অতিবৃষ্টির জেরে দিল্লিতে মৃত ৯, নিকাশি নালায় ভেসে গেল মা ও শিশু!

নিউ দিল্লি, ১ আগস্ট: প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দেশের একের পর এক পাহাড়ি এলাকা। মুষলধারে বৃষ্টির জেরে কেরলের ওয়েনাড়ের পাহাড় অধ্যুষিত চারটি গ্রামে ভূমি ধস নেমেছে। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত প্রায় তিনশত বাসিন্দার মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ বহু মানুষ। একইভাবে উত্তরাখন্ড ও হিমাচল প্রদেশেও শুরু হয়েছে প্রকৃতির তান্ডব লীলা। হিমাচলে ক্লাউড বার্স্টের জেরে দুইজনের মৃত্যু এবং ৫০ জনের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে একাধিক ইমারত। তবে এই দুর্যোগ থেকে বাদ পড়েনি রাজধানী দিল্লি। সেখানেও প্রবল বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার জলে নিকাশি নালায় ভেসে গিয়ে মা ও শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মৃতা তরুণীর নাম তনুজা (২২)। তাঁর তিন বছরের শিশুরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

জানা গিয়েছে, বুধবার ঘটনার সময় মৃত তনুজা বিস্ত তিন বছরের শিশু পুত্র প্রিয়াংশকে নিয়ে সন্ধ্যায় বাজারে গিয়েছিলেন। রাস্তা ছিল জলমগ্ন। তিনি বৃষ্টি মাথায় বাজার থেকে ফেরার সময় খোলা মুখ নর্দমায় পড়ে ভেসে যান। তবুও শিশু পুত্রের হাত শক্ত করে ধরে ছিলেন মা। প্রায় দুই ঘণ্টা পর প্রায় ৫০০মিটার দূরে তাঁদের দেহ উদ্ধার হয়।

তনুজার স্বামী গোবিন্দ সিংহ নয়ডার একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। বুধবার সন্ধ্যায় যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন তিনি নিজের দফতরে কাজ করছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘উদ্ধারকাজ দ্রুত শুরু হলে আমার স্ত্রী এবং পুত্রের প্রাণ বাঁচত। প্রতি বছর এই ঘটনা হচ্ছে, কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়না।’’


সুতরাং কোথাও অতিবৃষ্টি, কোথাও হড়পা বান, কোথাও বা ভূমি ধস। বর্ষা মরশুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত। অথচ বৃহস্পতিতেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত। দিল্লি ছাড়াও জলমগ্ন গুরুগ্রাম ও নয়ডার অধিকাংশ অঞ্চল। দিল্লিতেই চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া গুরুগ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গ্রেটার নয়ডায় আরও দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে। এই সময়ে ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে দিল্লিতে। যা গত ১৪ বছরে জুলাই মাসের একদিনের বৃষ্টিতে সর্বোচ্চ রেকর্ড। বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়েছে রাজধানী শহর। জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। একাধিক বাড়ির দেওয়াল ধসে পড়েছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। বন্ধ রাখা হয়েছে শহরের স্কুলগুলিও। যানবাহন চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটেছে। গুরুগ্রাম, নয়ডা, গাজিয়াবাদ এবং ফরিদাবাদে ব্যাপক ট্রাফিক জ্যামের কারণে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে বিমান পরিষেবাও । প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সারাদিনে প্রায় ১০টি বিমান নামতে পারেনি দিল্লিতে। বাধ্য হয়ে এই উড়ানগুলিকে জয়পুর ও লখনৌ বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ৫ আগস্ট অবধি বজ্রগর্ভ মেঘে লাগাতার বৃষ্টি চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। দিল্লির পথে জল জমা নিয়ে আপ সরকারকে খোঁচা দিয়ে ভিডিও পোস্ট করেছে বিজেপি।