এবার নাম বদলের পথে হাঁটল উত্তরাখণ্ডও। উত্তরাখণ্ডের ১৫টি জায়গার নাম বদল করেছে বিজেপি শাসিত সরকার। হরিদ্বার, দেরাদুন, নৈনিতাল এবং উধম সিং নগর জেলার ১৫টি জায়গার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে বলে সোমবার জানানো হয়েছে। জায়গার নামেও হিন্দুত্বের প্রলেপ দিতে একসঙ্গে রাজ্যের ৪ জেলার ১১টি জায়গার নামে কাঁচি চালাল পুষ্কর সিং ধামীর উত্তরাখণ্ড সরকার। নাম বদলে ঔরঙ্গজেবপুর হতে চলেছে শিবাজীনগর, গাজিওয়ালি বদলে হচ্ছে আর্যনগর।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামীর দাবি, সেখানকার মানুষের আবেগের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই স্থানগুলির নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল ভারতীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ এবং মহান ব্যক্তিত্বদের সম্মান জানাতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করা। এই সিদ্ধান্ত উত্তরাখণ্ড রাজ্যের ঐতিহ্যকে প্রচারের জন্য বলেও দাবি করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ধামীর এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধী শিবির।
উত্তরাখণ্ড সরকার জানিয়েছে, হরিদ্বারের ঔরঙ্গজেবপুরের নাম পরিবর্তন করে শিবাজিনগর, গাজিওয়ালির নাম পরিবর্তন করে আর্যনগর, মহম্মদপুর জাটের নাম মোহনপুর জাট, খানপুর কুরসালির নাম আম্বেদকর নগর, ইদ্রিশপুরের নাম নন্দপুর, খানপুরের নাম কৃষ্ণপুর এবং আকবরপুর ফজলপুরের নাম বিজয়পুর করা হচ্ছে। একই ভাবে দেরাদুনের মিয়াওয়ালার নাম রামজিওয়ালা, পীরওয়ালার নাম কেশরি নগর, চাঁদপুর খুর্দ-বদলে হবে পৃথ্বীরাজনগর। আবদুল্লানগরের নাম দক্ষনগর করা হয়েছে। নৈনিতালের নবাবি রোডের নাম বদলে অটল মার্গ করা হচ্ছে। উধম সিং নগরে নগর পঞ্চায়েত সুলতান পট্টির নাম বদল করে কৌশল্যাপুরী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুষ্কর সিং ধামীর সরকার। পাশাপাশি নৈনিতাল ও উধম সিং নগর জেলার একাধিক জায়গার নাম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধী শিবির। নাম বদলকে কটাক্ষ করে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, ‘এবার তাহলে উত্তরাখণ্ডের নাম বদলে উত্তরপ্রদেশ-২ করে দিন।’ এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ ইমরান মাসুদ। ধামী সরকারকে তোপ দেগে বলেন, ‘উত্তরাখণ্ডের হাল অত্যন্ত খারাপ। এই বিজেপি নেতারা নাম পরিবর্তনের রাজনীতির বাইরে আর কিছুই করে না। রাজ্যে দুর্নীতি চরম আকার নিয়েছে, যুবসমাজ কাজের জন্য রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে। আর এরা নাম বদলের রাজনীতি করে যাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন জায়গার নাম বদলের এই ধারা শুরু হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের হাত ধরে। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম নাম থাকা একের পর এক জায়গার নাম বদলে দেন যোগী। এলাহাবাদ হয়ে ওঠে প্রয়াগরাজ। মুঘলসরাই ও ফৈজাবাদের নাম পালটে হয় যথাক্রমে দীনদয়াল উপাধ্যায় নগর ও অযোধ্যা। যোগীর পথে হেঁটে কেন্দ্র সরকারও রাষ্ট্রপতি ভবনের মুঘল গার্ডেনের নাম বদলে করে অমৃত গার্ডেন।
রাজ্যের বিজেপির মিডিয়া ইন-চার্জ মানবীর সিং চৌহানের দাবি, এই সিদ্ধান্ত উত্তরাখণ্ডের ঐতিহ্যকে তুলে ধরবে। যদিও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সূর্যকান্ত ধসমানা। তাঁর দাবি, এই নাম পরিবর্তন সময়োপযোগী নয়। রাজ্যের মূল সমস্যাকে বাদ দিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ করার চেষ্টা করছে সেখানকার সরকার।