অভিনেতা ইরফানের জীবনাবসান

ইরফান খান (Photo: Instagram / @irrfan)

মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই থেমে গেল ইরফান খানের অভিনয় জীবন। বুধবার সকালেই মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হন। মঙ্গলবারই তিনি কোলন সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কয়েকদিন আগেই তাঁর মা রাজস্থানের জয়পুরে প্রয়াত হন।

লকডাউন ও অসুস্থতার কারণেই ইরফান মায়ের শেষকৃত্যে যোগ দিতে পারেননি। বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্রেন টিউমার নিয়ে তিনি ভুগছিলেন। খানিকটা সুস্থ হয়ে তিনি ‘আংরেজি মিডিয়ম’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে ফেরেন। দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি চলে আসেন অভিনয়ের জাতীয় রাজধানী মুম্বইতে।

টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয় দিয়ে তিনি তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেন। কিন্তু সেসময়ে তেমন প্রতিষ্ঠা না পাওয়ায় তাঁকে টিউশন পড়িয়ে এবং এসি মেশিন মেরামত করে পয়সা রোজগার করতে হয়েছে। চাণক্য, ভারত এক খোঁজ, সারা জাহা হামারা, বানেগী আপনে বাত, চন্দ্রকান্ত, শ্রীকান্ত, আনুগঞ্জ, স্টার বেস্টসেলারস ও পার্স প্রভৃতি টিভি সিরিয়ালে তিনি অভিনয় করেন।


স্টারপ্লাস চ্যানেলের ‘ডার’ শীর্ষক এক সিরিজের প্রধান খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। এখানে তিনি কে কে মেননের বিপরীতে এক সাইকো কিলারের চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮৮ সালে পরিচালক মীরা নায়ের সালাম বোম্বেতে এক অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চরিত্রটি সম্পাদনার সময়ে বাদ পড়ে যায়।

সালাম বোম্বে চলচ্চিত্রটি পরে ভারত থেকে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। দেশে জাতীয় চলচ্চিত্রের পুরস্কারও পায়। সিনেমার সম্পাদনায় বড় পর্দায় তাঁর চরিত্র বাদ পড়লেও ইরফান থেমে থাকেননি। নাটক ও সিরিয়ালে তাঁর অভিনয় চলছিল। এসময় তিনি নাটকে অন্য কুশীলব প্রবাসী বাঙালি সুতপা সিকদারের প্রেম ও পরিণয়ে আবদ্ধ হন।

১৯৭৬ সালে ৭ জানুয়ারি জয়পুরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম ইরফানের। মা বেগম তক বেং তার মরহুম পিতা জাগিরদার তন্ম জেলার বাসিন্দা ছিলেন। সেখানে তাঁর পাগড়ির ব্যবসা ছিল। ১৯৮৪ সালে ইরফান দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামাতে বৃত্তি সহ শিক্ষার সুযোগ পান। এখানে তিনি ড্রামাটিকস আর্টসে ডিপ্লোমা করেন। তবে প্রথমে তিনি একজন ক্রিকেটার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তারপর ছোটখাট ব্যবসারও চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন।

কিছুদিন আগেই চিকিৎসাতে কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি তাঁর অনুরাগীদের উদ্দেশ্যে টুইট করেন, জীবনে জয়ী হওয়ার সাধনায় মাঝে মধ্যে ভালবাসার গুরুত্ব ভুলে যাই আমরা। তবে দুর্বল সময় আমাদের তা মনে করিয়ে দেয়। জীবনের পরবর্তী ধাপে পা রাখার আগে তাই খানিকক্ষণ থমকে দাঁড়াতে চাই। আপনাদের অফুরন্ত ভালবাসা দেওয়ার জন্য এবং পাশে থাকার জন্য সকলকে কৃতজ্ঞতা জানতে চাই। আপনাদের ভালবাসাই আমার যন্ত্রণায় প্রলেপ দিয়েছে। তাই ফের আদাদের কাছেই ফিরছি।

তাঁর শেষ মুক্তি পাওয়া ছবি ‘আংরেজি মিডিয়ম’। তবে লকডাউনের ফলে তা রিলিজ হতে পারেনি। শেষের দিকে তিনি আবারও টুইটে জানান, ‘নমস্কার ভাই-বোনেরা। আপনাদের সঙ্গে একপ্রকার রয়েছি আবার নেইও।’

এদিন মুম্বইতে তাঁর দাফনক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তাঁর শেষকৃত্যে লকডাউন উপেক্ষা করে কুড়িজন সহকর্মী ও অনুরাগী উপস্থিত ছিলেন।