• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন ইউক্রেন ফেরত বাঙালিরা

হালিশহরের চয়ন বলছিলেন, রাশিয়া কিন্তু সাধারণত আক্রমণ করত বেশি রাত থেকে ভোররাতের দিকে। এই কারণে সন্ধ্যার পর থেকে কারফিউ জারি থাকত।

ইউক্রেন ছাড়ার সময় তাড়াহুড়োয় গ্লাভস পরতে ভুলে গিয়েছিলেন রায়দিঘির অকপ্রভ বৈদ্য। মাইনাস চার-পাঁচ ডিগ্রি তাপমাত্রায় লিভিভ হয়ে রোমানিয়া যাওয়ার পথে উঠে যায় হাতের চামড়া। সেই কষ্ট, জ্বালা অবশ্য সেই সময় মাথাতেই আসেনি। প্রায় একই অবস্থা ছিল হালিশহরের চয়ন কুমার বা কেষ্টপুরের সায়ন্ত দাসের।

সবার তখন একটাই চিন্তা, যেভাবে হোক পার করতে হবে ইউক্রেনের কাঁটাতার। তখনও এতটা অশান্ত হয়নি কিয়েভ, খারকিভ। ফেব্রুয়ারির দশ তারিখ নাগাদ অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশের সতীর্থদের একে একে বাড়ি ফিরতে দেখেছেন কিয়েভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির বঙ্গ পড়ুয়ারা।

তাঁদের দেশ থেকে কড়া বার্তা এসে গিয়েছিল ইউক্রেন ছাড়ার। অনেক আগে থেকেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল বিমান। তাই গায়ে কোনওরকম আঁচড় লাগার আগেই একে একে নিজেদের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন সে দেশের পড়ুয়ারা।

এই দেশগুলি থেকে যেমন উদ্বেগের টেলিফোন এসেছিল তাদের দূতাবাসে, ঠিক সেভাবেই ভারতীয় দুতাবাসের বিভিন্ন নম্বরেও বেজে উঠেছিল আশঙ্কার রিংটোন। কিন্তু ভারত থেকে ফোন করা উদ্বিগ্ন মা বাবাদের শুধু বলা হয়েছিল আপনাদের যদি মনে হয় এখানকার পরিস্থিতি ভাল নেই, তাহলে ছেলেমেয়েকে ফেরত চলে যাওয়ার কথা বলুন।

বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যমে এর পরের পরিস্থিতি এখন সবারই জানা। কিন্তু যা জানা নেই, তা হল কীভাবে কেন্দ্র সরকারের সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারার ব্যর্থতায় কপালজোরে যমের দুয়ারের কাছাকাছি পর্যন্ত চলে যেতে হয়েছিল হাজার হাজার ভারতীয় পড়ুয়াকে।

সেই ক্ষোভে, রাগে তাঁরা ফুসছেন মনে মনে। হেলি রোড বঙ্গভবনের ২০৩ নম্বর ঘরে বসে কেষ্টপুরের সায়ন্ত বলছিলেন, দূতাবাস থেকে নাকি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।

ভাবুন তো, আমরা ওখানে পড়াশোনা করব, নিজেদের সুরক্ষিত রাখার চিন্তা করব, নাকি দূতাবাসের টুইট খুলে বসে থাকব আমরা তো আমাদের দেশ, দূতাবাস গোয়েন্দা বিভাগের কথার উপরই নির্ভরশীল থাকব। চোখের সামনে দেখলাম অন্যরা বাড়ি চলে গেল সেখানে বাড়ি থেকে ফোনে বলা হচ্ছে টেনশন না করতে। আমরাও তাই চিন্তা করিনি। তারপর তো এই হল।

হালিশহরের চয়ন বলছিলেন, রাশিয়া কিন্তু সাধারণত আক্রমণ করত বেশি রাত থেকে ভোররাতের দিকে। এই কারণে সন্ধ্যার পর থেকে কারফিউ জারি থাকত।

দিনের বেলা তা উঠে যেত। সেই সময় স্থানীয়রা বাজারে গিয়ে জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনত। সেই সময়ে তো অনায়াসেই আমাদের ইউক্রেন থেকে পাশের দেশগুলোয় নিয়ে আসতে পারত সরকার অর্কপ্রভর কথায় আমরাই সরকার বানাই। ওরা পাবলিক সার্ভেন্ট।

আমাদের দেশে ফেরত এনে কোনও দয়া দেখায়নি। আমাদের নিয়ে এসেছে আমাদেরই ট্যাক্সের টাকায়। এখন যুদ্ধ বিরতির আবেদন করছে। কেন আরও আগে করেনি? তাহলে তো নবীনকে মরতে হত না, হরজ্যোকে গুলি খেতে হত না বাড়ি ফিরেও গত কদিনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ভুলতে পারছেন না বসিরহাটের অর্পণ।

চান, তাঁর মতো আটকে থাকা বাকিদেরও যাতে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ২০১৯ সালে চিকিৎসক হতে ইউক্রেনে পাড়ি দেওয়া অর্পণ মণ্ডলের । সেখানের শহরের ডিনিথ্র পেট্রোভ্যাদক্স মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে তৃতীয় বর্ষের ডাক্তারি ছাত্র সে শুক্রবার গভীর রাতে বাড়ি ফেরে অপূর্ণ।

কিন্তু চোখেমুখে এখনও সেই আতঙ্কের ছাপ। অর্পণ জানায়, এরকম পরিস্থিতির মুখে তো কোনওদিন পড়তে হয়নি। তাই চোখের সামনে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সেই স্মৃতি ভাসছে। যেখানে রাস্তায় সাঁজোয়া গাড়ি, ট্যাঙ্ক, মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্রের আওয়াজ, সেখানে ভয় লাগাটা কি স্বাভাবিক নয়! সাইরেন বাজলেই বাঙ্কারে গিয়ে আশ্রয় নিতে হত।