দীর্ঘ সত্তর বছর পর সংবিধানের ৩৭০ ধারায় ছেদ পড়ল। যার ফলে বিশেষ মর্যাদা হারিয়ে গেল জম্মু কাশ্মীরের। জন্ম নিল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ– এই দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। সােমবার এই ঐতিহাসিক বিল পাশ হয়ে গেল রাজ্যসভায়।
স্বাধীনতার পর সংবিধানের একটি অস্থায়ী ধারায় (টেম্পােরারি প্রভিশন) জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্ত্বশাসন দেওয়া হয়েছিল। সংবিধানের ১১ নম্বর অংশে অস্থায়ী, পরিবর্তনশীল এবং বিশেষ সংস্থানের কথা বলা হয়েছিল। সেই শর্ত মােতাবেকই জম্মু কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদা পেয়েছিল। এই ধারা অনুযায়ী সংবিধানের ধারাগুলি অন্য সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হলেও জম্মু কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা প্রযােজ্য হত না এতদিন।
যেমন ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জম্মু কাশ্মীরে রাজ্যপালের জন্য সদর-এ-রিয়াসত চালু ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বদলে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও পরে এই ব্যবস্থা উঠে যায়। ৩৭০ ধারা অনুযায়ী ভারতের রাষ্ট্রপতিরও ক্ষমতা ছিল না কাশ্মীরের সংবিধানকে খাস্ত করার।
এই ধারা অনুযায়ী জম্মু কাশ্মীরের জাতীয় পতাকা ভারতের জাতীয় পতাকার থেকে আলাদা। এবং সেখানে ভারতের জাতীয় পতাকাকে অপমান করা কোনও অপরাধ নয়। সবচেয়ে বড় কথা, ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু কাশ্মীরের প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যােগাযােগ ছাড়া সেখানকার অন্য কোনও বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার ছিল না কেন্দ্রের। এমনকী আইন প্রণয়নেরও অধিকার ছিল না কেন্দ্র বা সংসদেরও।
আইন প্রণয়ন করতে হলে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সহমত নিতে হত। ভারতীয় সংবিধানের ৩৬০ ধারায় জরুরি অবস্থার সংস্থান থাকলেও, জম্মু কাশ্মীরেরর ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব ছিল না। ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরে ইন্ডিয়ান পেনাল কোড (আইপিসি) কাজ করত না। কাজ করত নবীর পেনাল কোড (আরপিসি)।
সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের বাসিন্দাদের দ্বি নাগরিকত্ব ছিল। একটি ভারতের এক অন্যটি জম্মু-কাশ্মীরের। এবং সেখানে শিখ ও হিন্দুরা সংখ্যালঘু হলেও কোনও সংরক্ষণের সুবিধে পেত না। ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অন্তর্গত ৩৫-এ ধারাও বিলুপ্ত হয়ে গেল।