মমতার উপর চাপ বাড়াতে রাজ্যে আসছেন মন্ত্রী অমিত

অমিত শাহ (Photo: IANS)

এর আগে বেশ কয়েকবার রাজ্যে এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। সেই তিনি ফের রাজ্যে আসছে তবে এবার আর শুধু বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হিসাবে নন, আসছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে।

চলতি মাসের শেষের দিকে অমিত শাহের এ রাজ্যে আসার সম্ভাবনা প্রবল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা যেগুলি এ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত সেই সব জায়গায় তিনি যেতে পারেন বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। লুক ইস্ট নীতির অঙ্গ হিসাবে পশ্চিম বাংলার পাশাপাশি অসমেও তাঁর যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে অমিত শাহের বাংলা সফর নিয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

ইতিমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকার আইনশৃঙ্খলা ও অনুপ্রবেশ জনিত সমস্যা যে সব রাজ্যে রয়েছে সেখানকার রাজ্যপালদের রিপাের্ট আগেই পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। বাংলার সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অনুপ্রবেশ সমস্যা কোথায় কেমন তার শুধু সরকারি রিপােটই নয়, আরএসএসের পক্ষ থেকেও এই নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিভিন্নবার সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে আরএসএসের শীর্ষ নেতাদের।


রাজনৈতিক ফায়দা তােলার জন্য এই অনুপ্রবেশ রুখতে বাংলার সরকার আগ্রহী নয় এমনই অভিযােগ বারবার শােনা গিয়েছে লােকসভা নির্বাচনের প্রচারে আসা বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মন্তব্যে। খোদ অমিত শাহ বাংলায় এনআরসির চালুর দাবিতে সরব হয়েছিলেন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ লােকসভা কেন্দ্র বিজেপির দখলে গিয়েছে। বসিরহাটে অবশ্য বিজেপি ভাল ফল করতে পারেনি। বাংলায় বিজেপির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা বাংলায় নিয়মিত ভাবে আসবেন এমনটাই খবর।

শুধু বাংলার আইনশৃঙ্খলার সমস্যাই নয়, কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে সামনে রেখেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে তৃণমূল কংগ্রেসের রক্তচাপ বাড়াবে এমনটাই জানা যাচ্ছে।

একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প যাতে রাজ্য সরকার বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নেয় তার জন্য কেন্দ্রের থেকে চাপ সৃষ্টি করা। সেই সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসে ভাঙন ধরিয়ে বিজেপির শ্রীবৃদ্ধি ঘটানাে এই দুই রণকৌশলকে সামনে রেখে দ্রুত বিজেপি এ রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড়সড় রদবদল ঘটানাের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে এমনটাই কৌশল রয়েছে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের। সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে শিল্পায়নের প্রকৃত অবস্থাটা কি তাও তুলে ধরার জন্য রীতিমতাে এ রাজ্যকে ঘিরে একটি রিপাের্ট তৈরি করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনের প্রকৃত পক্ষে এ রাজ্যে বিনিয়ােগ কত এবং তার বাস্তবায়ন আদৌ কতদুর হয়েছে তা জনসমক্ষে তুলে ধরে শিক্ষিত বেকারদের মন পাওয়ার জন্য বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা বাংলায় ঘনঘন আসবেন এমনটাই জানা গিয়েছে।

আগামী ১৭ জুন লােকসভার অধিবেশন বসছে। রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হবে ২০ জুন। সংসদের দুই কক্ষে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ভাষণ দেবেন বৃহস্পতিবার বেলা এগারােটায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রত্যেক রাজ্যের জন্য আলাদা আলাদা কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। জম্মু কাশ্মীরের সমস্যা, বাংলা ও অসমের সমস্যা এক নয়। তাই স্বাভাবিকভাবে উপত্যাকায় সন্ত্রাস রােধ করাটা যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ ঠিক একই ভাবে অনুপ্রবেশ রােধ করাটাও চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহন করছে কেন্দ্র।

সম্প্রতি একটি রিপাের্ট সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে বাংলার সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অনুপ্রবেশ বাড়ছে। বীরভূম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, এই সব জেলায় জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটছে। মুর্শিদাবাদ জেলায় রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। কোচবিহার জেলা সীমান্তবর্তী হওয়া সত্ত্বেও এই জেলায় জনসংখ্যা সে হারে বৃদ্ধি হয়নি। কারণ এর ভৌগলিক অবস্থানের জন্য। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি বসবাস করেন।

কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে অনুপ্রবেশ রোধ করতে রাজ্যসরকারগুলি যথাযথ ভূমিকা পালন করবে। এরফলে দেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধি যেমন কমবে তেমনি ভাবে দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তাও অনেকটা সুনিশ্চিত হবে। রাজনাথ সিং কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন অসমের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমানা এলাকায় নজরদারি বাড়ানাের উপর জোর দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে সীমানা এলাকায় বেড়া দেওয়ার কাজও শুরু করেছিলেন। অসমে ৬১ কিমি এলাকা বেড়া দেওয়ার কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন রাজনাথ সিং নিজেই। এ রাজ্যের মধ্যেও সীমানা এলাকা বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করার জন্য রাজ্য সরকারকে জানিয়েছিল কেন্দ্র। সেই কাজে অগ্রগতি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখাও অমিত শাহের লক্ষ্য।