এমন ভাবে হারাতে হবে, যাতে কিয়োটোর লোকও জেনে যায়: রাহুল-অখিলেশ
অযোধ্যা, ২৯ মে– প্রধানমন্ত্রীর মান-সম্মানের প্রশ্ন৷ তাই আদা-জল খেয়ে নেমে পড়েছে বিজেপি৷ যেভাবেই হোক বিজেপির মুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বারাণসী থেকে জেতাতেই হবে৷ তা না হলে যে গোটা দেশে লজ্জায় পড়তে হবে বিজেপিকে৷ তাই বারাণসীতে নিছক সাংসদ নির্বাচন বলা যাবে না৷ এখানে বিজেপির প্রেস্টিজ ইসু্য৷
আর নিজেদের প্রেস্টিজ ধরে রাখতে বারাণসী ফের প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করতে যাচ্ছে৷ তবে শুধু জিত নয় এ বার বিজেপি বারাণসী থেকে নরেন্দ্র মোদীকে সাত লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জেতানোর লক্ষ্য নিয়েছে৷ তবে বিজেপির এই স্বপ্নকে এত সহজে পূরণ করতে দিতে রাজি নয় বিরোধী শিবির কংগ্রেসও৷ তারাও বারাণসীতে নেমে পড়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতে৷ বিজেপির এই রণনীতির মোকাবিলায় বুধবার বারাণসীতেই যৌথ জনসভা করে রাহুল গান্ধি ও অখিলেশ যাদব৷ সভায় তাঁরা দাবি করলেন, আগামী ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের পরে নরেন্দ্র মোদি আর প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন না৷ তাই বারাণসীর ভোট প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট নয়৷ সেটা শুধুই বিজেপির প্রার্থী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী অজয় রাইয়ের লড়াই৷ সেই ‘জবরদস্ত’ লড়াইতে অজয় রাই জিততেও পারেন৷
এদিনের সভায় রাহুল মোদির বায়োলজির ইঙ্গিত টেনে বলেন, ‘নকল ফকিরের কাছে আর মাত্র ৭ দিন রয়েছে৷ তাই বলাই যায় ৪ঠা জুনের পরে গুড বাই বিজেপি, গুড বাই নরেন্দ্র মোদি, টাটা!’ ২০১৪-তে প্রথম বার বারাণসীর সাংসদ হওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বারাণসী শহরকে জাপানের কিয়োটো-র মতো সাজিয়ে তুলবেন৷ গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করবেন৷ আজ অখিলেশ যাদব বারাণসীতে কংগ্রেস-সমাজবাদী পার্টির যৌথ প্রচারের মঞ্চ থেকে বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি মা গঙ্গাকে সাফ করার শপথ করেছিলেন৷ কিন্ত্ত বারাণসীর লোক জানে, মা গঙ্গা সাফ হননি, সাফাইয়ের বাজেট সাফ হয়ে গিয়েছে৷ যে গ্রামকে নরেন্দ্র মোদি দত্তক নিয়েছিলেন, সেই গ্রাম তো কেউ চেনেই না৷ যে ধোঁকা দিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে৷ তাঁকে এমন ভাবে হারাতে হবে, যাতে কিয়োটোর লোকও জেনে যায়৷’
বিজেপি নরেন্দ্র মোদির লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পরিচালনা, প্রচার ও ব্যবস্থাপনার জন্য গোটা দেশ থেকে দলের বাছাই করা নেতা-কর্মীদের বারাণসীতে নিয়ে এসেছে৷ অখিলেশ আজ বারাণসীতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বিজেপির এই বাহিনী শেষ বেলায় নানা ভাবে বিক্ষুব্ধ ভোটারদের ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করবে৷ ১ জুন ভোটগ্রহণদের দিন বিরোধী শিবিরের ভোটারদের বাধা দেওয়া হতে পারে৷ অখিলেশ এদিন তাই সমাজবাদী পার্টির কর্মীদের সাবধান করে দিয়েছেন, তাঁরা যেন বিজেপির ‘ভোট ম্যানেজ’-এর খপ্পরে না পডে় যান৷ বিজেপি বাধা দিলেও যেন ভোট দিতে যান৷রাহুল ও অখিলেশ দু’জনেই উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির জোটের ভরসায় ভাল ফলের আশা করছেন৷ রাহুল মনে করছেন, দুই দলের জোট নিচুতলায় পৌঁছে গিয়েছে৷
বুধবার বারাণসীতে রাহুল দাবি করেন, কংগ্রেসের ‘হাত’ সমাজবাদী পার্টির ‘সাইকেল’-এর হ্যান্ডল ধরে ফেলেছে৷ উত্তরপ্রদেশে এই জোট ‘সুইপ’ করতে চলেছে৷ নরেন্দ্র মোদির ‘শাহজাদা’ কটাক্ষের বিপরীতে অখিলেশ তার জবাবে বলেছেন, ‘মোদিজি অচ্ছে দিন-এর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন৷ আমরা খুশির দিন এনে দেব৷ যাঁরা ঘাবডে় গিয়েছেন, তাঁরাই আমাদের শাহজাদা বলছেন৷ এ বার দুই শাহজাদা শুধু খুশির দিন নয়, বাজিমাত করতেও চলেছে৷’
রাহুল আজ বারাণসীতে বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির জমানায় দু’টি ভারত তৈরি হয়েছে৷ একটি গরিবদের, একটি বড়লোকদের৷ পুণের গাডি় চাপার ঘটনার উদাহরণ তুলে এনে বলেন, একজন বড়লোকের ১৭-১৮ বছরের ছেলে গাডি় চাপা দিয়ে দু’জনকে মেরে দিলেও তাকে ৩০০ শব্দের রচনা লিখতে বলা হচ্ছে৷ বারাণসীর কোনও অটোওয়ালা ভুল করে কাউকে ধাক্কা দিলে তাঁর হাতে হাতকড়া পড়বে৷ দশ বছরের জেল হবে৷ মোদি ‘পরমাত্মার নির্দেশ’-এ শিল্পপতিদের ১৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মকুব করে দিচ্ছেন৷ কিন্ত্ত চাষি, ছোট ব্যবসায়ী, পড়ুয়াদের ঋণ মকুব হয় না৷ রাহুল বলেন, ‘‘৪ জুন ভোটের ফলের পরে ইন্ডিয়া জোট সরকারে এলে ৫ জুলাই থেকে গরিব মহিলা, বেকার যুবকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ৮,৫০০ টাকা করে ঢুকতে শুরু করবে৷’