মুম্বই, ১ জুলাই– পৃথিবীটা সত্যিই গোল৷ মহারাষ্ট্রের রাজনীতি তাই তো প্রমাণ করছে৷ গতবছর ঠিক এই সময়ে কার্যত একদম নীরবে কাকা কাকা শরদ পাওয়ারের তৈরি দলের ভেঙে সিংহভাগ বিধায়ককে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন ভাইপো অজিত পাওয়ার৷ যার দৌলতে রাতারাতি তার কপালে জোটে মহারাষ্ট্র সরকারের উপ মুখ্যমন্ত্রীপদ৷ অবশ্য শুধু উপ মুখ্যমন্ত্রী পদ কেন আরও একটি বড় লাভ পেয়েছিলেন এই ঘর ভাঙণের জন্য৷ গত বছর এই সময় বন্ধ হয়ে যায় তাঁর বিরুদ্ধে সেচ দফতরের কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে চলা তদম্ত৷ আর ঠিক তার এক বছরের মাথায় ফের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে৷ মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অজিতের রাজনৈতিক অস্তিত্বই সংকটের মুখে৷ বর্তমানে কাকা শরদের স্থানেই দাঁড়িয়ে ভাইপো অজিত৷ দলের ২৭জন বিধায়ক এনসিপি-র প্রতিষ্ঠাতা শরদ পাওয়ারের শিবিরে ফিরে যাওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন৷ এই ধাক্কা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পডে়ছে অজিতের পক্ষে৷
তবে এই ঘরওয়াপশি করতে চাওয়া বিধায়কদের নিয়ে শরদ পাওয়ার তাঁর সিদ্ধান্ত সাফ জানিয়ে দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন অজিতের সঙ্গে যাওয়া সব বিধায়ককে তিনি নিজের শিবিরে ফেরাবেন না৷ আপাতত পনেরো জনকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷ ঘনিষ্ঠ মহলে শরদ বলেছেন, অজিতের দল ভাঙানোর সিদ্ধান্তে তিনি যত না আঘাত পেয়েছিলেন, তারচেয়ে বেশি পেয়েছেন লোকসভা ভোটে বারামতীতে বোন সুপ্রিয়া সুলহের বিরুদ্ধে অজিত তাঁর স্ত্রীকে প্রার্থী করায়৷ শরদ দীর্ঘদিন বারামতীর সাংসদ ছিলেন৷ পরে তাঁর মেয়ে সুপ্রিয়া ওই আসন থেকে তিনবার সাংসদ হয়েছেন৷ এবার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও অজিত খুড়তুতো বোনের বিরুদ্ধে স্ত্রী’কে জেতাতে পারেননি৷
আসছে নভেম্বরে মহারাষ্ট্র বিধানসভার ভোট৷ তার আগে ফের শরদের গোষ্ঠীর নির্বাচন কমিশন থেকে মূল এনসিপি নাম এবং ঘডি় প্রতীক ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা উডি়য়ে দেওয়া হচ্ছে না৷
অন্যদিকে, অজিতের এনসিপি-কে জোট সরকারে রেখে আগামী বিধানসভা নির্বাচন লড়াইয়ে ঘোরতর আপত্তি উঠেছে বিজেপির অন্দরে৷ সপ্তাহ দুই আগে অজিতকে সরকারে নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আরএসএস৷ এখন বিজেপির রাজ্য নেতারাও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে শুরু করেছেন৷
অন্যদিকে, অজিতকে নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি ছিল একনাথ শিন্ডের শিবসেনার৷ বিজেপির চাপে অজিতকে জোটে নিতে রাজি হন শিন্ডে৷ পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়ে যায় লোকসভা ভোটের পর৷ মহারাষ্ট্রে লোকসভায় ৩৯টি আসনের মধ্যে ইন্ডিয়া জোট ৩০টিতে জয়লাভ করে৷ এই বিজয়ের পিছনে প্রবীণ নেতা শরদের অবদান কংগ্রেসও স্বীকার করে৷ বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের অভিভাবক হিসাবে শরদ যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়াতেই মহারাষ্ট্রের রাজনীতির হাওয়া ঘুরে যায়৷ চিন্তায় পডে়ছে ক্ষমতাসীন জোট সরকারও৷ লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে এবং উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিশের একাধিকবার একান্ত আলোচনায় জোটের ফাটলও স্পষ্ট হয়েছে৷ তারমধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়েও বিবাদ চরমে উঠেছে৷ ২৮৮ আসনের মধ্যে শিন্ডে দেড়শোটিতে লড়াইয়ের দাবি জানিয়েছেন৷ বিজেপি তা কিছুতেই মানতে নারাজ৷