‘ব্রেন ডেথ’ দুই ব্যক্তির পরিবারদ্বয়ের মহানুভবতায় প্রাণে বাঁচলেন ৭ জন 

দিল্লি, ২৮ জানুয়ারি – শরীরে ধুক ধুক করছিল শুধু প্রানটুকু। মস্তিষ্কে কোন সাড় ছিল না বহুদিন আগেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে  বলে ‘ব্রেন ডেথ’। তাঁদের পরিবারের সম্মতি নিয়ে এবং দুজন ‘জীবন্মৃত’-ব্যক্তির অঙ্গদানে প্রাণ বাঁচল ৭ জনের।  মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৭ জন রোগীর শরীরে এই অঙ্গগুলি প্রতিস্থাপন করা হয়। দিল্লির এমস হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে এই অঙ্গদানের কাজ হয় ।
রাজস্থানের ভরতপুরের বাসিন্দা, ৫১ বছর বয়সের বাচ্চু  গত ১২ জানুয়ারি হরিয়ানার পালওয়ালে রেল স্টেশনে দুর্ঘটনায় পড়েন। তাঁকে জয়প্রকাশ নারায়ণ অ্যাপেক্স ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি। গত ২৪ জানুয়ারি বাচ্চুকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা করা হয়। পেশায় রাজমিস্ত্রি বাচ্চুর বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও দুই নাবালক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে ।
 
ফরিদাবাদের বাসিন্দা মায়া গত ২৩ জানুয়ারি বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে জখম হন। তাঁর পরিবারের লোকজন তাঁকে ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করেন। ২৫ জানুয়ারি মহিলাকে ‘ব্রেন ডেড’ বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মায়ার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিনি ধার্মিক মহিলা ছিলেন। সব সময় মানুষকে সাহায্য করতে এগিয়ে যেতেন। তাই ব্রেন ডেথের পর পরিবারের সদস্যরা মায়ার অঙ্গদান করার সিদ্ধান্ত নেন।
 

দুই পরিবার থেকে অনুমতি মেলার পর চিকিৎসকেরা দু’জনের শরীর থেকে একটি হৃদ্‌যন্ত্র, চারটি কিডনি, দুটি লিভার এবং চারটি কর্নিয়া সংগ্রহ করেন। কর্নিয়াগুলি আপাতত দান করা যায়নি। সেগুলি এমসের আরপি সেন্টারে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

মায়া এবং বাচ্চুর মৃত্যুর পর জাতীয় অঙ্গ এবং টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন-এর মাধ্যমে কোন কোন গ্রহীতাদের অঙ্গদান করা হবে তা স্থির করা হয়। একটি লিভার এবং একটি কিডনি দিল্লির এএইচআরআর হাসপাতালে, একটি কিডনি সফদরজং হাসপাতালের গ্রহীতাদের দেওয়া হয়। বাকি হার্ট, লিভার এবং দু’টি কিডনি দিল্লির এমস হাসপাতালের কয়েক জন রোগীর শরীরে স্থাপন করা হয়। মায়ার ত্বকও সংগ্রহ করা হয়েছে, যা এমসের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সেন্টারের সদ্য প্রতিষ্ঠিত স্কিন ব্যাঙ্কে সংরক্ষিত রয়েছে।

বাচ্চুর পরিবারের এই নিঃস্বার্থ মানসিকতা মুগ্ধ করেছে এমসের অর্গান রিট্রিভাল ব্যাঙ্কিং অর্গানাইজেশনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা আরতি ভিজকে।   মায়া এবং বাচ্চুর পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, কাউন্সেলিং, ব্রেন ডেথ শংসাপত্র, ডোনার অর্গ্যান ম্যানেজমেন্ট গোষ্ঠী , চিকিত্সক, ট্রান্সপ্লান্ট কোঅর্ডিনেটর, কাউন্সেলর, ট্রান্সপ্লান্ট টিম, প্রশাসক এবং ফরেনসিক বিভাগের সমন্বয় ও সহযোগিতায় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রাণ ফিরে পেয়েছেন ৭ জন, যা চিকিৎসা জগতে সাড়া জাগানো এক ঘটনা।