• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

অধীর চৌধুরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নন, মমতা প্রসঙ্গে উক্তি খাড়গের  দলকে শেষ যাঁরা করতে চাইছে তাঁদের তিনি খাতির করবেন না, অনড় অধীর 

দিল্লি, ১৮ মে –  অধীর চৌধুরী আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কার্যত মমতাকেই বেছে নিল কংগ্রেস। সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কী হবে না হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধীর চৌধুরী কেউ নন। সেটা ঠিক করবে হাইকমান্ড। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের জোরালো বক্তব্য, ‘হয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে হবে, নয়তো বাইরের রাস্তা খোলা রয়েছে।’  অধীর চৌধুরির নেতৃত্বাধীন প্রদেশ কংগ্রেস যতই

দিল্লি, ১৮ মে –  অধীর চৌধুরী আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কার্যত মমতাকেই বেছে নিল কংগ্রেস। সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কী হবে না হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধীর চৌধুরী কেউ নন। সেটা ঠিক করবে হাইকমান্ড। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের জোরালো বক্তব্য, ‘হয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে হবে, নয়তো বাইরের রাস্তা খোলা রয়েছে।’  অধীর চৌধুরির নেতৃত্বাধীন প্রদেশ কংগ্রেস যতই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করুক, সর্বভারতীয় কংগ্রেস আরও একবার সমঝে দিল, তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক মনে করে। 

তবে দলের এই কঠোর অবস্থানেও মাথা নত করেননি বহরমপুর লোকসভার বিদায়ী সাংসদ অধীর চৌধুরী। মল্লিকার্জুন খাড়গের হুঁশিয়ারিকে সরাসরি উপেক্ষা করে অধীর জানিয়ে দেন, যারা তাঁকে এবং তাঁর দলকে শেষ করতে চাইছে তাঁদের তিনি খাতির করবেন না। তাঁর কাছে এই লড়াই নৈতিকতার।

 
রাজ্যে কংগ্রেস-সিপিএম জোট বেঁধে লড়ছে। এই নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নির্বাচনী সভা থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস বিরোধী অবস্থানে থাকলেও, কেন্দ্রে ইন্ডিয়া জোটকেই সমর্থন করবে তৃণমূল। আরও একধাপ এগিয়ে সম্প্রতি মমতা জানিয়ে দিয়েছেন ইন্ডিয়া জোট কেন্দ্রে সরকার গঠন করলে বাইরে থেকে তাকে সমর্থন করবে তৃণমূল। 
 
বাইরে থেকে সমর্থন করার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শনিবার দলেরই প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীকে কড়া  ভাষায় জবাব দেন মল্লিকার্জুন। দলের অবস্থানও যে এক্ষেত্রে অধীরের জন্য কঠোর, তাও বুঝিয়ে দেন খাড়গে। শনিবার দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, “মমতাজি বলেছেন বাইরে থেকে উনি সমর্থন করবে ৷ এর আগে উনি বলেছেন তিনি ইন্ডিয়া জোটের সরকারে সামিল হবেন ৷ বামেরাও ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছিল ৷ এটা নতুন কিছু নয় ৷ সুতরাং উনি জোটের সঙ্গে যে আছেন তা স্পষ্ট ৷”  
 
কিন্তু রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী কি মমতার এই ইন্ডিয়া জোটে সামিল হওয়াকে মেনে নেবেন ? মমতার প্রসঙ্গে এর আগেও অধীর চৌধুরীর মন্তব্য দলের বিপরীতে ছিল ৷  এই দিন এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে খাড়গে বলেন, “কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জনের মন্তব্য উদ্বেগের, যদিও তিনি কোনওরকম সিদ্ধান্তগ্রহণের কেউ নন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা আছি, দলের হাইকমান্ড এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ৷ হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ৷ যদি হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত কেউ মানতে না-পারেন, তাঁদের জন্য বাইরের পথ খোলা আছে ৷”
   
পাল্টা অধীর বলেন, ‘আমিও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। আমিও হাইকমান্ডেরই লোক।’ অর্থাৎ, অধীর কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে কার্যত সম্মুখ সমরেই নেমে পড়লেন। তাঁর কথায় স্পষ্ট যে, তিনি খাড়গে এবং নিজেকে একই মর্যাদা এবং মঞ্চে রাখছেন। এদিন অধীর বহরমপুর থেকে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘আমার বিরোধিতা, নৈতিক বিরোধিতা ৷ আমাকে কেউ খতম করবে, আর আমি তাঁকে খাতির করব তা তো হয় না ৷ এটা হতে পারে না ৷ আমার বিরোধিতার মধ্যে কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই ৷ আমার বিরোধিতা পশ্চিমবঙ্গে আমার দলকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই। এই লড়াই আমি থামাব না ৷ কারণ আমি দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ৷’ 
 

লোকসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে গত বুধবার মমতা বলেছিলেন, ইন্ডিয়াকে নেতৃত্ব দিয়ে, বাইরে থেকে সব রকম সাহায্য করে আমরা সরকার গঠন করে দেব, যাতে বাংলার মা-বোনেদের ১০০ দিনের কাজে কোনও অসুবিধে না হয়।’ মমতার কথার মর্মার্থ ছিল যে, কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গঠন করলে তৃণমূল সেই সরকারে যাবে না। তারা বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন দেবে। এই  নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয় রাজ্য রাজনীতিতে। যদিও তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার তমলুকের জনসভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘অল ইন্ডিয়া লেভেলে আমরা বিরোধী জোট ইন্ডিয়া তৈরি করেছিলাম। আমরা জোটে থাকব। অনেকে আমায় ভুল বুঝেছে। আমি ওই জোটে আছি। আমিই ওই জোট তৈরি করেছি। আমি জোটে থাকবও। এখানকার সিপিএম নেই। এখানকার কংগ্রেস নেই। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে আমরা জোটে থাকব। ভুল বোঝাবুঝির কোনও জায়গা নেই। ভুল খবর ছড়িয়েছে। এতে বিভ্রান্তি হচ্ছে।’’

মমতার মন্তব্য নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেছিলেন, ‘‘উনি জোট থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। ওঁর কোনও কথায় আমি ভরসা করি না। এখন হাওয়া বদলে এদিকে ভিড়তে চাইছেন। বিজেপির দিকে পাল্লা ভারী দেখলে ওদিকে যাবেন।’ এই প্রসঙ্গে অধীরকে তোপ দেগে খাড়গে বলেছেন, ‘‘অধীর চৌধুরী ঠিক করার কেউ নন। কী হবে তা ঠিক করার জন্য আমরা রয়েছি। কংগ্রেস পার্টি রয়েছে। হাইকমান্ড রয়েছে।’’ 

এদিকে প্রদেশ কংগ্রেসের অধীরের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘‘একটা লোক কংগ্রেস পার্টিকে বাঁচাতে বাংলায় সব আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে। আর কেউ কেউ হাইকমান্ডের নাম করে বাংলা থেকে কংগ্রেসকে তুলে দেওয়ার ইজারা নিয়ে রেখেছেন।’’ 

অধীরকে ভর্ৎসনা করে খাড়গের মন্তব্য নিয়ে ময়দানে নেমেছে তৃণমূল। সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের আইটি বাহিনী লেখা শুরু করেছে, ‘‘যে অধীরকে তাঁরা সভাপতি রাস্তা দেখে নেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন, সেই অধীরের কথার কোনও মূল্য নেই। আসলে কংগ্রেস হাইকমান্ডও জানে, বাংলায় বিজেপি-বিরোধী একমাত্র শক্তি তৃণমূলই।’’