মহুয়াকে স্বাধিকার ভঙ্গের নােটিশ বিজেপি’র

মহুয়া মৈত্র (File Photo: IANS)

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে লােকসভায় মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে স্বাধিকার ভঙ্গের নােটিশ পাঠালেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছে। 

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষেণের ওপর আলােচনার সময় মহুয়া দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করেন। এক জায়গায় তিনি বলেন, সেদিনই ভারতের বিচারব্যবস্থা সমস্ত বিশ্বাসযােগ্যতা হারিয়ে ফেলেছিল যখন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যৌন নির্যাতন মামলায় অভিযুক্ত হন এবং নিজের বিরুদ্ধে তদন্তভার নিজেই হাতে নেন। 

প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার প্রসঙ্গ তোলায় মহুয়ার বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নােটিশ আনা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যােশি। অন্যদিকে তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় কৃষগরের সাংসদের পাশে দাঁড়িয়ে মন্তব্য করেন মহুয়া মৈত্র শুধু প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বলেছেন। কারও নাম করেননি। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করা আইনত অন্যায় নয় বলে দাবি করেন তিনি। 


কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদও তাঁর বক্তব্যে অনড় থাকেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায় মহুয়ার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না কেন্দ্র। কিন্তু পরে মহুয়ার বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নােটিশ জারি করেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। 

ভারতীয় সংবিধানের ১২১ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে নিশিকান্ত অভিযােগ করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি বা হাইকোর্টের বিচারপতিকে নিয়ে লােকসভায় অভিযােগ করতে পারেন না কোনও সাংসদ। কিন্তু প্রাক্তন বিচারপতিকে নিয়ে তৃণমূল সাংসদ একাধিকবার মন্তব্য করে লােকসভার কার্যপ্রণালীর ৩৫৬ ধারা লঙ্ঘন করেছেন বলে নােটিশে উল্লেখ করেন বিজেপি সাংসদ। 

তাঁর আরও অভিযােগ, লােকসভার কার্যবিবরণী থেকে মহুয়ার ওই বক্তব্য মুছে দেওয়া হলেও বিষয়টি সােশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। একটি দৈনিক পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়। তাই মহুয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা এবং তার সদস্যপদ বাতিল করারও দাবি জানিয়েছেন নিশিকান্ত। 

প্রসঙ্গত শীর্ষ আদালতের বিচারপতি থাকার সময় ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল রঞ্জন গগৈ-এর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযােগ প্রথম সামনে আসে। জুনিয়ার হিসাবে কাজ করার সময় ২০১৮-র অক্টোবরে গগৈ তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন চালান বলে অভিযােগ করেন ওই মহিলা। 

সংবাদমাধ্যমে যেদিন রিপাের্টটি প্রকাশিত হয় সেদিন আদালতের কাজকর্ম বন্ধ ছিল। কিন্তু রিপাের্টটি প্রকাশিত হওয়ার পরেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলার শুনানি শুরু করেন রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চ। তারা যাবতীয় অভিযােগ খারিজ করেন। 

লােকসভায় মহুয়ার এই মন্তব্যের পর এই সংক্রান্ত একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। তা খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, প্রাক্তন বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযােগ আনার পেছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। আদালতের দাবি, জাতীয় নাগরিক পঞ্জী এবং কিছু প্রশাসনিক বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি। তাই তাঁকে ফাঁসানাের চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে।