কান পাকা বা পর্দা ফেটে গেলে অবশ্যই মানুন 

দীর্ঘদিন সর্দি-কাশি লেগে থাকলে কানে জল জমতে পারে।  আবার স্নানের সময় জল ঢুকেও কানে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় কানের পর্দা ফুটো হয়ে যায়। আবার কোনো কোনো সময় কানে পুঁজ হয়।

আবার কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিল কিছু রোগের কারণেও কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে বা কান দিয়ে পুঁজ ও পানি পড়তে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের কানের ইনফেকশন বা সর্দি-কাশি যাকে আমরা সাধারণ ভাষায় কমন কোল্ড বলে থাকি তা থেকে কানে সমস্যা হয়ে থাকে। এমন কোনো বাচ্চা নেই, যার জীবনে কোনো না কোনো সময় একবারও কানের ইনফেকশন হয়নি।


বেশিরভাগ সময় সুষ্ঠু চিকিৎসার মাধ্যমে এ ইনফেকশনের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। যদি এ ইনফেকশনের সুষ্ঠু চিকিৎসা না হয় বা পর্যাপ্ত চিকিৎসা না হয়, তা হলে ইনফেকশন থেকে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে।

কানের সমস্যা কাদের বেশি হয় 

যেসব বাচ্চা এডিনয়েড গ্রন্থির প্রদাহে অনেক দিন ধরে ভোগে বা যেসব বাচ্চার এডেনয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যায়, তাদের কানের সমস্যা আরও বেশি হয়ে থাকে।  ঘনঘন কানের ইনফেকশন থেকে কানের পর্দা ফেটে যায়।  অনেক সময় টনসিল, নাক বা সাইনাসের ইনফেকশন ঘন ঘন হতে থাকলে বা সবসময় নাক বন্ধ থাকলেও কানের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

এডিনয়েড, টনসিল বা নাকের সমস্যা অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে এটি ইউস্টেশিয়ান টিউবের ওপর প্রভাব ফেলে এবং দেখা যায় টনসিল।  এডিনয়েড বা নাকের সমস্যার চিকিৎসা হওয়ার পরও ইউস্টেশিয়ান টিউবের ফাংশন কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ ফিরে আসে না। ফলে কান পাকা বা কানের পর্দা ফাটা রোগীর চিকিৎসা জটিল আকার ধারণ করে বা এটি সহজে সারতে চায় না।

বড়দের ক্ষেত্রে কান পাকা রোগটি সাধারণত ছোটবেলা থেকেই শুরু হয়ে থাকে। তাদের হয় ছোটবেলা থেকেই কানের পর্দা ফাটা থাকে অথবা ইউস্টেশিয়ান টিউবের কার্যক্ষমতা ব্যবহৃত হওয়ার জন্য কানের পর্দা আগে থেকেই দুর্বল থাকে। অনেক সময় দেখি কানের ভেতর জল  গেলে কান পাকা শুরু হয়। আপাতত দৃষ্টিতে তাই মনে হয়; কিন্তু কানের ভেতরে জল গেলে কান পাকা রোগ শুরু হওয়ার কথা নয়।

আবার কানের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হলে সুস্থ পর্দাও ফেটে যেতে পারে। যেমনটি হতে পারে কানে ভালোমতো থাপ্পড় লাগলে। অল্প সর্দি-কাশিতে কানের পর্দা ফেটে গিয়ে পুঁজ-জল বের হচ্ছে। কানের পর্দা সুস্থ থাকলে এ রকম হওয়ার কথা নয়। বয়স্ক রোগীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছোটবেলা থেকে কানের পর্দা দুর্বল থাকে অথবা ক্রমাগত নাক বা সাইনাসের প্রদাহের কারণে বা ক্ষেত্রবিশেষে টনসিলের ক্রমাগত প্রদাহের কারণে কানের পর্দা দুর্বল হয়ে যায়।

যেসব লক্ষণে বুঝবেন কান পাকা 

রোগী কানে কম শুনতে পারেন— এটি সামান্য থেকে মারাত্মক পর্যন্ত হতে পারে। কান পাকার জন্য কান দিয়ে পুঁজ-জল বের হয়। অনেক সময় মাথা ঘুরায়। মাথার ভেতরে ভোঁ ভোঁ শব্দ হয়। অনেক সময় কানে ব্যথা হতে পারে। এ কান দিয়ে পুঁজ-জল পড়াটা প্রাথমিক পর্যায়ে মাঝে মাঝে হয়; কিন্তু ক্রমাগত কান পাকতে থাকলে অনেক সময় দেখা যায়, কান কোনো সময় শুকাতেই চায় না। অনেক সময় আবার সর্দি-কাশি লাগলেই কান দিয়ে জল বের হতে থাকে।

কী করবেন
পর্দা ফাটা থাকলে অবশ্যই কান শুকনা রাখতে হবে। কানের ভেতর যেন জল না যায়। স্নানের করার সময় তুলাতে তেল দিয়ে ভিজিয়ে তারপর তুলা চিপে কানে দিয়ে স্নান করতে হবে।

কোনো সময়ই জলের তলে সাঁতার কাটা যাবে না বা জলে ঝাঁপ দেয়া যাবে না। কানে ইনফেকশন থাকলে কানটি ঠিকমতো পরিষ্কার করা দরকার এবং তারপর কানে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দিতে হয়।

কান পরিষ্কার করা জরুরি এবং অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে এটি করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কদাচিৎ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে বা ইনজেকশন দেওয়া লাগতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ কান শুকনা অবস্থায় কানে দেওয়া নিষেধ- এটি কানে মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলতে পারে, এমনকি কানে শোনা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কাজেই শুকনা কানে ইচ্ছামতো অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করার প্রবণতা অবশ্যই দূর করতে হবে।

কানে শোনা এবং কানের অন্যান্য ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য অডিওগ্রাম করানো দরকার। এতে বোঝা যায় কান কতখানি নষ্ট হয়েছে। অনেক সময় সমস্যা আমরা বুঝতে পারি না; কিন্তু ভেতরে ভেতরে কানের ক্ষতি হতে থাকে এবং শ্রবণশক্তি ক্রমাগত কমতে থাকে। কাজেই প্রতি ৩ থেকে ৬ মাস অন্তর কানের হেয়ারিং টেস্ট করে শ্রবণশক্তির পরিমাণ রেকর্ড করা উচিত।