ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখতে কর্ণাটকে অমিত, কেরলে রাহুল

কর্ণাটকে পৌঁছালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। (Photo: IANS)

মরশুমি বর্ষায় জেরবার তামাম ভারত- টানা কয়েকদিন ধরে চলা ভারি বর্ষণে কয়েকটি রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা বেশিরভাগ রাজ্যে ভয়ানক চেহারা নিয়েছে। কয়েক লাখ মানুষকে বন্যা কবলিত এলাকা থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জলাধার ও নদীর জলস্তর বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় উদ্ধার চালানাের লক্ষ্যে ২০০ উদ্ধারকারী টিমকে মােতায়েন করা হয়েছে।

কর্ণাটকের কেলাগাভি জেলার বন্যা পরিস্থিতি আকাশ পথে পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা বলেন, রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এক লাখ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে কর্ণাটক, কেরল ও মহারাষ্ট্রে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কর্ণাটকে শুধু ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কেরল প্রশাসনের তরফে জানানাে হয়েছে, বন্যার কারণে দু’দিন কোচি বিমানবন্দর বন্ধ থাকার পর রবিবার দুপুর থেকে ফের বিমান পরিষেবা চালু হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিও ওয়ানাড়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে পরিদর্শন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিকে দুদিন আগে আর্জি করেছেন, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের ত্রাণ সরবরাহনিশ্চিত করতে ওয়ানাড়, কানুর, কাসারগােড়ে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে কড়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দুটি জেলায় গেরুয়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে।


কেরলে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১.৬৬ লাখ মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মালাপ্পুরম ও ওয়ানাড়ের কয়েকটি জায়গায় ধস নামার কারণে প্রচুর জায়গায় মানুষ আটকে রয়েছেন।

পিনারাই বিজয়ন প্রশাসনের তরফে সেনাবাহিনীকে উদ্ধারকারী টিম গঠন করে উদ্ধার কাজ চালাতে ও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া মানুষদের হেলিকপ্টারে করে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। লাগাতার ভারি বর্ষণে কেরলে বন্যা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। প্রশাসনের তরফে জানানাে হয়েছে, ভারিবর্ষণের কারণে ধস নেমে ও জলে ডুবে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক লাখ মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কোকিকোড় ও মালাধুরমে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওয়ানাড়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের মােট ৯৮৮টি ত্রাণ শিবিরে ১,০৭,৬৯৯ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সবথেকে ক্ষতির পরিমাণ বেশি ওয়ানাড়ে। সেখান থেকে ২৪,৯৯০ মানুষকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওয়ানাড়ের মহকুমা শাসক এন এস কে উমেশ জানিয়েছেন, ১০০০ মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর। ১৫ জন নিখোঁজ। সেনা ও বিপর্যয় মােকাবিলা বাহিনী বন্যা কবলিত এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতিকে ‘ভঙ্কর বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করে বলেন, ৪৫ বছরে বন্যা পরিস্থিতি এত ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেনি। রাজ্য প্রশাসনের তরফে কেন্দ্রের থেকে ৩০০০ কোটি টাকা ত্রাণ সাহায্য চাওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী ও জাতীয় বিপর্যয় মােকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।

পশ্চিম মহারাষ্ট্রের কোলাপুর ও সাঙ্গলি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যার জল ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। প্রশাসনের তরফে জানানাে হয়েছে, বৃষ্টি হয়নি। পুরাে জল নামতে আরও দু’তিন দিন সময় লাগবে। তবে মােটের ওপর পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার করে তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। ত্রাণশিবিরগুলােয় ভিড় চোঁখে পড়ার মতাে, প্রশাসনের তরফে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

কোলাপুরের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। জলমগ্ন এলাকাগুলাে থেকে জল নামতে শুরু করেছে। কোলাপুর কন্যার জলস্তরের সীমা ৫২ ফুট, বিপদসীমার (৪৭ ফুট) ওপর দিয়ে বইছে। ন্যার সময় জলস্তর ৫৭ ফুট পর্যন্ত উঠে গেছিল। পুরাে জল নামতে আরও কয়েকটা দিন লাগবে।

তিনি বলেন, ‘শিরােল ও কুরুনওয়াড় তেহশিল থেকে বন্যা দুর্গতদের সরানাের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে সাঙ্গলী জেলাতেও একই চিত্র। জলমগ্ন এলাকাগুলাে থেকে জল নামতে শুরু করেছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের তরফে জানানাে হয়েছে, জল নামছে। বন্যার জলস্তর ৫৬.৭ ফুটে দাড়িয়ে রয়েছে। পালুস তেহসিলের ব্রহ্মানাল গ্রামের নিকটবর্তী নদীতে ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে একটি মেয়ে সহ তিনটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ন’জন ডুবে গেছে। বাকিরা এখনও নিখোঁজ। সাঙ্গলী জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১২।

কোলাপুর ও সাঙ্গলী জেলায় ১১০ জন নৌসেনা ২৬টি নৌকা নিয়ে উদ্ধার চালাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানাে হয়েছে, বন্যার জল না নেমে যাওয়া পর্যন্ত নৌবাহিনী মােতায়েন থাকবে। নৌবাহিনীর ১৫টি টিমকে ওখানে পাঠানাে হচ্ছে। দ্রুত উদ্ধার চালানাের লক্ষ্যে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানাে হচ্ছে।