বিজেপির অপারেশন লোটাসের বড় সফল্য দেখা দিতে চলেছে উত্তরপ্রদেশে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর জয় নিশ্চিত করার পর রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী ঐক্যে ভাঙন ধরাতে তৎপর বিজেপি।
পাশাপাশি অবিজেপি দলগুলিতেও ফাটল ধরালে চাইছে গেরুয়া শিবির। সেইতালিকায় সবার আগে নাম উত্তরপ্রদেশের ।
রাষ্ট্রপতি ভোটে বিজেপি তথা এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী গতকাল ছিলেন লখনউয়ে। দুপুরে তিনি বিধানসভা ভবনে বিজেপি ও সহযোগী দলগুলির বিধায়ক ও সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আগাগোড়া তাঁর পাশে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ।
দ্রৌপদীর সম্মানে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাংলোয় নৈশ ভোজের ব্যবস্থা করেছিলেন যোগী । দেখা যায়, সেখানে বিজেপি ও তাদের সহযোগী দলের নেতাদের পাশে হাজির সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদবেব ভাই শিবপাল যাদব।
অর্থাৎ সম্পর্কে তিনি সমাজবাদী পার্টির বর্তমান সভাপতি তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবম বর্তমান বিরোধী দলনেতা অখিলেশ যাদবের কাকা।
নৈশভোজে হাজির ছিলেন সমাজবাদী পার্টির শরিক সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির সভাপতি ওপি রাজভর। শিবপাল এবং রাজভর সকলকে সাক্ষী রেখে দ্রৌপদীকে কথা দেন তাঁরা তাঁকেই ভোট দেবেন।
ভাইপো অখিলেশের সঙ্গে দলের দখল নিয়ে বিবাদের জেরেই বেরিয়ে গিয়ে নিজে পার্টি গড়েছেন শিবপাল। মাঝে কয়েক বছর ভাইপোর সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকার পর গত মার্চে বিধানসভা ভোটের আগে শিবপাল তাঁর প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টি যোগ দেয় সমাজবাদী পার্টির জোটে। শিবপাল ঘোষণা করেন, এখন থেকে অখিলেশই আমার নেতা।
কিন্তু বিধানসভা ভোট মিটতেই কাকার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেন অখিলেশ। ভোটে শিবপাল একাই মাত্র জিতেছেন দলের টিকিটে।
কিন্তু অখিলেশ তাঁরে পরিষদীয় দলের বৈঠকে আন্ত্রমন্ত্রণ না জানানোয় শিবপাল রেগেমেগে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করে বলে বসেন, যোগীই উত্তরপ্রদেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রী।
দাদা মুলায়ম এবং ভাইপো অখিলেশকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কোনও নম্বরই দিতে চাননি শিবপাল। সম্পর্কে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছেন গতকাল দ্রৌপদীকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করে।
অন্যদিকে, রাজভরের দল সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট করে ছয়টি আসন জিতেছে। কিন্তু রাজভর আর অখিলেশের সঙ্গে থাকতে চাইছেন না।
দিন চারেক আগে তিনিও মুখ্যমন্ত্রী যোগীর সঙ্গে দেখা করে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
তবে এটাও ঠিক, অখিলেশের কাছে এর কোনওটাই অপ্রত্যাশিত নয়। ভোটের পরই ক্ষমতায় ফিরতে না পারার দায় অনেকটাই শরিকদের উপর চাপিয়ে দেন তিনি। বলেন, রাষ্ট্রীয় লোকদল বাদে বাকিরা ভোটে তেমন ঘাম ঝড়ায়নি।
সূত্রের খবর, দ্রৌপদীকে সমর্থনের ইস্যুতে সমাজবাদী পার্টিতেও ভাঙন ধরাতে তৎপর বিজেপি। অখিলেশের দলের সিংহভাগ বিধায়ক অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণি ও জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত।
বিধায়কদের এলাকা উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি বিলিয়ে দ্রৌপদীকে সমর্থনের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। ফলে শরিকদের পর নিজের দলেও বিদ্রোহের মুখে পড়তে পারেন মুলায়ম-পুত্র।
হালে উত্তরপ্রদেশে দুটি লোকসভা আসনের উপ-নির্বাচন হয়েছে। তার একটির সাংসদ ছিলেন অখিলেশ। এবার বিধানসভা ভোটে জিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর অখিলেশ সাংসদ পদ ছেড়েছেন।
আর এক সাংসদ আজমখান জেল থেকে লড়াই করে বিধানসভা নির্বাচনে জয় হাসিল করেছেন। তিনিও বিধায়ক থাকতে চান। ফলে শূন্য আসন দুটি ছিল সমাজবাদী পার্টির হাতে।
দুটিই বিজেপি কেড়ে নিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, উপ নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি মুখ পোড়ার প্রধান কারণ দলের অন্দরে ক্ষোভ এবং তাতে বিজেপির উস্কানি।