দিল্লির লড়াই

প্রতীকী চিত্র

এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক মহলে যে বিষয়টি সবচাইতে বেশি আলোচিত, তা হল দিল্লির ভোট। রাজধানীর প্রায় দেড় কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৫ ফেব্রুয়ারি। তার ফলাফল কী হয়, যা নিয়ে উৎকণ্ঠার শেষ নেই দিল্লিবাসীদের—তা জানা যাবে ৮ ফেব্রুয়ারি। এখন, স্বাভাবিক ভাবেই ভোটের প্রচার তুঙ্গে। দিল্লির এই নির্বাচনে যে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশি কথা খরচ হচ্ছে, তা হল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র দুই প্রধান শাসক দল আম আদমি পার্টি (আপ) এবং কংগ্রেসের মুখোমুখি লড়াই। এই দুই দল বিরোধী জোটে থাকলেও দিল্লির নির্বাচনে একে অপরের রাজনৈতিক শত্রু। তারপরেই অবশ্য নাম করতে হয় কেন্দ্রের প্রধান শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিজেপির কাছ এই নির্বাচন হল মরন-বাঁচন লড়াই। কারণ গত ২৫ বছরে বিজেপি দিল্লির মসনদ দখল করতে পারেনি। সুতরাং বিজেপি উঠে পড়ে লেগেছে এবার দিল্লির সিংহাসনে বসার। তার লড়াই কংগ্রেস ও আপের সঙ্গে। অপরদিকে আপ ইন্ডিয়ার শরিক দল হলেও, কংগ্রেস ও বিজেপিকে পরাজিত করে দিল্লির মসনদ দখলে রাখা। কংগ্রেসও ছাড়বার পাত্র নয়। তার চেষ্টা হবে আপ ও বিজেপিকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করা।

নির্বাচন যেহেতু প্রায় শিয়রে তাই দিল্লির ভোটের প্রচারও এখন উচ্চস্তরে। এই তিনটি দলের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে নানা ঘটনার অবতারণা করে। যেমন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আপের অভিযোগ, বিজেপির নজরে পড়েছে দিল্লির বস্তিবাসীর জমি। আপ প্রধান বলেছেন, বিপজেপি দিল্লির তখত দখল করতে পারলে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করে, বুলডোজার দিয়ে তাঁদের বসবাসের ঘরগুলি ভেঙে পথে বসিয়ে, সেই জমিতে উচ্চবিত্তদের জন্য আবাসন তৈরি করবে। এই ব্যাপারে সাবধানবাণী উচ্চারণ করে কেজরিওয়াল বস্তিবাসীদের বিপদ ডেকে আনতে পারে বিজেপি, তা বুঝিয়ে বলেছেন বিজেপিকে একটি ভোটও নয়। অপরদিকে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, আপের কথা সর্বৈব মিথ্যে এবং কেন্দ্রের আবাসন প্রকল্প যাতে দিল্লিতে রূপায়ন হতে না পারে তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন কেজরিওয়াল এবং তাঁর দল। কিন্তু আপের সমস্ত বাধা অতিক্রম করে কেন্দ্র বস্তিবাসীদের জন্য আবাসন তৈরি করে দিয়েছে। এটা ভুললে চলবে না কেজরিওয়াল বস্তিবাসীদের দুঃখকষ্টের জন্য যতটা ভাবেন, তার চাইতে অনেকগুণে বেশি ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই দিল্লির বস্তিবাসীদের ভোটের ওপর নজর পড়েছে আপ ও বিজেপি উভয়েরই। সম্প্রতি দিল্লির অশোক বিহার এলাকায় বস্তিবাসীদের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যাঁরা বাদ রইলেন, তাঁদের প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে তাঁদের সবার জন্যই ঘর তৈরি করে দেবে। সুতরাং ভোটের আগে বস্তিবাসীদের হাতে আবাসনের চাবি তুলে দেওয়ায় আপ প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছে।

পাল্টা চাপ দিতে ছাড়েনি আপও। সম্প্রতি দিল্লির শুকুরবস্তি এলাকা পরিদর্শনের পর আপ নেতারা বলেছেন, বিজেপির আসল উদ্দেশ্য হল বস্তিবাসীদের জমি যে কোনও প্রকারেই দখল করব। সেখানে আবাসন তৈরি হবে উচ্চপিত্তদের জন্য তাদের বঞ্চিত করে। সুতরাং তারা বস্তিবাসীদের বলেছেন, বিজেপি যে খেলা খেলছে, সে খেলা হল তাদের জমি কেড়ে নেওয়া। বিজেপির ফাঁদে যেন তাঁরা না পড়েন তার জন্য তিনি তাঁদের সাবধান করে দিয়েছেন। বিজেপির লক্ষ্যই হল দিল্লি থেকে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা। সম্প্রতি কেন্দ্রের গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লির বস্তিবাসীদের এক সম্মেলনে বলেছেন, বস্তিবাসীদের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করে দিতে মোদী সরকার বদ্ধপরিকর।


কেজরিওয়ালের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে কেন্দ্র বস্তিবাসীদের জন্য মাত্র ৪৭০০ ঘর তৈরি করেছে। অথচ রাজধানীতে প্রায় ৪০ লক্ষ বস্তিবাসী রয়েছে। সুতরাং ভোটের প্রচারে আপ এবং বিজেপি বস্তিবাসীদের জন্য কে কতটা করতে পারে তা নিয়েই প্রচার চলছে বেশি। পাশাপাশি আপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে দিচ্ছে— এই অভিযোগ এনেছে বিজেপি। সম্প্রতি একাধিক বাংলাদেশি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।

অপরদিকে কংগ্রেসও ভোটের প্রচারে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনে। কংগ্রেস নেতারা ভোটারদের সতর্ক করে দিয়েছেন বিজেপি ভোটে জয়ী হলে দিল্লির বস্তিবাসীদের জন্য কিছুই করবে না। সুতরাং তাঁরা যেন মিথ্যে আশ্বাসে না ভোলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপ প্রধান কেজরিওয়ালকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস আপের পাশে আছে এবং আপ ভোটে জয়ী হয় তাই চায়। ভোটের প্রচারে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের এখনও তেমন ভাবে দেখা যায়নি। কেজরিওয়াল বলেছেন, তিনি মমতাদিদির আশীর্বাদ পেয়ে ধন্য। অপরদিকে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও আপকে সমর্থন করেছেন। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপের হয়ে প্রচারে যাবেন কিনা, তা এখনও জানা যায়নি।

রাজনৈতিক মহল মনে করে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দলগুলির মধ্যে কংগ্রেস ও আপ রয়েছে। সুতরাং কংগ্রেসের দিল্লির ভোটে আপের বিরুদ্ধে লড়া রাজনৈতিক মহলে আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। বিরোধী নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, এর ফলে বিরোধী জোটে ফাটল না ধরলেও, ওই দুইয়ের পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটে লড়া কেমন যেন বিসাদৃশ্য লাগছে। দিল্লির নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে তিনটি দলই আশাবাদী ভোটে জেতার জন্য। এখন অপেক্ষা, ৮ ফেব্রুয়ারির জন্য। সেদিন জানা যাবে কে হারল, কে জিতল।