দিল্লির নয়া মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন অতিশি, জেনে নিন তাঁর পরিচয়

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই হেপাজত থেকে জামিন পাওয়ার পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কেজরিওয়াল পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য বেছে নিয়েছেন অতিশি মার্লেনা সিংকে। আম আদমি পার্টির অতিশি সর্বসম্মতিক্রমে মনোনীত হয়েছেন।

দিল্লির বিখ্যাত স্টিফেনস কলেজের স্নাতক এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর অতিশি বর্তমানে দিল্লি সরকারের অর্থ, শিক্ষা, পূর্ত, সংস্কৃতি ও পর্যটনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার অভিযান চালানোয় তিনি অগ্রগণ্য। উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে বিদ্যালয় পরিকাঠামোর আমূল পরিবর্তন, পঠনপাঠনের মানোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ‘আনন্দ পাঠ্যক্রম’ বা ‘উদ্যোক্তা মনোভাব পাঠ্যক্রম’-এর মতো উদ্ভাবনী নানা বিষয়কে শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্তি করাও তাঁরই কাজ।

দিল্লির কালকাজী বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ২০২০ সালে তিনি বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি দিল্লি সরকারের শিক্ষা দপ্তরের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৩ এর মার্চ মাসে প্রাক্তন মন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া এবং সত্যেন্দ্র জৈন পদত্যাগ করার পরে তাঁকে দিল্লি সরকারের ক্যাবিনেটের অংশ করে নেওয়া হয়। তাঁকে শিক্ষা, পূর্ত, শক্তি এবং পর্যটন দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।


শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার ছাড়াও তিনি পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়েও সমানভাবে সোচ্চার। দিল্লিতে পুনর্নবীকরণীয় শক্তি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, সাসটেনেবিলিটি বিষয়ক একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নীতিকে তিনি সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছেন।

কিন্তু কী কারণে কেজরিওয়াল দিল্লির তৃতীয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিলেন আতিশিকেই? এর কারণ ত্রিবিধ বলেই মনে করছেন আপ নেতৃত্ব।

প্রথমত, কেজরিওয়াল জেলবন্দী থাকার সময়ে আতিশি দক্ষতার সঙ্গে প্রশাসন পরিচালনা করেছেন। ফলত, সরকারি কর্তাদের উপর তাঁর একটা প্রভাব তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় আতিশিই স্বাভাবিকভাবে প্রথম পছন্দ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন সামনেই। তাতে মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে রয়েছেন প্রয়াত বিজেপি নেত্রী এবং ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মেয়ে বাঁশরি স্বরাজ। বাঁশরি বর্তমানে নিউ দিল্লি লোকসভার সাংসদ এবং পেশায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তাঁর মা দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, ফলে সেই আবেগকে কাজে লাগাতে পারে বিজেপি। এর বিরুদ্ধেই আপ-এর এহেন সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।

তৃতীয়ত, কেজরিওয়াল অত্যন্ত বিপদের দিনে অতিশি তাঁর পাশে ছিলেন। ২০১৫ সালে প্রশান্ত ভূষণ এবং যোগেন্দ্র যাদব যখন কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের অভিযোগ আনেন, তখন আতিশি সমস্ত জল্পনা সরিয়ে কেজরিওয়ালের পক্ষেই সওয়াল করেন। ফলে, অসহযোগিতার আশঙ্কায় তাঁকে প্রথমে দলীয় মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দিলেও পরে তাঁকে ফের ওই পদে ফিরিয়ে আনা হয়।

ফলত, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে কেজরিওয়াল স্ত্রী সুনীতা বা দিল্লি বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ও দলিত মহিলাদের মুখপাত্র রাখি বিড়লা থাকলেও অতিশিই যোগ্য উত্তরসূরী, এমনটা মনে করা হচ্ছে। পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের জন্য দাঁড় করানো হবে কিনা, সেই বিষয়েও চলছে জল্পনা।