হিন্ডেনবার্গ-আদানি, বিজেপি প্রশ্নবাণে জর্জরিত রাহুল

আদানি-সেবির সম্বন্ধ প্রশ্নের মুখে

 

ফের ভারতের রাজনীতিতে বড়সড়ো ঝড় তোলার মুখে হিন্ডেনবার্গ। তার অগ্রিম লক্ষণ দেখা গিয়েছিল রবিবার রাহুলের প্রশ্নে। সোমবার তারই জবাব দিতে গিয়ে বিজেপি তুলোধোনা করল বিরোধী দলনেতাকে। দেশের শেয়ার বাজারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় রাহুল গান্ধিকে তাদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ছাড়ল বিজেপি।

সম্প্রতি হিন্ডেনবার্গ নিয়ে রাহুল গান্ধি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কে হিন্ডেনবার্গের নতুন রিপোর্টে স্পষ্ট, কেন জিপিসিতে ভয় পাচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাহুল গান্ধীর এই অভিযোগের কারণ হল, মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের দাবি, সেবির চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচ এবং তাঁর স্বামীর বেশকিছু বৈদেশিক কোম্পানি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের নামে মিউচুয়াল ফান্ড ছিল। যা আদানি কেলেঙ্কারির সময় ব্যবহৃত হয়েছিল।  এ নিয়েই রাহুল গান্ধী সেবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কারণ হিন্ডেরবার্গের অভিযোগ সরাসরি সেবির চেয়ারপার্সন কেন্দ্রিক।


হিন্ডেনবার্গের নয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যে সেবি আদানিদের ক্লিনচিট দিয়েছে, সেই সংস্থার প্রধানও আদানিদের থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত। আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিদেশে সরানো টাকায় অংশীদারিত্ব ছিল শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে দাবি করা হয় যে, গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানির বিদেশে থাকা সংস্থায় অংশীদারিত্ব রয়েছে সেবি প্রধান এবং তাঁর স্বামীর। সেই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন সেবির শীর্ষকর্তা মাধবী পুরী বুচ। এমকী আদানি গোষ্ঠীও এই অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেছে, সংস্থার সুনাম নষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

রবিবার রাতে নতুন করে বিজেপিকে নিশানা করেন রাহুল। সোমবার তারই জবাবে এদিন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য এক্সবার্তায় নিন্দা করেন রাহুলের। মালব্য বলেন, বিরোধী দলনেতা এখন প্রকাশ্যে ভারতীয় স্টক মার্কেটের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং সন্দেহের বীজ বপন করছেন।  এই প্রচেষ্টা দেশের অর্থনীতির আস্থা ও ভরসাকে বিনষ্ট করে। যা রাহুল গান্ধীর প্রকৃত উদ্দেশ্য। এই প্রচেষ্টা ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছু নয়, বলেন মালব্য। তিনি আরও বলেছেন, হিন্ডেনবার্গের শেয়ার বাজারে উত্থান-পতনের অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়ে দিয়েছিল যে, ওই অভিযোগের কোনও সারবত্তা মেলেনি। তা সত্ত্বেও রাহুল গান্ধী এই ধরনের অভিযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মালব্যর মতে, ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সু্প্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল স্টক মার্কেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার দ্বারা কোনও ইচ্ছাকৃত বা সজ্ঞানে আইন ভঙ্গ হয়নি। এরপরেও রাহুল কীভাবে এ ধরনের অভিযোগ তুলতে পারেন, জবাব চেয়েছেন মালব্য। প্রসঙ্গত, রাহুল বলেছেন, হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ সেবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং সুপ্রিম কোর্ট যদি স্বেচ্ছা উদ্যোগে এ বিষয়ে ফের একবার তদন্তের নির্দেশ দেয়।

অন্যদিকে সেবির বিরুদ্ধে সরব হয়ে এদিন এক্স হ্যান্ডেলে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে লেখেন, ‘গত বছর আদানির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ হন্ডেনবার্গ তুলেছিল তাতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে মোদিজির পরম মিত্রকে ক্লিনচিট দিয়েছিল সেবি। আজ সেই সেবি প্রধানের সঙ্গে আদানিদের সম্পর্ক প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারী মধ্যবিত্ত, যারা তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে, তাদের রক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ তারা সেবিকে বিশ্বাস করে।’

সেবির চেয়ারপার্সন মাধবী এবং তাঁর স্বামী ধাওয়াল বুচ ও আদানি গ্রুপ অবশ্য এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ব্যাখ্যা করেছে। মাধবী পুরী বুচ এও উল্লেখ করেছেন যে, হিন্ডেনবার্গের এই নবতম সংযোজনটি আসার আগেই সেবি এ ব্যাপারে এনফোর্সমেন্ট পদক্ষেপ নিয়েছে এবং জুলাইয়ে শোকজ নোটিসও দিয়েছে। রাহুলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করতে গিয়ে অমিত মালব্য তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষায় বালকবুদ্ধি বলেও উপহাস করেছেন।