জওহরলাল নেহরুর পর মনমোহন সিংই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০০৪ সল্ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত এই ১০ বছর তিনি ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। অর্থনীতির শিক্ষক ড. মনমোহন সিং রাজনীতিতে পরিচিতি লাভ করেন ১৯৯১ সালে। সেই বছর তিনি ভারতের অর্থমন্ত্রী হন। সে সময় ভারতে অর্থনীতির অবস্থা খুব ভালো ছিল, তা বলা যাবে না। তাঁর এই মন্ত্রী হওয়াটা হঠাৎই, বলা যায়। তার আগে একসময় তিনি ছিলেন সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। এছাড়াও তিনি ছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর। তাঁর অর্থমন্ত্রী থাকার সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নরসিমহা রাও। তিনিই প্রথম ভারতের অর্থনীতির উদারীকরণের পরিকল্পনা করেছিলেন এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং সেই পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত করেছিলেন।
মনমোহন সিংয়ের জন্ম ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত পাঞ্জাব প্রদেশের ছোটো একটি গ্রামে। কিন্তু সেই গ্রাম থেকে উঠে আসা মনমোহন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরে ডি ফিল পান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি সারা বিশ্বে সম্মানিত হয়েছেন। তিনি খুব ভালো করেই জানতেন যে তিনি রাজনীতিবিদ নন। কারণ একজন রাজনীতিবিদ হতে গেলে নির্বাচনে জিতে আসতে হয়। ১৯৯৯ সালে তিনি লোকসভা নির্বাচনে হেরে যান। পরে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন অসম থেকে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাঁর প্রথম ভাষণে তিনি ভিক্টর হুগোর বিখ্যাত কথা উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘একটি আইডিয়ার আসার সময় হয়ে গেলে পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে রুখতে পারে না।’ সেটাই ছিল ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষী অর্থনৈতিক সংস্কারের ইঙ্গিত। মনে রাখা দরকার, সেই পরিকল্পনা অনুসারেই ভারত বিশ্ব অর্থনীতির অঙ্গনে এসে দাঁড়ায় আর ধীরে ধীরে অর্থনীতির ক্ষেত্রেও একটি শক্তি হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে সমর্থ হয়।