• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

চালক-গার্ডের থেকে দুর্ঘটনার বিবরণ শুনলেন, উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শেষ হলেই জানা যাবে কারণ, জানালেন রেলমন্ত্রী

নিউ দোমোহনি এবং নিউ ময়নাগুড়ির মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকালে বিকানীর এক্সপ্রেসে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে।

রেলমন্ত্রী অশ্মিনী বৈষ্ণব (Photo: IANS)

নিউ দোমোহনি এবং নিউ ময়নাগুড়ির মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকালে বিকানীর এক্সপ্রেসে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দৃষ্টি কোন বিচার করে তদন্ত হচ্ছে। সেই তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই দুর্ঘটনার আসল কারন জানা যাবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

শুক্রবার সকালে রেল মন্ত্রী দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জলপাইগুড়ি হাসপাতালে যান আহতদের সঙ্গে কথা বলতে। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন রেলমন্ত্রী। মৃতদের পরিবারের প্রতিও তিনি সমবেদনা জানান।

দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের এক লক্ষ টাকা এবং অল্প আহতদের পঁচিশ হাজার টাকা করে সাহায্যের ঘোষণা করেছে রেল দপ্তর। দুর্ঘটনায় আহত ৩৬ জনের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।

২৩ জন ভর্তি রয়েছে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে, সাত জন ভর্তি রয়েছে ময়নাগুড়ি গ্রামীন হাসপাতালে এবং ছয় জন ভর্তি রয়েছে উত্তর বঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এখন পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নয় বলে জানা গিয়েছে দুর্ঘটনায় যাদের আঘাত প্রায় নেই বললেই চলে এরকম ২৯০ জন যাত্রীকে নিয়ে শুক্রবার রাতেই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেল।

যাত্রীরা যাতে তাদের গন্তব্যে পৌছতে পারে ঠিকভাবে সেজন্য এই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। এরমধ্যে ১৫৬ জন শুক্রবার গুয়াহাটি এবং ২৩ জন কামাখ্যা স্টেশনে অবতরন করেন। অপরদিকে রাজস্থানের দুজন মন্ত্রী, একজন পবনজিৎ সিং ভাটি অপরজন গোবিন্দ রাম। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের নির্দেশে ওইদুজন মন্ত্রী শুক্রবার শিলিগুড়ি আসেন।

রেল দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা কেমন হচ্ছে তা দেখতে তাঁরা উত্তর বঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে পৌঁছন। ওই ট্রেনে রাজস্থানের অনেক যাত্রী ছিলেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আহতদের চিকিৎসায় যেভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে তাতে সন্তুষ্ট রাজস্থানের দুজন মন্ত্রী।

তাঁরা সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেবেন। এদিকে শিলিগুড়ি পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী তাপস চ্যাটার্জি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রক্ত সংকটের কথা শুনেই প্রায় ২৫ জন দলীয় কর্মীকে নিয়ে শুক্রবার নিজে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে যান।

সেখানে পৌঁছে তিনি এবং দলের কর্মীরা মিলে রক্তদান করেন। তাপস বাবু জানান, রেল দুর্ঘটনায় আহতদের যাতে রক্তের জন্য কোনো সংকটে না পড়তে হয় সেই কারণেই তিনি রক্তদান করেন। তিনি সারা বছর ধরেই বিভিন্ন সেবামূলককাজে নিজেকে নিয়োজিত করে থাকেন।

বৃহস্পতিবার ময়নাগুড়ি রেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ছয়জন যাত্রী ভর্তি রয়েছে উত্তর বঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। ময়নাগুড়িতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা। দোমহানিতে লাইনচ্যুত হয়ে যায় বিকানির এক্সপ্রেসের ১২ টি কামরা।

বৃহস্পতিবারই রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন তিনি। সেই মতো শুক্রবার দুর্ঘটনার স্থলে পৌঁছন তিনি। এদিন ডিজি রেলওয়ে সেফটি এবং রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অশ্বিনী বৈষ্ণব। দীর্ঘক্ষণ ঘটনাস্থলে ছিলেন তিনি।

ইঞ্জিনের চালকের কেবিনেও মন্ত্রীকে উঠতে দেখা যায়। এদিকে কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছিল রেলমন্ত্রী। শুক্রবার বিকানির এক্সপ্রেসের চালক এবং গার্ডও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেন অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘটনাস্থলে প্রায় এক ঘণ্টা থাকার পর রেল দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে যান তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জল বার্লা এবং মাদারিহার্টের বিধায়ক মনোজ টিজ্ঞা।

এদিন প্রথমে তিনি জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসারতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন রেলমন্ত্রী। কথা বলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও। এরপর সেখান থেকে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসারতদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এরপর সড়কপথে তিনি রওনা দেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশে।

এদিন অশ্মিনী বৈষ্ণব বলেন, ‘কামরাগুলির জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেনি। ইঞ্জিনগুলি খতিয়ে দেখা হবে। এরপরেই দুর্ঘটনার আসল কারণ স্পষ্ট হবে।’ এদিকে এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লাখ আর্থিক সাহায্য, গুরুতর আহতদের এক লাখ এবং সামান্য আহতদের ২৫ হাজার টাকার আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।

জানা গিয়েছে, সেই অর্থ ইতিমধ্যেই তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, দু’টি পরিবারের হদিশ এখনও পাওয়া যায়নি। তাঁদের খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে ময়নাগুড়ির ঘটনায় সবি আই তদন্তের দাবি করেছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।

তিনি বলেন, ‘ট্রেন কি নিজে নিজেই ডিরেইল হয়? রেল ট্র্যাক কি বেচারা বোঝে, ভাই ইলেকশন সামনে। রেল নিয়ে অনেক বছর কোনও বাজে খবর হয়নি। মানুষের প্রাণ নিয়ে ছেলেখেলা। এই ঘটনায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, রক্ষণাবেক্ষণে জোর দেওয়ার কথা গতকালই বলেছিলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেছিলেন, ‘ময়নাগুড়ির দুর্ঘটনা অনেক প্রশ্ন তুলেছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। রেলের অনেক পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকঠাক নজর দিতে হবে।’