আজ বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়খণ্ডের তুলনায় মহারাষ্ট্রে ভোটদানের হার অনেক কম

ঝাড়খণ্ডে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে। ছবি: এএনআই

বুধবার ঝাড়খণ্ডে যেখানে ৩৮টি আসনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ হয়েছে, সেখানে মহারাষ্ট্রে ২৮৮টি আসনে একদফাতেই বিধানসভার ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এদিন সকাল ৭টা থেকেই এই দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের তুলনায় মহারাষ্ট্রে ভোটপ্রদানের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডে ভোট পড়েছে ৬৭.৫৯ শতাংশ। আর এই সময়ের মধ্যে মহারাষ্ট্রে ভোট পড়েছে ৫৮.২২ শতাংশ। যা তুলনামূলকভাবে প্রায় ৯ শতাংশ কম।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলিতে সর্বোচ্চ ভোট পড়ে। এখানে ৬৯.৬৩ শতাংশ ভোটার ইভিএম-এ তাঁদের মতদান করেন। যেখানে মুম্বই সিটিতে সবচেয়ে কম ৪৯.০৭ শতাংশ ভোট পড়ে। থানেতে ভোট পড়েছে ৪৯.৭৬ শতাংশ। আবার মুম্বই শহরতলিতে ভোট পড়েছে ৫১.৭৬ শতাংশ। এছাড়া নাগপুরে ৫৬.০৬ শতাংশ, ঔরঙ্গাবাদে ৬০.৮৩ শতাংশ, পুনেতে ৫৪.০৯ শতাংশ, নাসিকে ৫৯.৮৫ শতাংশ, সাতারায় ৬৪.১৬ শতাংশ, ধুলেতে ৫৯.৭৫ শতাংশ, পালঘরে ৫৯.৩১ শতাংশ, রত্নাগিরিতে ৬০.৩৫ শতাংশ, নান্দেদে ৫৫.৮৮ শতাংশ এবং লাতুরে ৬১.৪৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।

কথায় বলে সকাল হলেই বোঝা যায়, দিনটা কেমন যাবে। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সেই কথাটা যেন প্রযোজ্য। সকাল ১১টা পর্যন্ত এই রাজ্যে যে হারে ভোট পড়ে, তাতে পরিষ্কার হয়ে যায়, এই ভোটে ঝাড়খণ্ডের তুলনায় মহারাষ্ট্রের নাগরিকদের ভোটপ্রদানের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সকাল ১১টার মধ্যেই উল্লেখ্যযোগ্য মার্জিনে ভোট প্রদান করেন ঝাড়খণ্ডের ভোটাররা। এই সময়ের মধ্যে ঝাড়খণ্ডে প্রায় ৩১ শতাংশ পড়ে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে মহারাষ্ট্রে ভোট প্রদানে সেভাবে মানুষেরর সাড়া পাওয়া যায়নি। সেখানে ১১টার মধ্যে ভোটপ্রদান করেন প্রায় ১৮ শতাংশ ভোটার।


উল্লেখ্য, এবার মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোট মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ হলেও বেশ কয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটে। এ রাজ্যের পারলি বিধানসভা আসনের ঘাটনান্দুরে এনসিপি ও এসপি নেতাদের ওপর আক্রমণের পর সেখানকার ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধরা। যার জেরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গ্রামে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

জানা গিয়েছে, এদিন শারদ পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি নেতা মাধব যাদবকে পারলিতে মারধর করা হয়। সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। যেখানে এনসিপি মন্ত্রী ধনঞ্জয় মুন্ডের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলের মনোনীত প্রার্থী রাজেসাহেব দেশমুখ। মাধব যাদবকে মারধরের পর দলের কর্মীরা সেখানে জড়ো হয়ে ঘটনার জেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপরই মাধবের সমর্থকরা গ্রামের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকে ভাঙ্গচুর শুরু করে দেন। বিকল হয়ে পড়ে ইভিএম। এবং কিছুক্ষণের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্রামে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবে পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।

এনসিপি মন্ত্রী ধনঞ্জয় মুন্ডে এই ঘটনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত আছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, সমস্ত দলের প্রার্থীদের জন্য পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন।

এছাড়া দুপুর ১টা ৩৫ নাগাদ পারান্দার রোহকাল তালুকাতে ভোটিং মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। যার ফলে কিছুক্ষণের জন্য ভোটগ্রহণ ব্যাহত হয়। যদিও দুপুর দুটো ২০ মিনিটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। পাশাপাশি, কাপ্রি পাঁচপাখারিতে পুলিশ উদ্ধভ থ্যাকারের নেতৃত্বাধীন শিব সেনা মনোনীত প্রার্থী কেদার দিঘের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে টাকা ও মদ বিলির অভিযোগ আনা হয়েছে। দিঘে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।

এব্যাপারে রাজ্য পরিষদের বিরোধী দলনেতা এবং শিব সেনা নেতা (উদ্ধাবপন্থী) আম্বাদাস দানভে একটি ভিডিও আপলোড করেছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে, শিব সেনা মনোনীত সঞ্জয় শীর্ষট দলের নেতাদের গালিগালাজ করছেন।

