হায়দরাবাদ, ১৮ এপ্রিল – তেলেঙ্গানার একটি মিশনারি স্কুলে পোশাক নিয়ে গন্ডগোলের জেরে হামলার ঘটনা ঘটল। স্কুল ইউনিফর্ম ছাড়া অন্য কোনও পোশাক পরে স্কুলে আসা নিষেধ হওয়া সত্ত্বেও কয়েকজন পড়ুয়া গেরুয়া পোশাক পরে স্কুলে চলে এসেছিল। স্কুল ইউনিফর্ম পরে না আসায় প্রধান শিক্ষক ওই পড়ুয়াদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। পড়ুয়াদের অভিভাবকদেরও ডেকে পাঠানো হয়। অভিযোগ এরপরই স্কুলে একদল গেরুয়াধারী হিন্দুত্ববাদী হামলা চালায়। ঢিল-পাটকেল ছুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় স্কুলে। ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের একদল সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ‘হনুমান দীক্ষা’ উপলক্ষে পড়ুয়ারা গেরুয়া পোশাক পরে আসায় এবং পড়ুয়াদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠানোয় ভাঙচুর চালায় অভিযুক্তরা।
মূল ঘটনাটি ঘটে গত ১৬ এপ্রিল। উত্তর তেলেঙ্গানার কান্নেপল্লি গ্রামে সেন্ট মাদার টেরিজা ইংলিশ মিডিয়াম নামে একটি স্কুল আছে। মিশনারিরা এই স্কুলটি চালায়। হঠাৎই দেখা যায়, কয়েকজন ছাত্র গেরুয়া পোশাক পরে স্কুলে চলে এসেছে। শিক্ষকরা সেটা দেখার পর খবর দেন প্রিন্সিপালকে। তিনি অভিভাবকদের ডেকে পাঠানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই হামলা শুরু হয়। এই ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের তরফে দুটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, বাইরে থেকে গেরুয়াধারী একদল যুবক এসে ঢিল মারছে মাদার টেরিজার মূর্তি লক্ষ্য করে। তারা জয় শ্রীরাম বলে ধ্বনি দিতে দিতে স্কুলের জানলার কাঁচ ভাঙছে। স্কুলের শিক্ষকরা হাত জোড় করে তাণ্ডব থামাতে অনুরোধ করলেও কোনও কথাতেই কান দেয়নি তারা। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। স্কুলের করিডোর থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তাঁরা। অভিযোগ, কয়েকজন বিক্ষোভকারী প্রিন্সিপালকে ঘিরে ধরে, মারধর করা হয় তাঁকে। এমনকী জোর করে তাঁর কপালে তিলক লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, স্কুলে পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষার শেষে প্রিন্সিপাল ওই ছাত্রদের ইউনিফর্ম পরে স্কুলে আসতে বলেন। তা না হলে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে বলে জানান। ছাত্ররা সেটা বাড়িতে জানানোর পরেই স্থানীয়রা একটি মন্দিরে জড়ো হয়ে স্কুলে হামলা চালায়।
এক অভিভাবক অভিযোগে লিখেছেন, ‘হনুমান দীক্ষা’ হল হিন্দুদের একটি রীতি। প্রায় একমাস ধরে এটা পালন করা হয়। চতুর্থ শ্রেণির তিন ছাত্রকে দীক্ষার পোশাকে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। প্রিন্সিপাল এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের ধর্মাচরণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন। ধর্মের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগে বলেছেন। পালটা স্কুলে ভাঙচুর, মারধরসহ একাধিক অভিযোগে এফআইআর করেছে কর্তৃপক্ষ।