ধর্ষক নারায়ণ সাই’কে গ্রেফতারের কাহিনি যেন থ্রিলার, নিখুঁত ছক কষেন মহিলা আইপিএস

আশারাম বাপু (File Photo: IANS)

ধর্ষণে অভিযুক্ত আশারাম বাপুর ছেলে নারায়ণ সাইকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, আশ্রমের সেবিকাদের যৌন হেনস্থা, শারীরিক নির্যাতন— একাধিক অভিযােগ নারায়ণ সাইয়ের বিরুদ্ধে। আশারামের আশ্রম থেকে কার্যত বেপাত্তা সাই।

অনেকদিন ধরে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ চষে ফেলেও সাইয়ের টিকিটিরও হদিশ পায়নি পুলিশ। এদিকে গােয়েন্দা সূত্র বলছে, আশ্রমের সেবায়েত থেকে আশারাম-ভক্ত কিছু মানুষজন আড়াল করে রেখেছে নারায়ণ সাইকে। কিন্তু পুলিশ হাল ছাড়তে রাজি নয়। গােটা দেশ খুঁজেও নারায়ণ সাইকে ধরতেই হবে। হাত মেলাল দিল্লি, গুজরাট, পঞ্জাব ও হরিয়ানা পুলিশ। সাইকে ধরতে আসরে নামলেন জাঁদরেল মহিলা আইপিএস শােভা ভুটাডা।

ডিসেম্বরেই গ্রেফতার করা হয় নারায়ণ সাইকে। একবার জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি। এপ্রিলে সাইয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়। সুরাটের আদালত যাবজ্জীবনের সাজা শােনায় সাইকে। সেই সঙ্গে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা। কীভাবে গােপন আস্তানা থেকে আশারাম পুত্রকে খুঁজে বার করে পাকড়াও করা হয়েছিল সেই কাহিনী কিছু কম রােমাঞ্চকর নয়।


লেখক উশিনর মজুমদারের বই ‘গড অব সিন’এ আসারাম ও তার ছেলে নারায়ণ সাইয়ের অপরাধের খতিয়ান আছে বিশদে। নারায়ণ সাইকে ধরতে কীভাবে কোমর বেঁধেছিলেন আইপিএস শােভা ভাটুডা সেটাও লিখেছেন লেখক উশিনর।

‘ঈশ্বরের বার্তাবাহক’ বা ‘উদ্ধারক’— নিজের এই পরিচয়ই দিয়েছিলেন স্বঘােষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপু। ভক্তের সংখ্যা কয়েক হাজার। এমন সাধুর গায়ে ধর্ষকের তকমা লাগে। ইনদওরে নিজের আশ্রমে দুই নাবালিকা বােনকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে। তােলপাড় শুরু হয় দেশজুড়ে। দেশের অন্যান্য জায়গায় আসারামের তৈরি আশ্রম থেকেও একের পর এক যৌন কেলেঙ্কারির খবর সামনে আসে। নাম জড়ায় আসারাম-পুত্র নারায়ণ সাইয়েরও।

আসারামেরই এক ঘনিষ্ঠ শিষ্যই সাক্ষী দেন, ভিওয়ানি আর আহমেদাবাদের তিনটি আশ্রমে সেবিকাদের লাগাতার ধর্ষণ করেছেন সাই। এমনকি সাইয়ের স্ত্রী জানকি দেবী নিজে পুলিশকে বয়ান দেন, আশ্রমের মহিলাদের শারীরিক নির্যাতন করেন তাঁর স্বামী। নিজেরই ঘনিষ্ঠ সহযােগী যমুনার সন্তানের বাবাও নাকি নারায়ণ সাই। একই অভিযােগ এনেছিলেন যমুনার বােন গঙ্গাও।

গঙ্গার অভিযােগ ছিল, জোর করে বছরের পর বছর তাঁকে শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করেছিলেন সাই। তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। আশ্রমের অনেক মহিলাই এই নির্যাতনের শিকার। নাবালিকাদের যৌন হেনস্থা করতেও ছাড়তেন না সাই। রােজ রাতে সাইয়ের ঘরে মহিলা পাঠাতেন আশ্রমের কয়েকজন ভক্ত। যাঁদের মধ্যে সেবিকারাও ছিলেন। সাইয়ের যৌন লালসার প্রতিটা রাত ছিল ভয়ঙ্কর।

আসারাম বাপু ধরা পড়ার পরেই আশ্রম থেকে বেপাত্তা হয়ে যান নারায়ণ সাই। গুজরাট পুলিশ জানিয়েছে, নারায়ণ সাইয়ের ছায়াসঙ্গী ছিলেন আসারামেরই এক ঘনিষ্ঠ ভক্ত হনুমান (কৌশল কুমার ঠাকুর)। পরে দু’জনের সঙ্গে যােগ দেয় সাইযের গাড়ির চালক রমেশ। তদন্তকারীদের কথায়, এই রমেশ ছিল একেবারে গুগল ম্যাপের মতাে। দিল্লি, আহমেদাবাদের রাস্তাঘাট ছিল তার হাতের তালুর মতাে চেনা। তাই নারায়ণ সাইকে ঠিক কোন পথ দিয়ে কোথায় সে নিয়ে যাচ্ছে তার হদিশ পায়নি পুলিশ।