সােমবার নবান্নে সাংবদিক বৈঠকে মিথ্যাচারের অভিযােগে বিজেপিকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, মিথ্যে তথ্য দেওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে বেমানান। ক্রস চেক না করে কোনও কথা বলা উচিত নয়। তৃণমূলকে আক্রমণ করে অমিতবাবু যেসব অভিযােগ করেছেন বাংলা সফরে এসে, সেগুলি যে মিথ্যে তা আজ প্রমাণ সহ দাখিল করবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
বিজেপি দলটাকে চিটিংবাজ, ‘গার্বেজ অফ লাইস’ বলে মন্তব্য করেন মমতা। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বিজেপির জ্ঞানকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, রবীন্দ্রনাথ নাকি জোড়াসাঁকোতে জন্মাননি। মমতা হুংকার দিয়ে বলেন, রবীন্দ্রনাথ নিয়ে অবমাননা মানব না। জাতীয় সংগীত নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন তােলেন, রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন, তবু গান বদলাতে দেব না।
প্রসঙ্গত, অমিতবাবু বােলপুরের সভায় রবীন্দ্রনাথের একাত্মবাদের কথা বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী সােমবার নবান্নে বলেন, অমিত শাহ একাত্মবাদ, বহুত্ববাদ, জাতীয়তাবাদ নিয়ে যা যা বলেছেন, তা জানতে গবেষণা করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কিছু বলার আগে পড়াশুনাে করুন। এভাবেই শাহকে কটাক্ষ করেন মমতা। অমিত শাহ সফরে এসে পশ্চিমবঙ্গকে ‘সােনার বাংলা’ করার কথা বলেছেন। সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উনি সােনা, রুপাে, তামা কাকে বলে জানেন? দাঙ্গা কাকে বলে নিশ্চয় ওর জানা আছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাগরিক আইন প্রসঙ্গে মন্তব্য নিয়ে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এ দেশের প্রতিটি মানুষ দেশের নাগরিক। ১৯৭১ সালের আগে যারা এসেছেন, মতুয়ারাও দেশের নাগরিক। বাংলার প্রতিটি মানুষ দেশের নাগরিক। বিজেপি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে না।
বাংলা সফরে এসে অমিত শাহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প রাজ্যে লাণ্ড না করার জন্য একহাত নিয়েছিলেন মমতা সরকারকে। এমনকী কৃষকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাইপাের জন্মদিনের উপহার হিসাবে গ্রহণ করে এমন খোঁচাও দিয়েছিলেন।
মমতা এদিন সেই প্রসঙ্গে বলেন কৃষকদের জন্য আমাদের যে প্রকল্প রয়েছে তা অনেক বেশি কার্যকর। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে আমরা একশ শতাংশ টাকা দিই। যেখানে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অনেক কম টাকা পাওয়া যায়। মমতা এদিন অভিযােগ করেন ওরা বিভিন্ন কাজ রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে করতে চাইছে। কৃষকদের জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা রাজ্য সরকারকে পাঠাতে বলেছিলেন, যে টাকা বিতরণের জন্য তালিকা তৈরি করবে রাজ্য সরকার।
এই নিয়ে সােমবারই একটি চিঠি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তােমারকে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের বৈঠকে সেই চিঠির কিছু অংশ পড়ে শােনান মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা এদিন বলেন, স্বাস্থ্যের জন্য কৃষির জন্য রাজ্য যথেষ্ট কাজ করে। এরপর কটাক্ষ করে বলেন, সব কাজ করব আমরা , আর আমাদের চামড়া গােটাবে তােমরা। আইপিএসদের ডেপুটেশনে বদলি নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন এক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার আইন প্রয়ােগ হবে কী ভাবে? এই রাজ্যে কি জরুরি অবস্থা চলছে?
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন শাহ’র সফরকে মােটেও গুরুত্ব দিতে নারাজ তিনি আগামী ২৮ ও ২৯ তারিখ বােলপুরে জনসভা করতে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাহের সভার পাল্টা সভা করে রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে মােকাবিলা করবেন মমতা।