পাশার দান উল্টে গেল পাহাড়ে। যে মোৰ্চা নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূল সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেছিল, পুলিশ অফিসার অমিতাভ মালিকের খুনের ঘটনায় অভিযােগ দায়ের করেছিল, একাধিক অভিযােগের দায়ে ‘ফেরার’ সেই বিমল গুরুংকে পঞ্চমীর দিন প্রকাশ্যে দেখা গেল কলকাতার বুকে। শুধু তাই নয়, বুধবার তিনি সাংবাদিক বৈঠকও করলেন। সেখানে জানিয়ে দিলেন এনডিএ ছাড়ছেন তিনি।শুধু এখানেই থেমে না থেকে বিমল গুরুং বুধবার ঘােষণা করলেন একুশের ভােটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে লড়বেন তিনি। জোর গলায় জানিয়ে দিলেন, জেলে যাব, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান তিনি।
দিনক’য়েক আগেই গুঞ্জন উঠেছিল বিমল গুরুং শাসক সরকারের সঙ্গে যোগাযােগ রাখছেন। বুধবার বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ সাদা ল্যান্ডরােভার ডিসকভারি স্পোর্টস কারে বিমল গুরুংকে দেখা দেল সল্টলেকের গো ভবনের সামনে। তবে সেখানে অবশ্য প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বিমল গুরুংকে ।এরপর কলকাতার এক অভিজাত হােটেলে চলে যান তিনি। সেখানে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন। উগরে দিলেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ শিবিরের বিরুদ্ধে। জানিয়ে দিলেন তিনি আর মােদি- শাহর সঙ্গে নেই।
কারণ বিজেপি গোর্খাল্যান্ড নিয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি। গুরুং বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিজেপিকে সমর্থন করছি। গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর স্থায়ী সমাধানের জন্য বিজেপির কাছে দরবার করেছি। কিন্তু তারা টালবাহানা করেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তত তাদের কথা শুনেছেন। তাই বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার পাশে থেকেই লড়তে চাই।
আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চাই। গুরুং এদিন স্বীকার করে নেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ের উন্নয়নে অনেক কিছু করেছেন। বলেন, পাহাড়-ডুয়ার্সের উন্নয়নের জন্য আমরা মুখ্যমন্ত্রীর মুখাপেক্ষী। ওঁর ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। এমনকী তাকে যদি জেলেও যেতে হয়, তাহলেও জেলে বসেই একুশের নির্বাচনে মমতা সরকারের পক্ষেই কাজ করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিমল গুরুং।
তবে কি গোর্খাল্যান্ড নিয়ে শাসক সরকারের সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিমল গুরুং জানান, কোনও তৃণমূল নেতা বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এখনও কোনও কথা হয়নি। তবে এবার কথা হবে। বস্তুত বুধবার বিমল গুরুং নবান্নো যেতে পারেন, এমন গুঞ্জনও উঠেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বুধবার নবান্নে যেতে দেখা যায়নি তাকে।
রাজনীতিতে যে কেউই চিরবন্ধু বা চিরশত্রু হয় না, বিমল গুরুং-এর ডিগবাজিই তার প্রমাণ। বিমল গুরুং এদিন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, বিজেপি কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তাই ওদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখতে চাই না। তিনি বলেন, তিন বছর ধরে দিল্লিতেই ছিলাম। এই তিন বছরে আমার জীবন দর্শন পাল্টে গিয়েছে। গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে সহমর্মিতা পাবেন, এই আশা নিয়েই বিজেপিতে ছিলেন বলে জানিয়ে দেন গুরুং।
তিনি বলেন, ছয় বছর কেটে গেলেও কোনও কথা রাখেননি মােদি সরকার। ২০১৪ সালে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহারে গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর সমাধানের কথা বলা থাকলেও তা নিয়ে একচুলও এগােয়নি মােদি- শাহর সরকার। ২০১৪ সালে যে সরকার গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর সমাধান করবে চাইবে, তাদেরই সমর্থন দেবেন বলে জানিয়ে দেন বিমল গুরুং।
এদিন বিমল গুরুং নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে না চাইলেও তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, রাজ্যে শান্তি, স্থায়িত্ব এবং উন্নয়নের প্রশ্নে সবার সহযােগিতা কাম্য। লােকসভা নির্বাচনে পাহাড়ে বিজেপি নেতা রাজু বিস্তের জয়ের নেপথ্যে বিমল গুরুং-এর হাত ছিল বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। এমনকী এবছর মার্চেই দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীর সভাপতি জে পি নাড্ডার ছেলের বিয়ের আসলে দেখা গিয়েছিল বিমল গুরুং এবং রােশন গিরিকে। তখনই বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে গুরুং-এর যোগসাজোশ নিয়ে জল্পনা বাড়ে। কিছুদিন আগে গোর্খাল্যান্ড ইস্যু নিয়ে আলােচনার জন্য মাের্চা এবং রাজা সরকারকে আমন্ত্রন জানিয়েছিল।
এবার সরাসরি কাকাতাম বিমল গুরুং-এর আবির্ভাব নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। তবে কি আত্মসমর্পণ করে গ্রেফতারি এড়াতে চান মোর্চা নেতা। নাকি মমতা সরকারের ছত্রছায়ায় এসে ফের পাহাড়ে ক্ষমতা দখল করতে চাইবেন গুরুং। এইসব প্রশ্নই এখন ঘােরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে।