চলচ্চিত্র জগতে ঘোষিত হল ৭০ তম জাতীয় পুরস্কার বিজেতাদের নাম। জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে চমক দিল বাংলা। জাতীয় মঞ্চে মন জয় করল বাংলার গায়ক অরিজিৎ সিং। পাশাপাশি সেরা বাংলা সিনেমার সম্মান পেল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সিনেমা ‘কাবেরী অন্তর্ধান’। শুক্রবার ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচারক মন্ত্রক। বলিউড বনাম দক্ষিণের লড়াইয়ে ফের এগিয়ে থাকল দক্ষিণী সিনেমা। সকলকে পিছনে ফেলে সেরা ছবির পুরস্কার ছিনিয়ে নিল মালয়ালি ছবি ‘আত্তম’ । শুধু তাই নয় এবার সেরা অভিনেতার পুরস্কারও গেল দক্ষিণী অভিনেতার ঝুলিতে। দিল্লির ন্যাশনাল মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে, পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হল।
‘কান্তারা’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতার সম্মানে সম্মানিত হলেন ঋষভ শেট্টি। গত বছর এই পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছিলেন আল্লু অর্জুন। সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও গেল দক্ষিণে। ‘তিরুচিত্রম্বলাম’ তামিল ছবিটির জন্য নিত্যা মেনন এই পুরস্কার পেলেন। গুজরাতি ছবি ‘কচ্ছ এক্সপ্রেস’- এর জন্য মানসী পারেখও এই সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন।
জাতীয় মঞ্চে বাংলার নাম উজ্জ্বল করলেন অরিজিৎ সিং। ব্রহ্মাস্ত্র ছবির জন্য সেরা পার্শ্ব গায়কের পুরস্কার পেয়েছেন অরিজিৎ। ওদিকে সেরা বাংলা ছবির সম্মান পেল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাবেরী অন্তর্ধান’। জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে সেরা রূপটান শিল্পী নির্বাচিত হয়েছেন সোমনাথ কুণ্ডু। ‘অভিযাত্রিক’ ছবির জন্য এই সম্মান পেলেন তিনি। পাশাপাশি অনীক দত্তর এই ছবিই পেয়েছে সেরা প্রোডাকশন ডিজাইনের পুরস্কার। সলিল চৌধুরির পুত্র সঞ্জয় চৌধুরি মালয়ালি ছবি ‘কাধিকান’-এর জন্য স্পেশ্যাল জুরি মেনশন সম্মান পেয়েছেন। সেরা হিন্দি ছবি নির্বাচিত হয়েছে ‘গুলমোহর’।
‘কাবেরী অন্তর্ধান’ পুরস্কার পাওয়ার পর পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তাল এক সময়ের সিনেমা ‘কাবেরী অন্তর্ধান’। আজও একইভাবে প্রাসঙ্গিক। টিমের সকলের জন্য আমার ভালোলাগছে। প্রযোজক থেকে শুরু করে অভিনেতা-অভিনেত্রী সকলের জন্যই এটা প্রযোজ্য। এই জাতীয় পুরস্কার আমার এই ছবির সঙ্গে যুক্ত সকলকে বিশেষ করে টেকনিশিয়ানদের উৎসর্গ করছি। তবে একটা কথা বলব, এবারের বিষয়টা একেবারে অন্য। এমন একটা অস্থির সময় যে কোনওকিছুই নতুন করে বলার নেই। এবারের সেলিব্রেশনটা তাই তোলা থাক।’
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি খুব আনন্দের সঙ্গে পুরস্কার গ্রহণ করলাম। কিন্তু, এই অস্থিরতা কোনওভাবেই গেল না আমাদের সমাজ থেকে। খুব খারাপ লাগছে। আমাদের টিমের তরফে মেকআপ আর্টিস্ট সোমনাথ কুণ্ড ও আনন্দ আঢ্যকেও অনেক অভিনন্দন। জাতীয় স্তরে এমন পুরস্কার সত্যিই গর্বের। তবে এবারের আনন্দটা তেমনভাবে হই-হুল্লোড় করে নয়, বরং খানিক নীরবেই হোক ।’
জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে সেরা রূপটান শিল্পী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সোমনাথ কুণ্ড। অপরাজিত ছবির জন্য এই সম্মান পেলেন তিনি। পাশাপাশি অনীক দত্তর ছবি অপরাজিত ছবির জন্য সেরা প্রোডাকশন ডিজাইনারের পুরস্কারও জিতেছেন আনন্দ আঢ্য।
এক নজরে পুরস্কারের তালিকা-
স্পেশাল মেনসন- ১) গুলমোহর (মনোজ বাজপেয়ী)
২) কাধিকান (মালয়ালি) (মিউজিক ডিরেক্টর সঞ্জয় সলিল চৌধুরি )
সেরা ছবি- আত্তাম (মালয়ালি)
সেরা বিনোদনমূলক ছবি- কান্তারা
সেরা তেলুগু ছবি- কার্তিকে ২
সের তামিল ছবি- পোন্নিয়ান সেলভান (পার্ট ১)
সেরা কন্নড়- কেজিএফ চ্যাপ্টার ১
সেরা হিন্দি ছবি – গুলমোহর
সেরা বাংলা ছবি- কাবেরী অন্তর্ধান (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়)
সেরা সঙ্গীত পরিচালক -প্রীতম (ব্রহ্মাস্ত্র)
সেরা পার্শ্ব গায়ক – অরিজিৎ সিং (ব্রহ্মাস্ত্র)
সেরা পার্শ্ব গায়িকা- বম্বে জয়শ্রী (সৌদি ভেল্লাক্কা)
সেরা গীতিকার- ফৌজা (নওশাদ সদর খান)
সেরা রূপটান (মেকআপ) শিল্পী- অপরাজিত (সোমনাথ কুণ্ডু)
সেরা প্রোডাকশন ডিজাইন – অপরাজিত (বাংলা)
সেরা অভিনেতা- ঋষভ শেট্টি (কান্তারা)
সেরা সহ-অভিনেতা- পবন রাজ মালহোত্রা (ফৌজা)
সেরা অভিনেত্রী- নিত্য মেনন (তামিল ছবি-তিরুচিত্রমবলম)
মানসী পারেখ ( গুজরাতি ছবি-কচ্ছ এক্সপ্রেস
সেরা সহ-অভিনেত্রী- নীনা গুপ্তা (উঁচাই)
সেরা সম্পাদনা- আত্তম (মালয়লম)
সেরা স্টান্ট কোরিয়োগ্রাফি- কেজিএফ ২
সেরা পরিচালক- উঁচাই (পরিচালক-সূরজ আর বারজাতিয়া)
সেরা নবাগত পরিচালক- ফৌজা (পরিচালক- প্রমোদ কুমার)
সেরা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ডিরেক্টর- এআর রহমান (পোন্নিয়ান সেলভান পার্ট-১)
মণিরত্নমের তামিল ঝুলির ছবিতে গিয়ে সর্বোচ্চ চারটি পুরস্কার। ‘ফৌজা’ ছবি জিতেছে তিনটি পুরস্কার, যার মধ্যে রয়েছে সেরা নবাগত পরিচালক, সেরা সহ-অভিনেতা এবং সেরা গীতিকারের পুরস্কার।
কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে এক পড়ুয়া চিকিৎসকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে মর্মাহত সমস্ত চলচ্চিত্রজগৎ। এমন সময় জাতীয় পুরস্কার জয় খুব স্বাভাবিকভাবেই আনন্দের সুর কেটে দিয়েছে । পুরস্কৃত হয়েও তাঁর আশ্বাদ নেোয়ার মতো মানসিকতা হারিয়েছেন সকলেই। তারই প্রকাশ ঘটে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও।