মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকীকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের জেরা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল মুম্বই পুলিশ। দীর্ঘ জেরায় অভিযুক্তরা জানায়, ইউটিউব ভিডিও দেখে গুলি চালানোয় হাত পাকিয়েছে তারা । এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকীকে খুনের ঘটনায় মোট চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে মুম্বই পুলিশ। তাদের সঙ্গে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের যোগসূত্র রয়েছে বলেও তদন্তে জানা গিয়েছে। পুলিশ একটি কালো ব্যাগও উদ্ধার করেছে যার মধ্যে একটি ৭.৬২ এমএম পিস্তল পাওয়া যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, দুষ্কৃতীদের কাছে বাবা সিদ্দিকীর বেশ কয়েকটি ছবি ছিল। খুনের ঘটনার ২৫ দিন আগে থেকে দুষ্কৃতীরা ওই নেতার অফিস এবং বাড়ির আশেপাশের এলাকায় ‘রেইকি’ করে। জেরা করে পুলিশ জানতে পারে বাবা সিদ্দিকী ও তার ছেলে জিশান দু’জনকেই খুন করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তাদের বলা হয়েছিল, অফিস থেকে বেরোলে দু’জনের ওপরই গুলি চালাতে। তা সম্ভব না হলে যাকে প্রথমে পাবে তাকে মারার নির্দেশ ছিল হত্যাকারীদের উপর।
এই খুনের ঘটনায় প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় গুরমেল সিংহ এবং ধর্মরাজ কাশ্যপকে। দুই জনের বয়সই ২০-র ঘরে। এদের মধ্যে এক জন উত্তরপ্রদেশ, অন্য জন হরিয়ানার বাসিন্দা। জেরায় তারা জানিয়েছে, ইউটিউব ভিডিও দেখে বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ নেয় তারা। জেরায় আরও জানা যায় রীতিমতো আঁটঘাট বেঁধে সিদ্দিকি ও তাঁর পুত্র জিশানকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। দুষ্কৃতীদের সুপারি দেওয়া হয়েছিল। খুনের কয়েকদিন আগে দুই জনকে আগাম এক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। দেওয়া হয় আগ্নেয়াস্ত্রও। খুনের মহড়ার জন্য কুরলায় বাড়ি ভাড়া নেয় গুরমেল ও ধর্মরাজ।
সিদ্দিকী খুনে মুম্বইয়ের গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের যোগ রয়েছে বলে আগেই জানিয়েছিল পুলিশ। জেরার মুখে দুই ধৃতই সেকথা স্বীকার করে। সিদ্দিকী খুনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুণের প্রবীণ লোনকর নামে এক ব্যক্তিকে। হরিশকুমার নিশাদ নামে বছর চব্বিশের যুবককে উত্তরপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয়। সূত্রের খবর, গত মাসেও সিদ্দিকীকে খুন করার চেষ্টা করেছিল আততায়ীরা। এও জানা গিয়েছে সিদ্দিকীকে ১০ বার মারার চেষ্টা হয়। কিন্তু প্রতি বারই সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আরও কয়েকজনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
গত শনিবার জিশান সিদ্দিকীর দলীয় কার্যালয়ের সামনে খুন হন এনসিপি নেতা। নিজের গাড়িতে ওঠার সময় তাঁকে লক্ষ্য করে পর পর গুলি চালানো হয়।জিশান সিদ্দিকী বান্দ্রা ইস্টের কংগ্রেস বিধায়ক। শনিবার রাতে তাঁর অফিসেই গেছিলেন বাবা সিদ্দিকী। সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় গুলিবিদ্ধ হন। ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা থেকে সত্ত্বেও কী করে এই হত্যাকান্ড ঘটল ঘটনা ঘটল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, ‘খেরওয়াড়ি অর্থাৎ যে এলাকায় এই ঘটনা ঘটে সেটি উন্মুক্ত এলাকা। তাই সেই জায়গাতেই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল আততায়ীরা।’ ধৃতদের জেরা করে এই তথ্য মেলে ।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, বলিউড অভিনেতা সলমন খানই ছিল লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের মূল টার্গেট। এছাড়াও তাদের হিটলিস্টে রয়েছে গায়ক সিধু মুসেওয়ালার ম্যানেজার শগনপ্রীত সিং। তালিকায় উঠে এসেছে গ্যাংস্টার কৌশল চৌধুরীর নামও। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে দেশের ১১ রাজ্যে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের ৭০০-রও বেশি শুটার রয়েছে।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। শনিবারই শিন্ডে ঘোষণা করেন, এই হত্যা মামলার বিচার ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে হবে। এনকাউন্টার বিশেষজ্ঞ দয়া নায়েক এই ঘটনার তদন্ত করবেন। পাশাপাশি মুম্বই পুলিশকে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।