• facebook
  • twitter
Sunday, 24 November, 2024

গ্রেপ্তার দিল্লির ক্যাফেতে শ্যুট আউটের অন্যতম চক্রী ‘লেডি ডন’ অনু ধনখড়

এই 'লেডি ডন'-কে গ্রেপ্তার করা পুলিশের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড হয়ে ওঠে। কারণ, তাকে ধরার পর আরও অনেক অজানা রহস্যের কিনারা করা যাবে।

দিল্লির ক্যাফেতে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ‘লেডি ডন’ অনু ধনখড়। আদতে এই মহিলা দুষ্কৃতী উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বার্গার কিং-এর আউটলেটে আমান জুন নামের ২৬ বছরের যুবককে গুলির ঘটনায় এই মহিলা ডন জড়িত। এজন্য দিল্লি পুলিশের একটি বিশেষ দল শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্ত ওই মহিলা তখন নেপালে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

দুর্ধর্ষ এই পুরুষ গ্যাংস্টারের কথা আমরা অনেক আগেই শুনেছি। কিন্তু তাই বলে একজন মহিলা গ্যাংস্টার? তাও আবার একাধিক খুনের ঘটনায় যুক্ত? এমন ঘটনা সত্যিই খুব কম শোনা যায়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, এই খুন নিছক প্রতিহিংসার বশেই করেছে দুষ্কৃতীরা। ইতিমধ্যেই গ্যাংস্টার হিমাংশু ভাউ এই খুনের দায় স্বীকার করে নিয়েছে। সে এখন পর্তুগালে অবস্থান করছে গোয়েন্দা সূত্রে বলে জানা গিয়েছে।

প্রসঙ্গত এই খুনের ঘটনা কয়েক মাস আগের। দিল্লির রাজৌরি গার্ডেনের ওই ক্যাফের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতেই পুলিশের কাছে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, ‘মহিলা ডন’ অনু ধনখড়ের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় ছিল আমান জুনের। সেজন্য গত জুনে ঘটনার দিন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বার্গার কিং-এ ঢুকে আমান সোজা ওই মহিলার টেবিলের সামনে গিয়ে বসে। তাদের শিকার আমানের জন্যই অপেক্ষারত ছিল অনু। আমানের প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই আচমকা বার্গার কিং-এ প্রবেশ করে এক ব্যক্তি। সে পেপার স্প্রে ছড়িয়ে সবাইকে অপ্রস্তুত করে দেয়। এরপর তার টার্গেট আমান জুনকে গুলি করে। মহিলাটি তখন সুযোগ বুঝে আমানের মোবাইল ফোন ও মানি ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয়।

কিন্তু কেন এই খুনের ঘটনা? আমানের ওপর কীসের এতো রাগ ছিল এই দুষ্কৃতীদের? এবিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে জানা গিয়েছে, এর পিছনে রয়েছে ২০২০ সালের একটি খুনের ঘটনা। হরিয়ানায় শক্তি দাদা নামে একজন ব্যক্তি খুন হন। যার সঙ্গে আমান জড়িত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ চার বছর পর সেই খুনের বদলা নিল হিমাংশু ভাউ-এর গোষ্ঠী। এর আগে হিমাংশু ভাউ-এর টিম হুমকি দিয়ে রেখেছে। এই খুনের ঘটনায় জড়িতদের প্রত্যেককে টার্গেট করে রেখেছে বলে সেই হুমকিতে বলা হয়।

কিন্তু অনু ধনখড় কেন এই খুনের ঘটনায় নিজেকে জড়াল? তদন্তে জানা গিয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে হিমাংশুর দেওয়া প্রলোভন। অনুকে এই খুনের বরাত দিয়ে জানায়, এই খুন সফল হলে তাকে আমেরিকায় সুখে থাকার সমস্ত ব্যবস্থা করে দেবে। সেই প্রলোভনে পা দিয়েই আমানকে খুনে সহযোগিতা করে অনু। খুনের পর গত কয়েকমাস ধরে গা ঢাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সমস্ত আর্থিক সাহায্য করে হিমাংশু। তবে অনু শুধুমাত্র সুখের সন্ধানে আমান খুনের সঙ্গে জড়িত, এমন নয়। তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক অপরাধের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এমনকি এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মাটুরাম হালওয়াইতে গুলি চালানোর ঘটনায় অনুর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেজন্য এই ‘লেডি ডন’-কে গ্রেপ্তার করা পুলিশের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড হয়ে ওঠে। কারণ, তাকে ধরার পর আরও অনেক অজানা রহস্যের কিনারা করা যাবে।

এদিকে শুক্রবার ধরা পড়ার পর জেরায় অনু স্বীকার করে নিয়েছে, আমানকে খুনের পর সে মুখার্জি নগরে নিজের ভাড়া বাড়িতে ফিরে যায়। সেখান থেকে সে তল্পিতল্পা গুটিয়ে প্রথমে চন্ডিগড়, সেখান থেকে অমৃতসর-কাটরার বাস ধরে কাটরা পৌঁছয়। সেখানে একটি গেস্ট হাউসে বেশ কয়েকদিন কাটানোর পর ট্রেনে জলন্ধর চলে আসে। তারপর ফের চন্ডিগড়, চন্ডিগড় থেকে হরিদ্বার। হরিদ্বারে তিন-চারদিন কাটানোর পর রাজস্থানের কোটায় টানা তিন-চার মাস গা ঢাকা দেয়। কিন্তু পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এভাবে বেশিদিন লুকিয়ে থাকা কঠিন বলে আঁচ করতে পারে। ফলে শেষমেশ বিদেশে পালানোর ছক করে ‘লেডি ডন’ অনু। এতদিন সবই পরিকল্পনা সাজানো হয় হিমাংশুর সঙ্গে পরামর্শ করে এবং তাঁর নির্দেশে। ২২ অক্টোবর হিমাংশু অনুকে ফোন করে। নির্দেশ দেয় আমেরিকা চলে যাওয়ার জন্য। কারণ পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। তদন্তও অনেক শ্লথ হয়ে গিয়েছে। আমেরিকা পালানোর জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। সেজন্য নেপালকে করিডোর হিসেবে ব্যবহারের প্ল্যান করা হয়। সেই মতো নেপালে পালাতে গিয়ে লখিমপুর খেরির কাছে দিল্লি পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের হাতে ধরা পড়ে যায় অনু ধনখড়।