আহমেদাবাদ, ২৯ জুন – দিল্লির পর এবার গুজরাটের রাজকোট বিমানবন্দর। শনিবার রাজকোট বিমানবন্দরের বাইরে একটি ছাউনির বিরাট অংশ ভেঙে পড়ে। যদিও এই ঘটনায় হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। শুক্রবারই দিল্লির ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ছাদ ভেঙে এক ব্যক্তির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হৈচৈ পড়ে যায়। দিল্লির বিমানবন্দরের একাংশ ভেঙে ১ জনের মৃত্যুর ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেরও চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। শনিবারও দুর্ঘটনাগ্রস্ত দিল্লির বিমানবন্দরের এক নম্বর টার্মিনাল বন্ধ রয়েছে। তারই মধ্যে রাজকোটের এই ঘটনা দেশের বিমানবন্দরগুলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। একনাগাড়ে চলা বৃষ্টির জেরেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গুজরাটের রাজকোট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিমান বন্দরের ছাউনি ভেঙে পড়ার ঘটনায় ইতিমধ্যে মৃতের পরিবারের জন্য ২০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ৩ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
এদিকে দেশের সব কটি বিমাবন্দরের পরিকাঠামি খতিয়ে দেখতে আইআইটির বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিশেষ কমিটি তৈরী করেছে কেন্দ্র। রাজধানী দিল্লি এবং মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে বিমানবন্দরের ছাউনির একাংশ ভেঙে পড়ার জেরে এবার দেশের সব কটি বিমানবন্দরের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে আইআইটির বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । শুক্রবার রাতেই একথা জানান বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নাইডু। মন্ত্রী বলেন, “বিমানবন্দরের ছাউনির একাংশ ভেঙে পড়ার ঘটনায় আমরা্ উদ্বিগ্ন। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আইআইটির বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। তাঁরা দেশের ১৫৭টি বিমানবন্দরের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখবেন।”
শনিবার রাজকোটের হিরাসার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরের দিকে যাত্রী ‘পিকআপ-ড্রপ’ এলাকায় ভারী বৃষ্টি ও প্রবল হাওয়ার জেরে ছাউনির একাংশ ভেঙে পড়ে। বিমানবন্দরের ডিরেক্টর দিগন্ত বাহোরা বলেন, বৃষ্টির ফলে জমা জলের কারণে ওই অংশটি ভেঙে পড়েছে। অস্থায়ী টার্মিনালের বাইরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। যদিও এই ঘটনায় কেউ জখম হননি। উল্লেখ্য, গুজরাটের এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিও প্রধানমন্ত্রীর হাতেই উদ্বোধন হয়েছিল। ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই পথচলা শুরু হয় এটির। মাত্র এক বছরের মধ্যেই টার্মিনালের ছাউনি ভেঙে পড়ার ঘটনায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোরে ভেঙে পড়ে দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১-এর ছাদের একাংশ। ঘটনায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৫ থেকে ৬ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় একাধিক গাড়ি। শুক্রবারের ঘটনার পরই নয়া অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী কিঞ্জারাপু রামমোহন নাইডু ঘোষণা করেন, দেশের সমস্ত বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে অডিট করা হবে। আর সেই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভেঙে পড়ল আরও একটি বিমানবন্দরের টার্মিনালের একাংশ।
গত বৃহস্পতিবার জবলপুরের দুমনা এয়ারপোর্টের টার্মিনালের ছাউনি ভেঙে পড়ে। এই বিমানবন্দরটিও চলতি বছরের ১০ মার্চ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা খরচে সম্প্রতি এই বিমানবন্দরটির সংস্কার করা হয়। তবে এবার খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্যে এ হেন দুর্ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে বিজেপি সরকার। তোপ দাগতে ছাড়েনি বিরোধী শিবিরও। প্রসঙ্গত, শুক্রবার থেকেই আবহাওয়া অফিস দক্ষিণ গুজরাটের উপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল। কার্যত ঘূর্ণিঝড়ের মতো হাওয়া বইছে গুজরাটে। পূর্বাভাস বলছে আগামী পাঁচদিন সে রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। শনিবার আবহাওয়া দফতর দক্ষিণ গুজরাটে হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। ওই অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আর এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতেই রাজকোট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টার্মিনালের ছাউনি ভেঙে পড়ে।
এদিকে, দিল্লির ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১-এর ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ার ঘটনায় যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। দিল্লি বিমানবন্দরে তিনটি টার্মিনাল রয়েছে। ঘরোয়া বিমান ওঠানামার জন্য ১ নম্বর টার্মিনাল ব্যবহৃত হয়। তিনটি টার্মিনাল মিলিয়ে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৪০০ বিমান ওঠানামা করে। আপাতত টার্মিনাল ১-এর সমস্ত বিমান টার্মিনাল ২ এবং টার্মিনাল ৩-এ স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
লোকসভা ভোটের মুখে দিল্লি বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী । ওই প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাকেত গোখলের দাবি, নির্বাচনের জন্যে তাড়াতাড়ি দিল্লি বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি । তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা উচিত।
যদিও রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামমোহন নাইডু বলেছেন, “যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। বিরোধীরা মিথ্যে অভিযোগ করছেন। বিমানবন্দরের যে অংশ ভেঙেছে তা ২০০৯ সালে তৈরি হয়েছিল।”