অন্নপূর্ণি সুব্রহ্মণ্যম। মহাকাশ বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথা জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার জগতে তিনিও এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। আগামী ২৩ আগস্ট বিজ্ঞান ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান বিজ্ঞানশ্রী সম্মান পেতে চলেছেন তিনি । পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে তিনিই একমাত্র মহিলা বিজ্ঞানী হিসেবে এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হচ্ছেন ।
কেরলের পালাক্কাড়য়ে খুবই সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম অন্নপূর্ণির। বাবা-মা দুজনেই কর্নাটকি সঙ্গীত বিশারদ। বাবা বেহালা বাজান। বাবার কাছেই ছোটবেলায় বেহালায় হাতেখড়ি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেও আগ্রহ ছিল । তবে সব কিছু ছাড়িয়ে অন্নপূর্ণির দৃষ্টি ছিল মহাকাশের তারাদের দিকে । সেখানে খুঁজে বেড়াতেন নক্ষত্রদের পরিচয়, দুই চোখে ছিল শুধু ওপর বিষ্ময় । পৈতৃকভিটে পালাক্কাড়কেই এর কারণ বলে উল্লেখ করেন সুব্রহ্মণ্যম। তাঁর কথায়, পালাক্কাড়ের প্রচণ্ড গরমে মাঝরাতে বা ভোরে ঘুম ভেঙে যেত ছোটবেলায়। তখন তিনি আকাশের তারা দেখতেন। তিনি ছাড়া আর কোনও জনমনিষ্যি জেগে নেই, তাই কারও কাছে জানতেও পারতেন না কোন তারাটার কী নাম। কিন্তু, সেই নাম খোঁজার শেষ হয়নি।
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে অন্নপূর্ণি ভর্তি হন পালাক্কাড়ের ভিক্টোরিয়া কলেজে। সেখান থেকে জ্যোর্তিবিজ্ঞান নিয়ে পাশ করে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স থেকে ডক্টরেট করেন নক্ষত্রপুঞ্জ ও নক্ষত্রের বিবর্তন বিষয়ে। ১৯৯০-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সেখানেই রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেন। পোস্ট ডক্টরেট ফেলো হন ১৯৯৮ সালে। বর্তমানে বেঙ্গালুরুর ওই সংস্থারই প্রফেসর-ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, আমি যখন এই পথে যাত্রা শুরু করি, তখন আমার সামনে কোনও পূর্বজ আদর্শ নারী ছিলেন না। তাঁর মতে, আপনার সঙ্গে যদি সমর্থন থাকে তাহলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু তা না হলে পিছনের সারিতে পড়ে যেতে হয় এবং ঘরকন্নায় মন দিতে হয়। অন্নপূর্ণি বলেন, আমার বাবা-মা আমাকে এই কাজে সাহায্য করেছেন। তাঁরা আমাদের সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, কারণ আমার স্বামীও ব্যস্ত থাকতেন কাজে। তাই আমি সন্তানদের বলে দিয়েছিলাম, আমি তোমাদের জন্য করছি, তোমরাও আমাকে সাহায্য করো। আমি সকলের জন্য সকালের জলখাবার বানাতে পারব না। নিজেরা বানিয়ে খেতে পারো। এটাই ছিল আমাদের জীবনযাত্রা, কেউ কারও উপর নির্ভরশীল নয়।
মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা এই মহাকাশচারী অন্নপূর্ণিকে মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে বিজ্ঞানশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে। আগামী শুক্রবার জাতীয় মহাকাশ দিবসে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে সাম্মানিক পুরস্কার ও মানপত্র তুলে দেওয়া হবে।