• facebook
  • twitter
Tuesday, 7 January, 2025

ভোগব্যয় বৃদ্ধিতে দেশে এগিয়ে বাংলা, সিলমোহর কেন্দ্রের

ভোটের বাজারে রাজনৈতিক দলগুলিকে দিশা দেখাচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রের স্বীকারোক্তিতে মান্যতা পেল মমতার শাসনব্যবস্থা। তাঁর সরকার লক্ষ্মীরভাণ্ডার, কন্যাশ্রীর মতো সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিতে যে যথেষ্ট সফল, তা কার্যত মেনে নিল কেন্দ্রের মোদী সরকার। রাজ্য বিজেপি যে সরকার প্রতিনিয়ত তুলোধোনা করে চলেছে। কিন্তু একাধিক ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলেছে, সেই তৃণমূল শাসিত সরকারকে কেন স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হল কেন্দ্র?

জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার হাউজহোল্ড কনজাম্পশন এক্সপেন্ডিচার সার্ভে তথা গৃহস্থের ভোগব্যয় সম্পর্কিত সমীক্ষার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাংলার গ্রামীণ পরিবারে চাল, ডাল কেনার বাইরে ভোগব্যয় দেশের অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যে এই বৃদ্ধির হার ৫.৩৯ শতাংশ। যেখানে জাতীয় বৃদ্ধির হার সাড়ে ৩ শতাংশ। মাথাপিছু ভোগব্যয়ের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, দেশে এক বছরে মাথাপিছু গড় ক্রয়ক্ষমতা ৩ হাজার ৮৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৪৭ টাকা। শহর এলাকায় এটা বেড়েছে ১.১৭ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে সাড়ে ৩ শতাংশ। এই বৃদ্ধির হার পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ৫.৩৯ শতাংশ। ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল কমিশন মনে করছে এটা সম্ভব হচ্ছে জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির জন্যই। হাতে নগদের জোগান বাড়ানো এক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী হয়েছে। আর এবিষয়ে দেশে সেরা প্রকল্প লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। যা ভোটের বাজারে এখন গোটা দেশকে পথ দেখাতে শুরু করেছে।

সমীক্ষার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধিকে এই বৃদ্ধির লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, কৃষকবন্ধু, বার্ধক্য ভাতা ইত্যাদির মতো সরকারি অনুদান প্রদানের এই প্রকল্পগুলির চালুর ফলে গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা চাল-ডালের পিছনে খরচ করেও সাশ্রয় হওয়া বাকি টাকা দিয়ে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য ক্রয় করছে। সেই ভোগ্যপণ্যের তালিকায় রয়েছে মাছ, মাংস, দুধ থেকে শুরু করে টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের মতো উন্নত ও আধুনিক কর্মধারা তৈরির পণ্যও। কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য একটি সমীক্ষাই বলছে, মাংস, ডিম, দুধের মতো প্রাণীজ প্রোটিন উৎপাদন ও ভোগে দেশে শীর্ষে বাংলা। গ্রামীণ ভারতে বেড়েছে নানা ধরনের ভোগ্যপণ্যের ক্রয়-বিক্রয়।

তবে শুধু বাংলা নয়, মমতার পথ অনুসরণ করে সফল হয়েছে দেশের একাধিক রাজ্য। কেন্দ্র সরকারের হাউজহোল্ড কনজাম্পশন এক্সপেন্ডিচার সার্ভে তথা গৃহস্থের ভোগব্যয় সম্পর্কিত সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে গ্রামীণ ভারতের ভোগ্যপণ্য ক্রয় বাড়তে শুরু করেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পের সৌজন্যেই। মমতার স্বপ্নের প্রকল্পগুলির অনুসরণ করেই গত এক-দেড় বছর ধরে বিভিন্ন রাজ্য নানা ধরনের জনকল্যাণমুখী প্রকল্প চালু করছে। যেমন– লাডলি বহিনা যোজনা, মাহাতারি বন্ধন, লাডলি লক্ষ্মী, মাইয়া সম্মান যোজনা নামে মহিলাদের অনুদান প্রদানের প্রকল্প আনা হয়েছে মমতার লক্ষীর ভাণ্ডারকে অনুসরণ করে। গরিব রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে শুরু করে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, দিল্লি কেউ বাদ নেই এই তালিকায়। সকলেই মমতার দেখানো পথেই হাঁটছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করা প্রকল্পের মাধ্যমেই গ্রামীণ মানুষের কাছে অতিরিক্ত অর্থ পৌঁছে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত খরচ করতে সক্ষম হচ্ছেন। সরকারি প্রকল্পে সরাসরি উপভোক্তার ব‌্যাঙ্ক অ‌্যাকাউন্টে নগদ অর্থ পৌঁছে যাচ্ছে বলে বাজারে বাড়ছে টাকার জোগানও। বৃদ্ধি পাচ্ছে পণ্য-চাহিদা। উৎপাদন ক্ষেত্রও চাঙ্গা হচ্ছে।

কিন্তু বেরোজগারি হিসেবে বিরোধীদের আওয়াজ তোলা বাংলার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কিভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, কৃষকবন্ধু, বার্ধক্য ভাতা ইত্যাদি মমতার যেসব সামাজিক ও পারিবারিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পে সরাসরি উপভোক্তাদের হাতে অর্থ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, তাতে মানুষ যথেষ্ট সুফল পাচ্ছেন। যার ফলে গ্রামীণ পরিবারগুলির ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে এবং গ্রামীণ পরিবারগুলির খাদ্যশস্যের বাইরে অন্যান্য পণ্য কেনার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সমীক্ষায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

রাজ্যের গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে সবচেয়ে বড় আর্থিক বিপ্লব ঘটিয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ও কন্যাশ্রীর মতো সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্প। এই ধ্রুব সত্যটি দেশের সব রাজনৈতিক দল একবাক্যে মেনে নিয়েছে। দেশের একের পর এক রাজ্য এই প্রকল্পগুলিকে অনুসরণ করায় সেই ধারনা আরও দৃঢ় হয়েছে। আর কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় সেই সাফল্যে সিলমোহর পড়েছে। এমনকি রাজ্যের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার জন্য ভোটের সময় মমতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো জনকল্যাণমুখী প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সুতরাং প্রথম দিকে রাজ্যে মমতার কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প নিয়ে বিজেপি টিপ্পনী কাটলেও তাদের ডবল ইঞ্জিন রাজ্যকেও মমতার পরিকল্পনাকে অনুসরণ করতে হয়েছে।