প্রসঙ্গত এবার প্রথম দফাতেই ঝাড়খণ্ডে বিকাল ৫ টার মধ্যে রেকর্ড পরিমাণে ভোট পড়েছিল। যা প্রায় ৬৫ শতাংশ। যেখানে ২০১৯ সালে ভোট পড়েছিল ৬৩.৯ শতাংশ। তুলনায় মহারাষ্ট্রের মানুষ গণতন্ত্রের উৎসবে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। এখানে সকাল ১১ টার মধ্যে আহেরিতে ভোট পড়েছে ৩০.০৬ শতাংশ, উড়ানে ২৯.২৬ শতাংশ। তবে অধিকাংশ আসনে উল্লেখযোগ্যভাবে খুব কম ভোট পড়েছে। পাচড়াতে ৮.৫৩ শতাংশ, ডেগলুরে ১০.২৬ শতাংশ, এবং মাধাতে ১১.১২ শতাংশ ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হয়।

আবার বিকেল তিনটে নাগাদ নির্বাচন কমিশনের রিপোর্টে দেখা যায়, মহারাষ্ট্রের ২৮৮টি আসনে ভোট পড়েছে ৪৫.৫৩ শতাংশ। তবে নকশাল অধ্যুষিত গড়চিরোলিতে এই সময়ের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণে ভোট পড়েছে। তিনটে পর্যন্ত এই আসনে ভোট পড়েছে ৬২.৯৯ শতাংশ। এই সময়ের মধ্যে আহমেদনগরে ৪৭.৮৫ শতাংশ, আকোলাতে ৪৪.৪৫ শতাংশ, অমরাবতীতে ৪৫.১৩ শতাংশ, ঔরঙ্গাবাদে ৪৭.০৫ শতাংশ, বিদে ৪৬.১৫ শতাংশ, ভান্ডারায় ৫১.৩২ শতাংশ, বুলধানা ৪৭.৪৮ শতাংশ, চন্দ্রপুরে ৪৯.৮৭ শতাংশ, ধুলে ৪৭.৬২ শতাংশ, গন্ডিতে ৫৩.৮৮ শতাংশ, হিঙ্গলিতে ৪৯.৬৪ শতাংশ, জলগাঁও- ৪০.৬২ শতাংশ, জালনা- ৫০.১৪ শতাংশ, কোলহাপুর- ৫৪.০৬ শতাংশ, লাতুরে- ৪৮.৩৪ শতাংশ, মুম্বই সিটিতে- ৩৯.৩৪ শতাংশ, মুম্বই শহরতলীতে- ৪০.৮৯ শতাংশ, নাগপুরে- ৪৪.৪৫ শতাংশ, নাগপুর- ৪৪.৪৫ শতাংশ, ২৭ শতাংশ। নন্দুরবারে- ৫১.১৬ শতাংশ, নাসিকে- ৪৬.৮৬ শতাংশ, ওসমানাবাদে- ৪৫.৮১ শতাংশ, পালঘরে- ৪৬.৮২ শতাংশ, পারভানিতে- ৪৮.৮৪ শতাংশ, পুনেতে- ৪১.৭০ শতাংশ, রায়গড়ে- ৪৮.১৩ শতাংশ, সাংগরিতে- ৪৫ শতাংশ, সাতারা – ৪৯.৮২ শতাংশ, সিন্ধুদুর্গ- ৫১.০৫ শতাংশ, সোলাপুর -৪৩.৪৯ শতাংশ, থানে – ৩৮.৯৪ শতাংশ, ওয়ার্ধা – ৪৯.৬৮ শতাংশ, ওয়াশিম- ৪৩.৬৭ শতাংশ এবং যবতমাল – ৪.৮ শতাংশ ভোটগ্রহণ সম্ভব হয়।

এই দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পাশাপাশি তিনটি রাজ্যের একাধিক বিধানসভা আসনে উপ নির্বাচনেও ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। কেরল, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশে এই ভোটগ্রহণ করা হয়। শুধু তাই নয়, এদিন উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ বিধানসভা আসনেও ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। দুপুর ৩টে পর্যন্ত এই রাজ্যগুলিতে উল্লেখযোগ্য হারে ভোট পড়েছে। এই সময়ের মধ্যে কেরলের পলক্কড বিধানসভা আসনে ভোট পড়েছে ৫৪.১১ শতাংশ, পাঞ্জাবের চব্বেওয়ালে ৪০.২৫ শতাংশ, গিদ্দেরবহাতে ৬৫.৮০ শতাংশ, দেরা বাবা নানকে ৫২.২০ শতাংশ, বরনলাতে ৪০.০০ শতাংশ।

একই সময়ের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ ২৭.৪৪ শতাংশ, শিশামউতে ৪০.২৯ শতাংশ, মাঝওয়ানে ৪৩.৬৪ শতাংশ, মীরাপুরে ৪৯.০৬ শতাংশ, খইরে ৩৯.৮৬ শতাংশ, ফুলপুরে ৩৬.৫৮ শতাংশ, কুনদরকিতে ৫০.০৩ শতাংশ, করহলে ৪৪.৭০ শতাংশ, কাটেহারিতে ৪৯.২৯ শতাংশ ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। একইভাবে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ বিধানসভা আসনে দুপুর তিনটে পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৪৭ শতাংশ।