দিল্লি, ৭ ফেব্রুয়ারি– টাঙ্গাইল নিয়ে টানটানিতে অবশেষে জিতল বাংলা৷ আর তাতেই অগ্নিশর্মা ওপার বাংলা৷ এর আগে রসগোল্লা নিয়ে জিতেছে বাংলা৷ রসগোল্লার জিআই ট্যাগ নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয় ওড়িশা সরকারের সঙ্গে৷ শেষে মুকুট ওঠে বাংলার মাথায়৷ এবার টাঙ্গাইল৷ তবে টাঙ্গাইল নিয়ে কিন্তু বাংলার সঙ্গে লড়াই শুরু হয়েছে আরেক বাংলার৷ ওপার বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশের৷ যদিও এখানেও জিতের হাসি ফুটেছে বাংলার মুখেই৷
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ট্যাগের জন্য আবেদন করে পশ্চিমবঙ্গের হস্তশিল্প বিভাগ৷ এই বিশেষ বুননের তাঁতের শাড়িটি নদিয়া ও পূর্ব বর্ধমানের পণ্য হিসেবে দাবি করে আবেদনটি করা হয়েছিল৷ চলতি বছরের ২ জানুয়ারি জেনিভার ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (উইপো) সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন বা ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করে৷ ব্যাস এখানেই বাধে গোল৷
টাঙ্গাইল শাড়ির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে এটির আবিষ্কার হয় পূর্ববঙ্গ অধুনা বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে৷ যাঁদের হাতে এই শাড়ি দিনের আলো দেখেছিল তাঁরা প্রায় সকলেই বসাক সম্প্রদায়ের৷ কিন্তু দেশভাগের কারণে তাঁদের অধিকাংশই চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে৷ বসত বাঁধেন নদীয়ার ফুলিয়ায়, পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়ে৷ খুব স্বাভাবিকভাবেই এই জায়গাগুলিই হয়ে ওঠে টাঙ্গাইল শাড়ির কেন্দ্র৷ কিন্ত্ত টাঙ্গাইল নামটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে তার উৎপত্তিস্থলের স্মৃতি৷
এই শাড়িটির জিআই ট্যাগ পাওয়া নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের তৎপরতা প্রাথমিক ভাবে নজর এড়িয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের৷ কিন্ত্ত টাঙ্গাইলের জিআই ট্যাগ প্রাপ্তির পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁতিদের প্রতি যে শুভেচ্ছাবার্তা ও অভিনন্দন দেন তা প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে৷ আর তা দেখার পরই টনক নড়ে বাংলাদেশ সরকারের৷ টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানান নাগরিকদের একটি অংশ৷ টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ট্যাগ পশ্চিমবঙ্গ পাওয়ায় এক্স হ্যান্ডেলে প্রতিবাদ জানান সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন৷
বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটির একটি সমাধান সূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হবে৷ ফল অনুকূল না হলে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র দ্বারস্থ হবে বাংলাদেশ৷ একই পণ্যের জন্য একাধিক দেশ জিআই ট্যাগের জন্য উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে আবেদন করতে পারে৷ এমনকী কোনও বিতর্ক তৈরি হলে সিদ্ধান্ত বদলও হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে উইপো-র নির্দিষ্ট কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়৷ সুতরাং ভবিষ্যত বলবে বাংলাদেশের প্রতিবাদ ও দাবি কতটা কাজে আসবে৷
একই সময়ে সুন্দরবনের মধুরও জিআই ট্যাগ প্রাপ্তি ঘটেছে এবং প্রাপক এক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ৷ সুন্দরবনের বেশিরভাগই বাংলাদেশের অধীনে৷ তবে মধুর ব্যাপারে দু’দেশের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এখন তাই বড় প্রশ্ন৷