দিনভর পূর্ব আগরতলা থানায় বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিকেলে যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গাড়ি চাপা দিয়ে একজনকে খুনের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭, ১০২ বি, ১৫৩, ১৫৩ এ অর্থাৎ জামিন অযোগ্য ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে বলে খবর।
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, রাজনৈতিক নির্দেশেই এই গ্রেপ্তারি। অর্থাৎ তিনি সরাসরি আঙুল তুললেন বিপ্লব দেব সরকারের দিকে। অভিযোগ, শনিবার ভোটের প্রচার সেরে ফেরার পথে চৌমুহনীতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সভার উদ্দেশে তিনি ‘খেলা হবে’ স্লোগান দেন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে কটু মন্তব্যও করেন।
পাশাপাশি সায়নীর গাড়ি একজনকে চাপা দেয় বলেও অভিযোগ ওঠে। তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করাতে হয়। এরপর রাতেই সায়নীকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ যায় পোলো হোটেলে। এখানেই রয়েছেন সায়নী-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। রাতে পুলিশের কাছে আইনি নোটিস দাবি করেন তৃণমূল নেতারা।
সায়নীকে থানায় নিয়ে যেতে বাধা দেন কুণাল ঘোষ৷ কিন্তু রবিবার সকালে আগরতলা পূর্ব থানায় নিজেই যান সায়নী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কুণাল ঘোষ, সুস্মিতা দেব। থানায় দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তৃণমূলের যুব সভানেত্রীকে। তাঁরা থানায় থাকাকালীনই নতুন করে রাজনৈতিক অশাস্তি শুরু হয় থানার বাইরে।
তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষে ২ তৃণমূল কর্মী আহত হন, তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিকের গাড়ি ভাঙ্গুর চলে। এর তীব্র নিন্দা করে টুইট করেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ রাতেই আগরতলার উদ্দেশে যাচ্ছেন অভিষেক। রবিবার দিনভর থানার বাইরে, ভিতরে শোরগোল।
তৃণমুলের যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষকে থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন বিজেপির কর্মী, সমর্থকরা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। তা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পূর্ব আগরতলা থানা চত্বর। বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হয়।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ তৃণমূলের হয়ে প্রচার করতে ত্রিপুরায় অস্থায়ী আস্তানা গেঁড়েছে নেতৃত্ব। কুণাল ঘোষ, সুস্মিতা দেব, সায়নী ঘোষরা রয়েছেন পোলো টাওয়ার হোটেলে। রবিবার সকালে সেই হোটেলেই চড়াও হয় স্থানীয় পুলিশ।
তাঁদের দাবি, সায়নী ঘোষের গাড়ির ধাক্কায় একজন জখম হয়েছেন। সেই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সায়নীকে আটক করতে আসে পুলিশ। যদিও পুলিশকে আগে নোটিস দিতে হবে বলে দাবি করেন কুণাল ঘোষ। এমনকী, সায়নীকে থানায় নিয়ে যেতে বাধা দেন তিনি। পরে অবশ্য সায়নী নিজেই পূর্ব আগরতলার মহিলা থানায় হাজিরা দিয়েছেন।
তাঁর সঙ্গে গিয়েছেন সাংসদ সুস্মিতা দেব, যুব তৃণমূল নেতৃত্ব সুদীপ রাহা, জয়া দত্তরা। তৃণমূল নেতৃত্ব থানায় পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কথা বলার সময় অভিযোগ, বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা থানা ঘেরাও করেন। সায়নী ঘোষ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করেছেন। তার বিরোধিতায় সরব হয়েছে বিজেপি।
এরপর থানায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। থানার বাইরে তৃণমূল-বিজেপি সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ধুন্ধুমার বেঁধে যায়। বিজেপির ২৫-৩০ জন বাইকে করে আগরতলা মহিলা থানায় হামলা করে বলে অভিযোগ, চলে ইটবৃষ্টিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিকের গাড়িতে ভাড্ডুর হয়। তৃণমূলের দুই কর্মীর মাথা ফেটেছে। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের অভিযোগ, মাথায় হেলমেট পরে, হাতে লাঠি নিয়ে বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা থানার বাইরে জমায়েত করে তৃণমূলের উপর আক্রমণ চালায়। থানায় পুলিশের নাগালের মধ্যে এভাবে হামলা চালানো নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ তৃণমুল নেতৃত্ব। সুস্মিতা দেবদের অভিযোগ থানায় ডেকে এনে পরিকল্পিতভাবে আঘাত করা হয়েছে। বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।