• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

দ্রৌপদী অংকে বিরোধীদের ছত্রখান করতে রাষ্ট্রপতি ভোটে বিজেপি, ঘুম ছুটেছে বিরোধীদের

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন দেশের ৪১২০ জন বিধায়ক এবং ৭৭৬ জন সাংসদ। সাংসদদের ৫৪৩ জন লোকসভার সদস্য। বাকি ২৩৩ জন রাজ্যসভার প্রতিনিধি।

New Delhi: NDA's candidate Droupadi Murmu gestures after filing her nomination papers for the Presidential election, at Parliament in New Delhi, Friday, June 24, 2022. (Photo: Qamar Sibtain/IANS)

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এবার প্রার্থী মাত্র দুজন, বিজেপি তথা এনডিএ শিবিরের দ্রৌপদী মুর্মু ও ১৮টি বিরোধী দলের যশবন্ত সিনহা।

মোটামুটি সবারই জানা বড় কিছু না হলে এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদীই এবার রাষ্ট্রপতি। বরং সাম্প্রতিক অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে জয়ের সম্ভাবনাই বেশি।

আর ঠিক এখানেই বিজেপি এক তীরে দুই শিকার করতে নামছে। এই সুযোগে বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরাতে ‘অপারেশন লোটাস’ কার্যকর করতে পুরোদমে নেমে পড়েছে তারা।

২০২৪- এর লোকসভা ভোটের আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের ছত্রখান করে দিতে দ্রৌপদী অঙ্ককে নিয়ে ময়দানে সক্রিয় গেরুয়া শিবির। বিজেপির এই দল ভাঙানোর খেলাই ‘অপারেশন লোটাস’ নামেই জনপ্রিয়।

আদিবাসী সমাজের মহিলা দ্রৌপদীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী করার পর থেকেই চর্চা শুরু হয়েছে, আদিবাসী সম্প্রদায়ের অঙ্কে বিরোধী শিবিরের ভোটও পেতে পারেন তিনি।

বিজেপির অঙ্ক তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের ৫৫৬ জন বিধায়ক ও ৪৭ জন সংসদের অন্তত ৯০ ভাগের ভোট দ্রৌপদীর পক্ষে আদায় করা।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন দেশের ৪১২০ জন বিধায়ক এবং ৭৭৬ জন সাংসদ। সাংসদদের ৫৪৩ জন লোকসভার সদস্য। বাকি ২৩৩ জন রাজ্যসভার প্রতিনিধি।

বিজেপি এখন দেশের ১৭টি রাজ্যে একক শক্তিতে ক্ষমতায় আছে। এছাড়া মহারাষ্ট্র, বিহার সহ একাধিক রাজ্যে দল জোট সরকারের শরিক।

সেই সূত্রে রাজ্য বিধানসভাগুলিতে তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলির অর্ধেকের বেশি বিজেপি ও তাদের সহযোগী দলগুলির দখলে।

বিজেপি চাইছে, দ্রৌপদী অস্ত্রে বিরোধী শিবিরে থাকা আদিবাসী বিধায়কদের ভোট আদায় করতে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট নেওয়া হয় গোপন ব্যালটে। ফলে ক্রস ভোটিং অর্থাৎ কোনও সাংসদ, বিধায়ক দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে ভোট দিলে তা জানার সুযোগ নেই।

গোপন ব্যালটে ভোট হয় বলেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাজ্যসভার নির্বাচনের মতো হুইপ জারি করা যায় না।

ফলে বিবেকের ডাকেও বিরোধী শিবিরের কোনও সাংসদ, বিধায়কের দ্রৌপদীকে ভোট দেওয়া অসম্ভব নয়।

তবে গেরুয়া শিবির শুধু সেই ভরসায় বসে না থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকেই লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল করে তুলতে চাইছে।

দ্রৌপদী নিজে বিরোধীদের হাতে থাকা বেশিরভাগ বড় রাজ্যে প্রচারে যাবেন বলে ঠিক আছে।

বিজেপি দ্রৌপদীর প্রচারের কাজে নিয়োজিত টিমের সদস্যরা আলাদা করে বিরোধী বিধায়ক, সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

তাতে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তোলার সুযোগ নেই। এই সুযোগে উপজাতি, অনুপজতি সব সম্প্রদায়ের ভোটে বিজেপির

থাবা বসানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না বিরোধীরা। গোপন ব্যালটে ভোট নেওয়া হবে বলেই বিধায়ক, সাংসদদের চোখে চোখে রেখেও শিবির রক্ষা কঠিন। তবে প্রকাশ্যে কোনও দলই এই ব্যাপারে মুখ খুলছে না।

গেরুয়া শিবিরের এই কৌশলে সবচেয়ে চিন্তায় পড়েছে কংগ্রেস। সনিয়া গান্ধীর দল এখন মাত্র দুটি রাজ্যে ক্ষমতায়।

কংগ্রেস শাসিত সেই দুই রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তীসগড়ে আগামী বছর বিধানসভার ভোট। এ বছর ডিসেম্বরে বিধানসভার নির্বাচন গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশে।

আগামী বছর মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ভোট হওয়ার কথা কর্নাটকে। শেষের তিন রাজ্যে কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল। রাজস্থান ও ছত্তীসগড়ে‌র বিধানসভায় এসটি আসন যথাক্রমে ২৫ ও ২৯টি।

ওই দুই রাজ্যে তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত বিধায়কদের সিংহভাগ কংগ্রেসের। সেখানে বড় ধরনের ভাঙনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল।

বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিং নিজেও এই সম্ভাবনা সরাসরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। প্রচারে তিনি বলছেন, দ্রৌপদীকে প্রথম আদিবাসী প্রার্থী বলে সব গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

তাঁর প্রশ্ন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থী পিএ সাংমা কী ছিলেন? তিনি কি আদিবাসী ছিলেন না?

পশ্চিমবঙ্গের চিত্রটা কেমন? বাংলায় বিধানসভার ২৯৪ আসনে মধ্যে তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসন ১৬টি।

২০১৯ এর লোকসভা ভোটে বিধানসভা ভিত্তিক আসনের নিরিখে তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসনের বেশিরভাগ দখল করেছিল বিজেপি।

গত বছর বিধানসভা ভোটে ছবিটা বদলে গিয়েছে। এখন তৃণমূল শিবিরে এসটি বিধানসভা ৯টি। বিজেপির দখলে আছে সাতটি আসন।