• facebook
  • twitter
Saturday, 26 April, 2025

ধর্ষণের মামলায় নির্যাতিতাকে দায়ী করল এলাহাবাদ হাইকোর্ট

অভিযুক্তর জামিনের আবেদন মঞ্জুর

প্রতীকী চিত্র

ধর্ষণের একটি মামলায় অভিযোগকারী নির্যাতিতাকে ধর্ষণের জন্য দায়ী করল এলাহাবাদ হাই কোর্ট। অভিযোগকারী নির্যাতিতা নিজেই নিজের সমস্যা ডেকে এনেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। বিচারপতি বলেন, যে ধর্ষণের অভিযোগ তিনি করছেন, তার দায় তাঁরই।এই মামলায় অভিযুক্তের জামিনও মঞ্জুর করেছে আদালত। বিচারপতির বক্তব্য, তরুণের সঙ্গে প্রথম আলাপেই তরুণী একই গাড়িতে উঠেছিলেন। যৌন আকাঙ্ক্ষার কারণেই তিনি তরুণের প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জয়কুমার সিংহের বেঞ্চ এই রায় দেয়।
ধর্ষণের মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিযুক্ত। বিচারপতি সঞ্জয়কুমার সিংহের বেঞ্চ বলেছে, ‘‘নির্যাতিতার অভিযোগকে যদি সত্য বলে মেনে নেওয়া হয়, তবে এটিও বলা যেতে পারে পারে যে, তিনি নিজেই নিজের বিপদকে ডেকে এনেছিলেন। ফলে এই ঘটনার জন্য দায়ী তিনিই।

ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। নির্যাতিতা তরুণী উত্তরপ্রদেশের নয়ডার এক নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তিনজন বান্ধবীর সঙ্গে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দিল্লির হাউজ খাস এলাকার একটি পানশালায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে পূর্বপরিচিত কয়েক জন পুরুষের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। তরুণীর দাবি, পানশালায় মত্ত অবস্থায় তিনি রাত ৩টে পর্যন্ত ছিলেন। সিসিটিভির ফুটেজ থেকেও পুলিশ জানতে পারে তারা সেখানে ভোর তিনটে পর্যন্ত ছিল। অভিযোগ, সেখানে ওই পুরুষদের মধ্যে এক জন তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। তরুণী তাঁকে ধর্ষণের অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। তরুণীর মেডিকেল টেস্ট করা হলে সঙ্গমের প্রমাণ পান চিকিৎসকেরা।

আইনের খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এর তথ্য অনুসারে, তরুণীর দাবি, ওই ব্যক্তি তাঁকে নিজের সঙ্গে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে শুরু করেন। একাধিকবার অনুরোধ করায় তিনি বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বাড়িতে যেতে রাজি হন। তাঁর দাবি, পানশালা থেকে ফেরার পথে অভিযুক্ত তাঁকে বারবার খারাপভাবে স্পর্শ করেন। প্রথমে নিজের বাড়িতে যাওয়ার কথা বললেও,  সেখানে যাওয়ার বদলে গুরুগ্রামে এক আত্মীয়ের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান ওই ব্যক্তি। তরুণীর অভিযোগ, সেখানে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন ওই ব্যক্তি। ঘটনার পরে নয়ডার একটি থানায় নির্যাতিতা অভিযোগ জানান। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অভিযুক্তর দাবি, তরুণী সেই সময় একা থাকার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না। অভিযোগকারী নিজেই তাঁর বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নিতে রাজি হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত। তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন। অভিযুক্তর দাবি,  ধর্ষণ নয়, তরুণীর সম্মতিতেই তাঁরা ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন।

আদালত জানিয়েছে, অভিযোগকারী তরুণী স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়া। পুলিশকে তিনি যে বয়ান দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট যে তিনি ‘তাঁর কাজের নৈতিকতা এবং তাৎপর্য’ বুঝতে যথেষ্ট সক্ষম। এই মামলার ক্ষেত্রে অভিযোগের প্রকৃতি, প্রমাণ এবং অন্য সব দিক বিবেচনা করে অভিযুক্ত জামিন পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করছে আদালত। প্রসঙ্গত, অভিযুক্তকে নিম্ন আদালত জামিন না দেওয়ায় তিনি এলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। 

এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি রায়ে বলেছেন, মেডিক্যাল রিপোটে সঙ্গমের কথা বলা হলেও জোর জবরদস্তি কিছু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা উল্লেখ করেননি। বিচারপতির মনে করেন, মেডিক্যাল রিপোর্ট এবং তরুণীর বয়ান থেকে অভিযুক্তর বক্তব্য বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। তিনি অভিযুক্তের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। 

বিচারপতির এই রায়কে ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, রায়টি বিতর্কিত।তরুণী ওই ব্যক্তির সঙ্গে এক গাড়িতে গিয়েছিলেন বলেই ধরে নেওয়া যায় না তাঁর যৌনতায় সম্মতি ছিল। পুলিশের তদন্তেও যথেষ্ট ফাঁক ছিল বলে অনেকে মনে করছেন।