আজ শুরু সংসদের শেষ অধিবেশন, মোদির মন্তব্যের কড়া সমালোচনা বিরোধীদের

নিউ দিল্লি, ৩১ জানুয়ারি: আজ, বুধবার লোকসভা ভোটের আগে সংসদে শুরু হল শেষ অধিবেশন। আগামীকাল অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করবে কেন্দ্র সরকার। ১৭তম লোকসভা ও দ্বিতীয় মোদী সরকারের এটাই শেষ বাজেট অধিবেশন। অধিবেশনের শুরুতে নতুন সংসদ ভবনে স্বাগত ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তাঁর স্বাগত ভাষণের মধ্যে দিয়ে শুরু হল অধিবেশন। অধিবেশন শুরুর আগে রাইসিনা হিল থেকে সংসদ ভবনে প্রবেশের সময় রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। আগামীকাল বাজেট পেশ হওয়ার পর চলবে বাজেট আলোচনা পর্ব। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই অধিবেশন চলবে।

আজ নতুন সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির এটাই প্রথম অভিভাষণ। রাষ্ট্রপতি তাঁর স্বাগত ভাষণে মোদী সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তিনি ভাষণের শুরুতে বলেন, “এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বে সংকটের মধ্যেও ভারতে অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছে। এশিয়াডে শতাধিক মেডেল পেয়েছে ভারত। জি -২০ সম্মেলনে ভারত সফল হয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে রামমন্দির নির্মাণের অপেক্ষায় ছিল মানুষ। অবশেষে রামমন্দির নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। তিল তালাকের বিরুদ্ধে কড়া আইন চালু করেছে সরকার। গত আর্থিক বছরে লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হয়েছে। দিনে দিনে স্টার্টআপের সংখ্যা বাড়ছে। ভারত মাইক্রো অর্থনীতি সুনিশ্চিত করেছে। আদিত্য মিশনে সাফল্য পেয়েছে ভারত। বিশ্ব হেরিটেজ তালিকায় শান্তিনিকেতন-বিশ্বভারতী স্থান পেয়েছে। আরও সুরক্ষিত হতে চলেছে ডিজিটাল লেনদেন। গত দশ বছরে অর্থনীতিতে প্রথম পাঁচে ভারত।”

এদিকে আজ বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন,’কিছু সাংসদের অভ্যাস সরকারের সমালোচনা করা। কয়েকজন সাংসদের অভ্যাস হট্টগোল করা। সংসদে অনেকের আচরণ গণতন্ত্রে আঘাত করেছে। গত দশ বছরে কী করেছেন ভাবুন, কারও মনে নেই। এই অধিবেশনে আত্মসমীক্ষার সুযোগ রয়েছে। অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আশা করছি।’


মোদির এই মন্তব্যের পাল্টা সমালোচনা করেন রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা ও সাংসদরা। বামফ্রন্টের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজন। একই পংক্তিতে দাঁড়িয়ে মোদির তীব্র সমালোচনা করেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে সরকারের সমালোচনা করা ও ভুল ধরিয়ে দেওয়া বিরোধী সাংসদদের কাজ। সেটা যদি সংসদে করা না যায়, তাহলে অধিবেশনের প্রয়োজন কী? প্রধানমন্ত্রী সংসদের গরিমা বুঝতে পারছেন কিনা সংশয় রয়েছে। বিরোধী সাংসদরা কিছু বললেই বহিষ্কার করে দেওয়ার প্রবণতার সমালোচনা করেন প্রদীপবাবু। তিনিও মোদির মন্তব্যের আত্মসমালোচনার কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, এবার বাজেট পেশের আগে প্রতি বছরের মতো অর্থনৈতিক সমীক্ষা করা হবে না। কারণ, যেহেতু এবার অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করা হচ্ছে। সেজন্য নির্বাচনের পর পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করা হবে।

সাধারণত বাজেট পেশের ঠিক একদিন আগে অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। আদতে অর্থনৈতিক সমীক্ষাকে একটি প্রাক-বাজেট নথি হিসেবে ধরা হয়। এটি তৈরি করেন অর্থ মন্ত্রক। অর্থনৈতিক বিষয়ক বিভাগের আধিকারিকরা এই দায়িত্বে থাকেন। প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে এই সমীক্ষা করা হয়। যেদিন বাজেট অধিবেশনের সূচনা হয়, সেদিন সংসদের উভয় কক্ষে এই নথি উপস্থাপন করা হয়। এই নথির মাধ্যমে গত অর্থবর্ষে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায়। কোথায় পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে, কোথায় নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে, সেই সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পায় সরকার। এছাড়া পরবর্তী অর্থবর্ষের ক্ষেত্রে এই অর্থনৈতিক সমীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সমীক্ষা থেকেই নতুন বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সুবিধা হয়।