দিল্লি, ২৩ ফেব্রুয়ারি– সীমায় তারা অতন্দ্র পাহারায় রয়েছেন বলেই আজও আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি৷ জঙ্গি দমন অভিযান হোক বা নিরাপত্তা রক্ষার কাজ, নিজের জীবন দিয়েও দেশ রক্ষার কাজ করেন বীর জওয়ানরা৷ সেই লড়াইয়ে অনেক সময় তাদের পা বা হাত বা শরীরের কোনও অংশ হারাতে হয়৷
কিছু ক্ষেত্রে হাঁটু থেকে বা পুরো পা, কখনও কবজি বা কনুই থেকে হাত বাদ দিতে হয়৷ তখন পঙ্গু হয়ে সারা জীবন কাটানো ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না৷ কিন্ত্ত এবার সেই ছবি পাল্টাতে চলেছে৷ প্রস্থেসিসের সাহায্যে জওয়ানদের জন্য তাদের পঙ্গুত্ব দূর করতে চলেছেন এইমসের চিকিৎসক-গবেষকরা৷ কৃত্রিম পা নিয়ে হাঁটবেন জওয়ানরা৷ তবে যে সে প্রস্থেসিস নয়, এমন ধরনের ‘এক্সোস্কেলিটাল প্রস্থেসিস’ যা নতুন জীবন দেবে পঙ্গু হয়ে যাওয়া জওয়ানদের৷
দিল্লি এইমসের সঙ্গে এই কাজে হাত মিলিয়েছে দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও৷ এইমসের অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. ভাবুক গর্গ বলছেন, দেশের যে জওয়ানরা পঙ্গু হয়ে বাঁচছেন তাঁদের কথা ভেবেই বিশেষ রকম প্রস্থেসিস বা কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে৷ তবে এই প্রস্থেসিস সকলের জন্যই৷ দুর্ঘটনা বা কোনও শারীরিক অসুস্থতার কারণে যে রোগীদের হাত বা পা অপারেশন করে বাদ দিতে হয়েছে তাঁরাও কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহার করে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন৷ দৈনন্দিক কাজকর্ম করতে পারবেন সহজেই৷
মাত্র ১১ মাস বয়সে হাঁটুর নীচ থেকে দু’টি পা-ই বাদ যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান অ্যাথলিট অস্কার পিস্টোরিয়াস পরবর্তী সময়ে প্রস্থেটিক ব্লেডস নিয়ে প্যারালিম্পিক গেমসে একাধিক স্বর্ণপদক জয় করেছেন তিনি৷ কাজেই প্রস্থেসিস কতটা কার্যকরী হতে পারে তা আগেও প্রমাণিত হয়েছে৷ দিল্লি এইমসের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান ডা. রবি মিত্তল বলছেন, কৃত্রিম হাত বা পা তৈরি করলেই হয় না, শরীরের সঙ্গে সেই নতুন অঙ্গ কীভাবে খাপ খাবে সেটাও দেখা দরকার৷ অর্থাৎ নতুন অঙ্গের মুভমেন্টের সঙ্গে শরীরের পেশি ও হাডে়র নড়াচড়া, পেশির অবস্থান এইসবও দেখতে হয়৷অর্থোপেডিক সার্জনরা বলছেন, প্রস্থেসিস দু’রকমের হয়– ফাংশনাল ও নন-ফাংশনাল৷ কসমেটিক প্রস্থেসিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নন-ফাংশনাল হয়৷ ধরা যাক, হাতের আঙুল বাদ গেছে, তখন সেখানে কসমেটিক প্রস্থেসিস করা যেতে পারে৷ কৃত্রিম আঙুল দেখতে আসলের মতোই হবে তবে কার মুভমেন্ট তেমন হবে না৷ আবার ধরা যাক, হাঁটুর নীচ থেকে পায়ের অংশ বাদ গেছে, সেখানে ফাংশনাল প্রস্থেটিক করতেই হবে৷ কারণ পায়ের মুভমেন্ট দরকার৷
প্রস্থেসিসের গঠন দু’রকমের হয়, এক্সোস্কেলিটাল ও এন্ডোস্কেলিটাল৷ এক্সোস্কেলিটালের ক্ষেত্রে বাইরের কাঠামো তৈরি করতে হয় যা শক্তপোক্ত হয়৷ এই কাঠামো এমনভাবে তৈরি হয় যা শরীরের সঙ্গে যোগ করলে শরীরের পেশির নড়াচড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কাজ করতে পারে৷ এইমসের ডাক্তাররা বলছেন, এইরকমই উন্নতমানের এক্সেস্কেলিটাল প্রস্থেসিস তৈরি করা হচ্ছে৷ সকেট, বডি, কন্ট্রোল সিস্টেম, জয়েন্ট ও টার্মিনাল ডিভাইস সবই আধুনিক মানের৷ শুধু অঙ্গহানি নয়, অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথাতেও অনেক সময় হাত বা পা অকেজো হয়ে যায়৷ সেক্ষেত্রে কাজ করবে এই এক্সোস্কেলিটাল প্রস্থেসিস৷