা। কারণ তার পরেই নৃশংস ভাবে খুন করা হয় মীরাকে। খুন করার অভিযোগ তারই ‘হবু বর’ প্রকাশের বিরুদ্ধে।

বিয়ের পিঁড়িতে বসতে নারাজ ছিল মীরা, মীরা পড়তে চেয়েছিল। মেয়ের উৎসাহ দেখে তা মেনেও নেন মীরার মা-বাবা। কিন্তু মানতে পারেনি প্রকাশ। ‘বাগদত্তা’র দেহ থেকে মুন্ডু আলাদা করে দেয় সে। সাক্ষী, মেয়ের মা-বাবা। পরে পুলিশের তরফে দাবি করা হয়, প্রকাশের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করেছে।
 
কর্নাটক পুলিশ জানায়, প্রকাশের সঙ্গে মীরার অক্ষয় তৃতীয়ার দিন অর্থাৎ ১০মে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তাদের এনগেজমেন্টও হয়ে যায়। সে জানত, ক্লাস টেনের রেজ়াল্ট বেরনোর পর দিনই তার স্কুলজীবনে ইতি পড়বে ও তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে। কিন্তু তা সে মানতে পারেনি।  ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে ও সন্তানধারণ যে  বিপজ্জনক ও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক,তাও সে জেনেছিল স্কুল থেকে। সরকারি কর্মীরা গিয়ে সব কিছু বুঝিয়েছিলেন। আর নিজে বিয়ে ভেঙে দিতে না পারলে কোথায় জানালে মেয়েরা সাহায্য পাবে, জানানো হয়েছিল সেই খুঁটিনাটিও। মীরা দেরি না করে সটান উপস্থিত হয় বিডিও অফিসে। সেখান থেকে খবর যায় পুলিশ ও ডিসিপিইউ-র কাছে।
 
রেজ়াল্টের দিন বিকেলেই তাঁরা এসে হাজির হন মীরাদের বাড়িতে। তাঁরা ওই কিশোরীর মা-বাবাকে বোঝাতে সফল হন যে, ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেওয়া মেয়ের জন্য ক্ষতিকারক এবং দেশের আইনবিরুদ্ধ। এর জন্য জেল ও জরিমানা দু’টোই হতে পারে। সরকারি আধিকারিকদের কথায় তাঁরা  বিয়ে ভেঙেদিতে সম্মত হন। ৩২ বছরের প্রকাশকে জানিয়ে দেওয়া হয় মীরা এখন পড়াশুনো  করবে। অন্ততপক্ষে  ১৮ বছর বয়স হলে তবেই তার বিয়ের কথা ভাবা হবে।
 
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মীরার মা-বাবা জানান, ফোন করার কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয় প্রকাশ। প্রথমেই মীরার মা-বাবাকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপায়। তার পরে মীরাকে টেনে নিয়ে যায় বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে। দেহ থেকে মুন্ডু আলাদা করে দেয় সে। তার পরে মাথা নিয়ে পালিয়ে যায়। মীরার কাটা মাথা এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে প্রকাশের দেহ উদ্ধার হয়েছে। সে আত্মহত্যা করেছে না খুন হয়েছে নাকি পুলিশের এনকাউন্টারে তার মৃত্যু হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
 
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক শিশু অধিকার কর্মী বলেন, ‘এতটা নৃশংস ঘটনা সাধারণত ঘটে না। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টা অন্য। বছর ১৫-র মেয়ের বিয়ে ৩২ বছরের যুবকের সঙ্গে গোপনে দিচ্ছিলেন মীরার মা-বাবা। সম্ভবত কিশোরীকে বিয়ে করে ভোগের বাসনা ভেস্তে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে প্রকাশ। সব রাগ গিয়ে পড়ে মীরারই উপরে, কারণ সে-ই এই বিয়ে ভাঙতে চেয়েছিল।’
 
এই ঘটনা নিছক একটি খুনের ঘটনা নয়। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে ভারতীয় সমাজের অন্যতম অন্ধকার দিক বাল্যবিবাহ। সমাজতত্ত্ববিদ বিহেভেরিয়াল সাইকোলজিস্টরা এর জন্য দায়ী করেছেন  সমাজের একাংশের অজ্ঞতা, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবকে।