চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই বৃহস্পতিবার তাঁর জীবনাবসান হয়। এদিন সকাল থেকেই শোকাচ্ছন্ন বাংলা, শোকস্তব্ধ কলকাতা। দুপুর দুটো নাগাদ বালিগঞ্জের পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে শেষবারের মতো বের করে আনা হয় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কমরেডকে। ফ্ল্যাট থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে শকট রওনা হয় পিস ওয়ার্ল্ডের উদ্দেশে। সেখানেই শায়িত থাকবেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এদিনের শেষ যাত্রাপথে সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও একমাত্র সন্তান সুচেতন। আর ছিল অগণিত নেতা–কর্মী ও সাধারণ মানুষের ভালবাসা আর চেখের জল। আগামিকাল শুক্রবার শেষ বিদায় জানানো হবে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে।
৫৯ লম্বর, পাম অ্যাভিনিউয়ের দু’কামরার ফ্ল্যাট ছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মু্খ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সবথেকে প্রিয় গৃহকোণ, যা ছেড়ে চিরদিনের মতো বিদায় নিলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। ফ্ল্যাটে পড়ে রইল তাঁর রাশি রাশি প্রিয় বই, গানের ক্যাসেট। দেওয়াল জুড়ে নানা ছবি । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ছবি থেকে শুরু করে তাঁর বাবা –মা, জ্যোতি বসুর ছবি। এঁদের মধ্যেই ছিল তাঁর জীবন–যাপন। নিজের ঘরে নিজের মতো করে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা টুকিটাকি প্রিয় জিনিস। সাদামাঠা বুদ্ধবাবুর সাধারণ দিনযাপনে ভালোবাসার গন্ধ তখনও ছড়িয়ে সেই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে। সেসব ছেড়ে শেষ বারের মতো বেরিয়ে গেলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রবীণ সিপিএম নেতার মরদেহ লাল পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয়। তোলা হয় শকটে। তার পর সেটি রওনা হয় পিস ওয়ার্ল্ডের উদ্দেশে। বুদ্ধবাবুর দেহ ঘিরে সহযোদ্ধারা গলা মেলান ‘অমর রহে’ স্লোগানে।
গোাটা রাস্তায় বুদ্ধবাবুর সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। ছিলেন অগণিত অনুরাগী, সাধারণ মানুষ। তাঁরা শেষ নমস্কার দু’হাত জোড় করে শেষ নমস্কার জানান রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। অনেকেই ভেঙে পড়েন কান্নায়। শকটের কাচের ঘেরাটোপে প্রয়াত নেতার মুখ। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, গালে না কামানো দাড়ি। গত কয়েক দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন বুদ্ধদেব। সেই কারণেই দাড়ি কামানো যায়নি তাঁর। পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর আগে তাঁর মরদেহ থেকে পূর্ব পরিকল্পনা মতো কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে প্রয়াত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মৃত্যুর খবর পেয়েই একে একে বাড়িতে এসে পৌঁছন সিপিএম নেতারা। পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । বেলা বাড়ার পর সিপিএমের তরফে জানানো হয় বৃহস্পতিবার তাঁর দেহ পিস ওয়ার্ল্ডে সংরক্ষণ হবে। শুক্রবার শেষ শ্রদ্ধা জানানো যাবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে।
শুক্রবার সকাল ১১টায় সেখান থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজ্য বিধানসভায়। বিধানসভায় মরদেহ থাকবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত । সেখান থেকে বেলা ১২টা নাগাদ দেহ নিয়ে আসা হবে সিপিএমের রাজ্য দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। সেখানেই মরদেহ শায়িত থাকবে বিকাল ৩টে পর্যন্ত। সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে দীনেশ মজুমদার ভবন, সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠনের রাজ্য দফতরে। পৌনে ৪টে পর্যন্ত বুদ্ধদেবের দেহ শায়িত থাকবে সেখানে। সেখান থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পরে মিছিল করে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে শিয়ালদহের এনআরএস হাসপাতালে। সেখানেই বুদ্ধদেবের দেহ দান করা হবে ভবিষ্যৎ চিকিৎসা গবেষণার কাজে।