• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

ভেঙে দেওয়া হল ‘ভারতরত্ন’ বিসমিল্লা খানের বাড়ি

'ভারতরত্ন' বিসমিল্লা খানের বাড়ির একাংশ ভেঙে ফেললেন তাঁর আত্মীয়রা। আগামী ২১ আগস্ট উস্তাদ বিসমিল্লা খানের ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী।

'ভারতরত্ন' বিসমিল্লা খানের বাড়ির একাংশ ভেঙে ফেললেন তাঁর আত্মীয়রা। (Photo: IANS)

‘ভারতরত্ন’ বিসমিল্লা খানের বাড়ির একাংশ ভেঙে ফেললেন তাঁর আত্মীয়রা। আগামী ২১ আগস্ট উস্তাদ বিসমিল্লা খানের ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর আগে এই ঘটনা রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। হাদহা সরাইয়ের ওই বাড়িটি ছিল বিসমিল্লা খানের অত্যন্ত ভালোবাসার জায়গা। এই বাড়িটির দোতলায় প্রতিদিন রেওয়াজ করতেন। এই বাড়িটি প্রিয় হওয়ায় তিনি কখনও ছাড়েননি।

আমেরিকায় বসবাসের জন্য তাঁকে জায়গা ও বাড়ি দেওয়ার প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু তিনি তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ, এই বাড়িটিই নাকি তাঁর কাছে ছিল শান্তির নীড়। এখানে থাকতে তিনি খুব পছন্দ করতেন। যদিও তাঁর রেওয়াজের ঘরটি বর্তমানে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে, এমনটাই বলা হচ্ছে। দোতলা বাড়ির ওপরের অংশটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যতদূর জানা যাচ্ছে, ওই বাড়িটি ভেঙে একটা বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স তৈরি হবে।

উস্তাদ বিসমিল্লা খান মারা যাওয়ার পর তাঁর শিষ্য ও ভক্তরা এই বাড়িটিকে যাতে মিউজিয়াম করা হয় তার দাবি জানিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে উস্তাদ বিসমিল্লা খান মারা যান। তাঁর ভক্তদের দাবি ছিল, একটি সংগ্রহশালা তৈরি করে সেখানে প্রদর্শিত হোক বিসমিল্লার বিভিন্ন স্মারক। সানাইয়ের মতো যন্ত্রকে মার্গসঙ্গীতের স্তরে উন্নীত করার ক্ষেত্রে বিসমিল্লার উল্লেখযোগ্য অবদান আজ আর কারও অজানা নয়। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বেও তিনি যথেষ্টই জনপ্রিয়। সেকারণে তাঁর স্মৃতিতে এই বাড়িটিকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ারও দাবি ওঠে। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য কোনও সরকারই এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালে হাদহা সরাইয়ের ভিক্ষমশাহ লেনের এই বাড়িটি কেনেন বিসমিল্লা খান। দোতলা বাড়ির একটি ঘর তার জন্য বরাদ্দ ছিল। রোজ স্নান করার পর তিনি রেওয়াজে বসতেন। এই ঘরটিকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য স্মৃতি। ওই ঘরটি প্রথম ভাঙা হয় ১২ আগস্ট। বাড়িটির মালিক উস্তাদজির আত্মীয়রা যদিও এই ঘটনার কথা অস্বীকার করেন। তবে জানান, স্থানীয় এক ব্যক্তির দোকান তৈরি জন্য বাড়িটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যদিও বিসমিল্লা খানের ছোট ছেলে নাজিম হোসেন জানিয়েছেন, তিনি এই বাড়ি ভাঙার বিষয়ে কিছুই জানেন না।

উল্লেখ্য, দেশ যখন পরাধীনতামুক্ত হয়ে স্বাধীনতার স্বাদ পেল, সেই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জওহন্দ্রলাল নেহরুর আমন্ত্রণে রেড ফোর্টে সানাই বাজিয়েছিলেন বিসমিল্লা খান। এমনই এক ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন খান সাহেব। এই শিল্পী বারবার জানান দিয়ে গিয়েছেন, সুরের যেমন কোনও ধর্ম হয় না, তেমন শিল্পীরও কোনও ধর্ম হয় না।

২০১৭ সালে বিসমিল্লা খানের দুটি প্রিয় সানাই বিক্রি করতে গিয়ে শিল্পীর নাতি নাজরে হাসান পুলিশের জালে ধরা পড়েছিল। মাত্র ১৭ হাজার টাকার বিনিময়ে রূপো দিয়ে ওই বাঁধানো সানাই বিক্রি করে দিয়েছিল দুটি গয়নার দোকানে। প্রতিটি সানাই ছিল রুপো বাঁধানো। কিন্তু পুলিশ তদন্তে নেমে দেখে, নাতি সেই রুপো গলিয়ে ফেলেছিল। পরে অবশ্য পুলিশ সেই রুপো উদ্ধার করে।

উস্তাদ বিসমিল্লা খান দেশের গর্ব। এই শিল্পীকে নিয়ে আজও অহঙ্কার করে দেশের মানুষজন। কিন্তু সেই তাঁর মূল্যবান সম্পদের মর্ম কেন বুঝতে পারলেন না তাঁর নাতি-নাতনিরা, সেটাই বড় উদ্বেগের। তবে কি বিসমিল্লা খানের পরিবারের নতুন প্রজন্ম তাঁকে নিয়ে এবং তাঁর কাজ নিয়ে আর আগ্রহী নন। এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। তবে, মূল্যবোধের যে অবক্ষয় শুরু হয়েছে তাতেই কি ভেঙে পড়ল ‘ভারতরত্ন’ বিসমিল্লা খানের বাড়ি।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকারও কেন এগিয়ে এল না এই বাড়িটিকে হেরিটেজ তকমা দিতে? তা নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। একই ভাবে প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রীয় সরকারও কি আগ্রহী নয় এই স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটিকে সংগ্রহশালায় পরিণত করতে। প্রশ্ন অনেক, কিন্তু সদুত্তরের অপেক্ষায় দিন গুনছেন বিসমিল্লা অনুরাগীরা।