২৫ জুলাই – নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গায় নিজেদের দেশের নাগরিককে ভ্রমণ না করার জন্য সতর্ক করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবার সেই তালিকায় জোড়া হল ভারতের আরও বেশ কয়েকটি জায়গা। ভারত ভ্রমণ প্রসঙ্গে নাগরিকদের জন্য সংশোধিত ভ্রমণ নির্দেশিকা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওই এলাকাগুলিতে নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে বলে দাবি হোয়াইট হাউজের। তাতে ভারতের ওই জায়গাগুলিতে ভ্রমণ না করার জন্য নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মার্কিন এই নির্দেশিকার ফলে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে ভারত।
আমেরিকার বিদেশ দফতর থেকে জারি করা ‘ভারত ভ্রমণ সংক্রান্ত সংশোধিত পরামর্শ’ শীর্ষক ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অপরাধ এবং সন্ত্রাসবাদ বাড়ার কারণে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেড়েছে। কিছু এলাকায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সংশোধিত এই নির্দেশিকা অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাগরিকদের ভারতের যে এলাকাগুলিতে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে সেগুলি হল- মণিপুর, জম্মু ও কাশ্মীর, ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এবং দেশের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ, মূলত যেখানে মাওবাদীরা সক্রিয়, সেই সব এলাকায় ভ্রমণ না করার জন্য নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। এছাড়া, মণিপুরও উত্তপ্ত রয়েছে দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অপরাধ এবং সন্ত্রাসবাদের কারণে ভারতে সতর্কতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাধারণত ভ্রমণ সংক্রান্ত ঝুঁকির নিরিখে ভারতকে লেবেল ২ তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে জম্মু ও কাশ্মীর, ভারত-পাক সীমান্ত, মণিপুর এবং মধ্য ও পূর্ব ভারতের কিছু অংশকে লেভেল ৪ তালিকায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর, মণিপুরের মতো দুই রাজ্য রয়েছে। তবে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও পূর্ব লাদাখ এবং তার রাজধানী লেহ্-তে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, ধর্ষণ ভারতে ক্রমবর্ধমান অপরাধগুলির মধ্যে একটি। যৌন নির্যাতনের মতো অপরাধ পর্যটন কেন্দ্র এবং অন্যান্য স্থানে ঘটেছে। এছাড়াও সন্ত্রাসবাদীরা কোনওরকম সতর্কতা ছাড়াই আক্রমণ করতে পারে। তারা বাজার এলাকা , শপিং মল এবং সরকারি সুবিধাযুক্ত জায়গাগুলিকে নিশানা করছে।
অন্যদিকে, পূর্ব মহারাষ্ট্র এবং উত্তর তেলেঙ্গানা থেকে পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় মার্কিন সরকারি কর্মীদের ভ্রমণের জন্য বিশেষ অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে। কারণ মাওবাদী বা নকশালপন্থীরা ভারতের এই এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বলে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। এর মধ্যে যে রাজ্যগুলি পড়ে সেগুলি হল- তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার সীমান্তবর্তী ছত্তিশগড় এবং ঝাড়খণ্ডের গ্রামীণ বিভিন্ন এলাকা। অন্যদিকে, উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিকে লেভেল ৩ তালিকায় রাখা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- অসম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, সিকিম এবং ত্রিপুরা।
হোয়াইট হাউজের এই নির্দেশিকায় মলিন হয়েছে দিল্লির ভাবমূর্তি। এমনিতে জঙ্গি ক্রিয়াকলাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে সতর্কতা নতুন নয়। কিন্তু গত কয়েক মাসে দেশের একাধিক শহরে বিদেশি পর্যটকদের হেনস্থা হওয়া, এমনকি বিদেশিনীদের ধর্ষিত হওয়ার খবরও সামনে এসেছে। এই কারণেই এবার অতি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করছে আমেরিকা। বাইডেন সরকারের এই সতর্কবার্তায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে এ দেশের পর্যটন শিল্পের একাংশ। তারা জানাচ্ছে, অতীতে এমন সতর্কবার্তার জেরে ভারত সফরের আগে বিদেশি পর্যটকদের অনেকেই সংশয় থেকে বাড়তি খোঁজখবর করেছেন। নির্ধারিত ভ্রমণসূচি বাতিল করেছেন যা এ দেশের পর্যটন ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে।