দিল্লি, ৮ জুলাই- বাংলার তৃণমূল সরকারের চালু করা বেশ কিছু প্রকল্প শুধুমাত্র ভারতে নয় গোটা বিশ্বের কাছে নজির৷ তারমধ্যে স্বাস্থ্য সাথী, কন্যাসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রভৃতি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে অনুকরণও করা হয়েছে৷ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নানা বিষয়ে মমতা সরকারকে বিঁধলেও বাংলার প্রকল্পগুলিকে গ্রহণ করতে বাধ সাধেন না৷ এই যেমন স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প৷ জানা গিয়েছে, তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটে বাংলার স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পকে টেক্কা দিতে আয়ুষ্মান ভারতে স্বাস্থ্যবিমার পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে৷ এমনকী কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পে বিমার ঊর্ধ্বসীমা বছরে ১০ লক্ষ টাকা করতে পারে৷ ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্ক প্রবীণ নাগরিকদের আগামী তিন বছর ধরে এই সুযোগের প্রস্তাব আনতে পারেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন৷
সেই লক্ষ্যে বাজেটে আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্যবিমার কভারেজ বছরে ১০ লক্ষ্য টাকা করার চিন্তাভাবনা চলছে৷ এই প্রস্তাব আনা হলে রাজকোষ থেকে অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৬ কোটি টাকা খরচ বাড়বে৷ জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই আনুমানিক খরচ অর্থমন্ত্রকে প্রস্তাবাকারে পেশ করেছে৷
আগামী ২৩ জুলাই বাদল অধিবেশনে পেশ হতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ বাজেট৷ প্রসঙ্গত, এই বছরেই শারদোৎসবের মরশুম শেষ হলেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পডে় যাবে৷ এর মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরও আছে৷ শুধু তাই নয়, আগামী ২০২৬ সালে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোট৷ লোকসভা ভোটে মুখ থুবডে় পড়ার পর মোদির দল তাই বাংলাকেও এই প্রকল্পের সুবিধা দিয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করবে৷ সেই লক্ষ্যে এবারের বাজেটে সীতারামনের সামনে সরকারের জনদরদী মুখ তুলে ধরাই অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপির এই চিন্তাভাবনার মূল লক্ষ্য হল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজের আয়ুষ্মান প্রকল্পকে জনমুখী গড়ে তোলা৷ কেননা, কিছুদিন আগেই লোকসভা ভোটে বাংলায় বিপুল বিপর্যয়ের ফল-সমীক্ষায় গেরুয়া শিবির মেনে নিয়েছে যে, এই রাজ্যে মমতার গ্রহণযোগ্যতার কাছে ধোপে টেকেনি বিজেপি৷ রাজ্যে উন্নয়নমুখী বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা মানুষকে মমতামুখী করে রেখেছে৷ মমতার প্রকল্পকেই অনুকরণ করে বিভিন্ন রাজ্য ইতিমধ্যেই মহিলা, বয়স্ক, পড়ুয়াদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি শুরু করেছে৷
সূত্র আরও জানিয়েছে, আয়ুষ্মান প্রকল্পের বিমা কভারেজ দ্বিগুণ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে৷ আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় আগামী তিন বছর এই সুবিধা দানের কথা ভাবা হচ্ছে৷ যদি বাজেটে সীতারামন এই প্রস্তাব আনেন, তাহলে তা স্বাস্থ্যবিমা ক্ষেত্রে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে এই সুবিধার আওতায় নিয়ে আসবে৷ উল্লেখ্য, বর্তমানে আয়ুষ্মান ভারতে বিমার কভারেজ হল ৫ লক্ষ টাকার৷
এর আগে চলতি বছরের অন্তর্বর্তী বাজেটে জন আরোগ্য যোজনায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করে প্রতিবছর পরিবারপ্রতি ৫ লক্ষ টাকা কভারেজের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল৷ যাতে ১২ কোটি মানুষ উপভোক্তার তালিকায় এসেছিলেন৷ একইসঙ্গে আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশনে ৬৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল৷