সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তরিত মেডিক্যালে ভর্তি দুর্নীতির সব মামলা

কলকাতা, ২৯ জানুয়ারি: মেডিক্যালে ভর্তির দুর্নীতি মামলা নিয়ে হাই কোর্টের দুই বিচারপতির দ্বন্দ্বের মামলা সুপ্রিম কোর্টে গড়িয়েছে কয়েকদিন আগেই। গত শনিবার এই মামলায় দুই বিচারপতির নির্দেশ স্থগিত করে দেয়। এবার এই দুর্নীতির সমস্ত মামলাও সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তরিত হয়ে গেল। আজ সোমবার দেশের শীর্ষ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিল। ফলে মেডিক্যালে ভর্তি দুর্নীতি সংক্রান্ত সব মামলার শুনানি এবার সুপ্রিম কোর্টেই হবে। এই মামলাগুলির পরবর্তী শুনানির আগে আদালতে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছে। মামলার সব পক্ষকেই আদালতে এই হলফনামা জমা দিতে হবে। আজ বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে।

প্রসঙ্গত রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তিতে ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র জমা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চে মামলা ওঠে। সেই মামলার শুনানিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশকে স্থগিত করে দেয় বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। এরপর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও সৌমেন সেনের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, নির্দেশের কপি না দেখে এই হস্তক্ষেপ বিচার ব্যবস্থার পরিপন্থী। তখন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের কাছে অভিযোগ করেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলাটিতে দুই বিচারপতির নির্দেশেই স্হগিতাদেশ দেয়। আজ এই দুর্নীতি সংক্রান্ত সব কটি মামলা সুপ্রিম কোর্ট নিজের জিম্মায় নিয়ে নিল।

এদিকে সিঙ্গল বেঞ্চের বিরুদ্ধে রাজ্যের অভিযোগ ও বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের লিখিত অভিযোগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে ৩ সপ্তাহ পর। রাজ্য সরকারও আজ সিঙ্গল বেঞ্চের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করেছে। তবে আদালতের বিচারপতিদের সকল শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অভিযোগের সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমকে নিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবিষয়ে মন্তব্য করেন, “সিঙ্গল এবং ডিভিশন বেঞ্চ নিয়ে যা হচ্ছে তা ঠিক নয়। আমরা সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। এমন কিছু করা হবে না যাতে কলকাতা হাই কোর্টের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। কোন বেঞ্চে কোন মামলা যাবে, তা ঠিক করবেন হাই কোর্টের প্রধান বিচাপতি।”


উল্লেখ্য, ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে সংরক্ষিত আসনে অসংরক্ষিত পড়ুয়া ভর্তির অভিযোগ করেন এক ছাত্রী। তিনি কলকাতা হাইকোর্টে এই বিষয়ে মামলা দায়ের করেন। এরপর প্রথম পর্যায়ে এই মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়া হয়। কিন্তু গত ২৪ জানুয়ারি এই মামলার শুনানিতে সিআইডির ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর তিনি মামলাটির সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সরকার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের মৌখিক আবেদনের সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। সে কথা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে জানান রাজ্যের আইনজীবী। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের আইনজীবির এই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি রাজ্যের আইনজীবীকে মামলার লাইভ স্ট্রিমিং অথবা স্থগিতাদেশের কপি দেখাতে বলেন। কিন্তু রাজ্যের আইনজীবী ডিভিশন বেঞ্চের লিখিত স্থগিতাদেশের কোনও কপি দেখাতে পারেননি। এরপরই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কোনও মামলার কপি দেখাতে না পারলে কি তা গ্রহণযোগ্য? এরপরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সমস্ত নথি সহ সিবিআইকে তৎক্ষণাৎ এফআইআর করার নির্দেশ দেন।