লখনউ, ৪ মে– শক্তি প্রদর্শন একেই বলে। শনিবার উত্তরপ্রদেশের কাইজারগঞ্জ সাক্ষী থাকল বিতর্কিত ও প্রভাবশালী বিজেপি নেতা ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরাট সভার। জাঠ নেতা ব্রিজ ভূষণ কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত। তাই শেষপর্যন্ত প্রার্থী করা হয়েছে তাঁর ছেলেকে। এই পরিস্থিতিতে ছেলের মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগেই বিশাল সভা করে নিজের শক্তি বা ক্ষমতা প্রকাশ করলেন ব্রিজভূষণ।
ব্রিজভূষণ আয়োজিত সভায় অংশ নিয়েছিলেন প্রায় হাজার দশেক মানুষ। যে ময়দানে সভার আয়োজন করা হয়, সেই ময়দান সংলগ্ন এলাকায় প্রায় হাজারখানেক গাড়ির মেলা। বিধায়ক , জেলা পঞ্চায়েতের শীর্ষ স্থানীয় নেতা, বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব সেই সভায় উপস্থিত সবাই। অযোধ্যার ধর্মীয় নেতারাও ছিলেন সেই সভায়। সভার মধ্যমণি যদিও ছিলেন ব্রিজভূষণ। হলুদ জামা , কমলা রঙের দোপাট্টা ও ধুতি ছিল তাঁর পরনে। সভার ব্যবস্থাপনা সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় তাঁকে।
ব্রিজভূষণ ছিলেন এদিনের সভার নায়ক। তাঁর জন্য ব্যবস্থা ছিল নরম আরাম কেদারার। রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য কিংবা নিজের ছেলে, কারও কাছেই ঘেঁষেননি ব্রিজভূষণ। বরং সভায় উপস্থিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজটাই এদিন করেন তিনি। তাঁর ছেলে করণভূষণ সিং মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময়ও তিনি ছেলের সঙ্গে যাননি। জানিয়ে দেন, ”পাঁচজন মানুষকে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাই ওরা যখন মনোনয়ন জমা দিতে গেল, আমি এখানে থেকেই এখানকার ব্যবস্থাপনার দিকে নজর রাখছিলাম।”
এদিকে ব্রিজভূষণের ছেলে টিকিট পাওয়ার পর পদত্যাগ করেন বিজেপির জোটসঙ্গী আরএলডি-র মুখপাত্র রোহিত জাখর। তাঁর দাবি, ব্রিজভূষণের ছেলেকে টিকিট দেওয়ার বিরোধিতা করেই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, তিনি রাষ্ট্রীয় জাঠ মহাসংঘের সভাপতিও। এহেন প্রভাবশালী এক নেতা ইস্তফা দেওয়ায় এটি খুবই স্পষ্ট যে, ব্রিজভূষণের ছেলের প্রার্থী হওয়া বিজেপির জোটসঙ্গীদের অনেকের মধ্যেই অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় বিদায়ী সাংসদ ব্রিজভূষণ সিংহকে চলতি লোকসভা নির্বাচনে আর প্রার্থী করছে না বিজেপি। পরিবর্তে তাঁর ছেলে করণভূষণ সিংহকে উত্তরপ্রদেশের কায়সেরগঞ্জে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রথম থেকেই জল্পনা ছিল যে, ব্রিজভূষণকে প্রার্থী করা না হলে রাশ থাকার সম্ভাবনা ব্রিজভূষণের পরিবারের হাতেই।
লোকসভা নির্বাচনে ৬ বার জিতে সাংসদ হন ব্রিজভূষণ। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান দেশের বিখ্যাত কুস্তিগিরেরা। বিজেপির একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কারণেই উত্তরপ্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ব্রিজভূষণকে আর প্রার্থী করেনি বিজেপি। তাদের আশঙ্কা ছিল, এতে মহিলা ভোট হারাতে পারে দল। এ দিকে কায়সেরগঞ্জ-সহ আশপাশের লোকসভা কেন্দ্রে জাঠনেতার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সেই বিষয়টিকেও কাজে লাগাতে চাইছিল দলের একাংশ। সে কারণে ব্রিজভূষণের ছেলেকে বিজেপি প্রার্থী করল বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজেপির একটি সূত্র এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিল, টিকিট পেতে রীতিমতো মরিয়া ছিলেন ব্রিজভূষণ। শেষ পর্যন্ত তাঁর ছোট ছেলেকে টিকিট দেয় দল।