• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

যে গিরিখাতের কোনও বিকল্প নেই

কোহিনূর কর নতুন কোনও দেশ বা দেশের মধ্যেই নতুন কোনও জায়গা প্রথমবার নিজের চোখে সামনাসামনি দেখে যখন আমরা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠি ‘কী সুন্দর, কী অপূর্ব, ওয়াও!!’ তখন নিজেকে এক মুহূর্তের জন্যে হলেও একজন আবিষ্কর্তা বলে মনে হয়৷ মফঃস্বলের এক ঘরকুনো ছেলে যখন জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ডানা মেলে ওড়ার সুযোগ পেয়ে বিশ্বের কিছু কিছু

কোহিনূর কর
নতুন কোনও দেশ বা দেশের মধ্যেই নতুন কোনও জায়গা প্রথমবার নিজের চোখে সামনাসামনি দেখে যখন আমরা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠি ‘কী সুন্দর, কী অপূর্ব, ওয়াও!!’ তখন নিজেকে এক মুহূর্তের জন্যে হলেও একজন আবিষ্কর্তা বলে মনে হয়৷ মফঃস্বলের এক ঘরকুনো ছেলে যখন জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ডানা মেলে ওড়ার সুযোগ পেয়ে বিশ্বের কিছু কিছু চমকের সামনে হাজির হয় তখন সেই আবিষ্কার মনের মণিকোঠায় অনেকদিন ধরে বাসা বেঁধে থাকে৷ আজ সেরকম একটা চমকের কথা শোনাই৷
উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে ১৯১২ সালে জন্ম হয় এক রাজ্যের – নাম অ্যারিজোনা৷ যেখানে শুধু অসংখ্য প্রজাতির ক্যাকটাস নয়, নানা ধরণের গিরিখাত প্রত্যেক বছর লাখ-লাখ দেশী-বিদেশী পর্যটকদের শক্তিশালী চুম্বকের মত টেনে আনে৷ কোথাও মরুভূমি কোথাও আবার মরুদ্যান যে যাই বলুন না কেন, অ্যারিজোনায় কখনও বেড়াতে এলে কয়েকটা গিরিখাত বা ক্যানিয়নের নয়নাভিরাম দৃশ্য না দেখে চলে গেলে খুব সম্ভবতঃ পরে আঙ্গুল কামড়াতে হবে৷ প্রকৃতির সাতটা আশ্চর্য বিষয়ের মধ্যে অন্যতম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অ্যারিজোনার উত্তর প্রান্তে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়৷ দুশো কোটি বছর আগে যে গিরিখাতের জন্ম হয় আগ্নেয় শিলা আর রূপান্তরিত শিলা তৈরির মধ্যে দিয়ে৷ গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ওপর থেকে দেখা ছাড়াও অনেক পর্বতারোহী শখ করে এক মাইল গভীরে চলে যায়৷ গরমে পরিষ্কার নীলচে সবুজ কলোরাডো নদীর জল যেমন অনায়াসে দেখা যায়, শীতে সেই জল জমে বরফ হয়ে যায়৷ ক্যানিয়নের উচ্চতায় বেশ ঠান্ডা থাকে আর চারদিক ধবধবে সাদা হয়ে যায় তুষারে-বরফে৷
হোপি পয়েন্ট থেকে চোখ মেললেই গিরিখাতের একটা বিশেষ আকার দেখে মনে হয় ঠিক যেন একটা শিব মন্দির৷ এটা কাল্পনিক বলুন আর যাই বলুন, ১৯০৬ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে উত্তর আমেরিকার U.S. Board of Geographic Names এই শিব নামটা দেয়৷ এই অপূর্ব সৃষ্টির পেছনে কার হাত থাকতে পারে? ঈশ্বর-বিশ্বাসী যে কেউ বলবেন ‘সবই তাঁর’ লীলা-খেলা৷ এবার ভাবুন শিবের মত প্রলয় ক্ষমতাধারী হিন্দু দেবতা ভারতবর্ষ ছেড়ে কেন সাত-সমুদ্দুর তেরো নদী পার হয়ে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মত এক প্রত্যন্ত গ্রামে নয়নাভিরাম এই মন্দির তৈরী করেছেন৷ বিজ্ঞান এর ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও এর পেছনে দুশো কোটি বছর আগের ইতিহাস জড়িয়ে আছে সেটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়৷   এবার চলুন এমন এক গিরিখাতের কথা বলি যেটা পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ৷ এর নাম অ্যান্টেলোপ ক্যানিয়ন৷  নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন৷ নাবাহো অঞ্চলের বেলেপাথর বা বালুশিলা বন্যা বা হঠাৎ জোর বৃষ্টির জলের তোড়ে সমানে ক্ষয় হতে হতে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে এই লালচে-গোলাপী গিরিখাতের সৃষ্টি৷ সুড়ঙ্গের মধ্যে উচু-নীচু পাহাড়ী পথ বেয়ে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে ঘন্টা দেড়েক লেগে যায়৷
অ্যান্টেলোপ ক্যানিয়ন দেখার দুটো উপায় আছে৷ আপার অ্যান্টেলোপ থেকে শুরু করে অর্থাৎ ওপর থেকে নীচে নেমে যাওয়া যায়, কিম্বা লোয়ার অ্যান্টেলোপ দিয়ে ঢুকে নীচ থেকে ওপরের দিকে ওঠা যায়৷ দুদিক থেকেই যা দেখা যায় তা বলে বর্ণনা করা খুব মুস্কিল৷ আকাশ এখানে বছরের অনেকটা সময়ই পরিষ্কার থাকে৷ দিনের আলো বা সরাসরি রোদ্দুর সরু খাতের মধ্যে দিয়ে যখন ভেতরে পড়ে তখন নানারকম রঙের ছটা দেখা যায়৷ এখানকার ছবি তুলে অনেক ফটোগ্রাফার পুরষ্কার বা সম্মান পেয়েছেন৷ একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে কয়েকটা নামী ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানীর কম্পিউটার স্ক্রীন-শট বা মার্কেটিং মিডিয়াতে ঠিক এই অ্যান্টেলোপ ক্যানিয়নের ছবি কাজে লাগানো হয়েছে৷
অ্যান্টেলোপ ক্যানিয়ন দেখার পর মনে হয় স্বর্গের সন্ধান পেলাম৷ অতটা উচুনীচু পথ হাঁটার পর ক্লান্তি তো দূরের কথা, মনে হয় কেন এত তাড়াতাড়ি গাইডেড টু্যর-টা শেষ হয়ে গেল৷ ছবিগুলো দেখার পর বলুন কোনও বিশেষ শক্তি যাকে ঐশ্বরিক বা মহাজাগতিক যাই বলা হোক না কেন কিছু তো আছেই আছে৷ বিজ্ঞান দিয়ে এর ব্যাখ্যা মিলতেই পারে৷ কিন্ত্ত এত নিখুঁত কাজ শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলের তোড়ে? নাঃ, এই বিশ-ব্রম্মান্ডের রূপকার বহু বছর ধরে ভীষণ যত্নশীল হয়ে এই গিরিখাত তৈরী করেছেন৷ আর আমরা শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখি৷