১ জুলাই, গত সোমবার সংসদে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণের জবাবি ভাষণে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন রাহুল। বিভিন্ন ধর্মের আরাধ্যদের ছবি দেখিয়ে রাহুল দাবি করেন, বিজেপি কোনও ধর্ম মানে না। এছাড়াও রাহুলের ভাষণে ছিল অগ্নিবীর, নিট-সহ একাধিক ইস্যু। একাধিক বিষয় নিয়ে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তোলেন রাহুল গান্ধি । বিজেপির অভিযোগ, এই অভিযোগগুলির বেশিরভাগই মিথ্যা , যেগুলি;যার কোন তথ্যপ্রমাণ নেই । বিজেপি সাংসদ বাশুরি স্বরাজও রাহুলের বিরুদ্ধে স্পিকারের কাছে নালিশ জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, মিথ্যা ভাষণের জন্য বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী রিজিজুর দাবি, “সংসদে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতা একের পর এক মিথ্যা ভাষণ করছেন । যার মধ্যে বহু ভুল তথ্য এবং নথি ছিল। আমরা স্পিকারকে এ বিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপের অনুরোধ জানাব। আমরা স্পিকারের পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছি।” রিজিজু বলেন , “কারোরই আইনের হাত থেকে নিস্তার নেই। শুধু আপনি একটি বড় পরিবারের ছেলে বলে বাড়তি সুবিধা পাবেন না। কেউ যদি নিজের পদমর্যাদার অপব্যবহার করতে চান, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবেই। ”
প্রসঙ্গত , নিয়ম মাফিক সংসদে কোনও সাংসদ বা মন্ত্রীর বক্তব্যে ভুল তথ্য রয়েছে বলে যদি অন্য কোনও সাংসদ মনে করেন, তাহলে তিনি স্পিকারের নালিশ জানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে নিজের বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে হয় অভিযোগকারীকে। এই নিয়মেই রাহুলের বিরুদ্ধে স্পিকারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বাঁশুরি স্বরাজ।
এদিকে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ‘অগ্নিবীর’ নামে ‘ভাড়াটে সৈন্য’ নিয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কংগ্রেস নেতা ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে সরব হয়েছিলেন। দেশব্যাপী বিরাট আন্দোলনও গড়ে উঠেছিল। সরকারপক্ষ চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা সেনাদের মৃত্যু হলে শহিদের মর্যাদা, পেনশন সহ বেশকিছু আর্থিক প্যাকেজের কথাও ঘোষণা করেছিল। সদ্যসমাপ্ত সংসদ অধিবেশনে এই নিয়ে তর্ক-বিতক হয় রাহুল গান্ধি ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মধ্যে।
গত ১ জুলাই রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে লোকসভার বিরোধী দলনেতা কেন্দ্রের অগ্নিপথ প্রকল্পের কড়া সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, এই প্রকল্পের শর্ত মেনে সরকার কাউকে শহিদের মর্যাদা বা পেনশন দেয়নি। রাহুলের দাবির বিরোধিতা করে রাজনাথ বলেন, বিরোধী দলনেতা ভুল তথ্য দিচ্ছেন। শহিদ অগ্নিবীরদের এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
সংসদে রাহুল বলেন, কিছুদিন আগে আমি পাঞ্জাবের এক অগ্নিবীরের বাড়ি গিয়েছিলাম। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে তিনি শহিদ হন। কিন্তু ভারত সরকার তাঁকে শহিদ বলে স্বীকৃতি দেয়নি। নরেন্দ্র মোদি তাঁকে অগ্নিবীর বলে থাকেন। এই পরিবার পেনশন পায়নি। কোনও ক্ষতিপূরণ পায়নি। আমি ওঁদের কান্না দেখেছি। চাকরি করা জওয়ানরা পেনশন পান। কিন্তু অগ্নিবীরদের সেই সুযোগ নেই। তাঁদের সেনা বলেই মনে করে না এই সরকার। সেনাবাহিনীতে পক্ষপাতিত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। একজন সমস্ত সুযোগসুবিধা পাবেন, অন্যজন তা থেকে বঞ্চিত হবেন।
রাহুলের বক্তব্যের মাঝপথেই রাজনাথ উঠে দাঁড়িয়ে স্পিকার ওম বিড়লার অনুমতি নিয়ে বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিরোধী দলনেতা যেন সভাকে বিভ্রান্ত না করেন। এই প্রকল্পে যদি কেউ শহিদ হন, তাহলে তাঁর পরিবারকে এক কোটি টাকা দেওয়া হয়।
রাহুল গান্ধির বক্তব্য যে সত্যি তার প্রমাণ হল, ভারতীয় সেনার ওয়েবসাইটেও স্পষ্টভাবে লেখা আছে অগ্নিবীররা পেনশন পাওয়ার অধিকারী নন। বিধি অনুযায়ী, কর্তব্যরত অবস্থায় কোনও অগ্নিবীরের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার বিমার ৪৮ লক্ষ টাকা এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৪ লক্ষ টাকা পাবে। এছাড়া, কর্মজীবনের বাকি মেয়াদের বেতন এবং সরকারের দেয় অংশ ও সুদের টাকা ওই কর্মীর সেবা নিধি ফান্ডে জমা হবে। শর্তাবলির বিভিন্ন অংশে যা আছে, তাতে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট মৃত্যু হলেই একজন অগ্নিবীরের পরিবার এক কোটি টাকা পেতে পারেন না, যেমনটা দাবি করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
সিয়াচেন হিমবাহে কর্তব্যরত অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যু হয় অগ্নিবীর অক্ষয় গাওটে-র। তাঁর বাবা লক্ষ্মণ গাওতে জানিয়েছিলেন কেন্দ্র ও রাজ্যের টাকা মিলিয়ে তিনি ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। যাতে প্রমাণ হয়, কেন্দ্রীয় সরকার একাই এক কোটি টাকা দেয় না। মৃত্যুর কারণ বিচারে ভিন্ন ভিন্ন টাকা দেওয়া হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী অবশ্য রাহুল গান্ধির দাবি নস্যাৎ করে বুধবারই একটি ব্যাখ্যা দেয় । অজয় কুমার নামে মৃত এক অগ্নিবীরের পরিবারকে ইতিমধ্যেই ৯৮ লক্ষ টাকার মতো দেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানায়, অগ্নিবীরের সর্বোচ্চ বলিদানকে কুর্নিশ জানায় বাহিনী। তাঁর শেষকৃত্য হয়েছে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায়। মোট দেয় অর্থের মধ্যে ৯৮.৩৯ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে আরও ৬৭ লক্ষ টাকা হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর মোট প্রাপ্য হবে প্রায় ১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা।