গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলা ঘোষণা না করায় ফের একবার কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার গঙ্গাসাগরে গিয়ে এবিষয়ে ফের সরব হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি মুড়িগঙ্গার উপর গঙ্গাসাগর সেতু রাজ্য সরকারই তৈরি করে দেবে বলে ঘোষণা করে দেন মমতা। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই এই ব্রিজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। ব্রিজটি তৈরি করতে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। মমতা এদিন জানিয়ে দেন, তৃণমূল কংগ্রেস কোনও দিন ক্ষমতায় এলে গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি দেবে।
মমতা এদিন দাবি করেছেন, গঙ্গাসাগর মেলাতেও ১ কোটির কাছাকাছি জমায়েত হয়। এই কারণে এই মেলাকে জাতীয় মেলা ঘোষণা করার কথা মমতা বারবার বলেছেন। কিন্ত এখনও পর্যন্ত তা করা হয়নি বলে আফশোস মমতার। তাঁর কথায়, ‘কুম্ভমেলায় হাজার হাজার কোটি টাকা দেওয়ার ফলে সরাসরি ট্রেনে নাম যায়, প্লেনে যাওয়া যায়, গাড়িতে করে যাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের এখানে জল পার করে আসতে হয়। এটা খুব কঠিন।’ এই মেলাকে ঘিরে প্রশাসনকে অনেক পরিশ্রম করতে হয় বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। মেলাকে কেন্দ্র করে রাস্তা, বিদ্যুৎ, আলো, পানীয় জলের ব্যবস্থা, হাসপাতাল, জেটি, হেলিকপ্টার পরিষেবা, হেলিপ্যাড ইত্যাদি ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কেউ কোনও দুর্ঘটনায় প্রয়াত হলে ৫ লক্ষ টাকা বিমারও ব্যবস্থা করেছে সরকার।
গঙ্গাসাগরে ব্রিজ তৈরি হওয়া নিয়েও এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মমতা। তিনি জানান, মানুষ যাতে এখানে সরাসরি গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন তার জন্য ব্রিজটা হওয়া খুবই দরকার। এই নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছিল বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের এক মন্ত্রী তাঁকে ব্রিজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হয়নি।
গঙ্গাসাগর ব্রিজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মমতা জানান, ইতিমধ্যেই ব্রিজের সার্ভে হয়ে ডিপিআর হতে টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। ব্রিজ তৈরি করতে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। সময় লাগবে ২ থেকে ৩ বছর। সেতুটি হবে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার। পাশ দিয়ে তৈরি হবে রাস্তাও। এই ব্রিজটি তৈরি হলে সুন্দরবনের মানুষ উপকৃত হবেন।
গঙ্গাসাগরের মহারাজের উদ্দেশে মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের যেটুকু প্রয়োজন আমরা করে দিয়েছি। কিন্তু সমুদ্র ক্রমেই এগিয়ে আসছে। কখনও কখনও কপিল মুনির আশ্রমের একদম সামনে চলে আসে। আপনারা তো অনেক দান ধ্যান পান। এটা আপনারা উত্তরপ্রদেশের আশ্রমে পাঠান। সেটা ঠিক আছে, আপনাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত সেটা। কিন্তু আমার অনুরোধ, সেই ফান্ড থেকে আপনারা কিছুটা নিয়ে কংক্রিটের কিছু যদি বানিয়ে দেন তাহলে স্থায়ী একটা সমাধান হতে পারে। আমাদের যেটুকু সম্ভব সেটুকু করি। আপনাদের থেকে তো কোনও টাকা আমরা নিই না। বরং আমাদের সাধ্যমতো ড্রেজিং করি, ট্রান্সপোর্ট, হাসপাতালের ক্যাম্প সব পরিষেবাই দিই।’
এদিন গঙ্গাসাগরে গিয়ে ভারত সেবাশ্রম সংঘ ও কপিলমুনির আশ্রমেও যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কপিলমুনির আশ্রমে গিয়ে পুজো দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সহ আরও এককাধিক প্রশাসনিক আধিকারিকরা।