করোনা সংক্রমণের ভয় আর লকডাউন- সামাজিক দূরত্বের গেরোয় আর সে ভাবে ‘বারমুখো’ হতে ইচছুক নন দেশের ক্রেতাকুল। রিটেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’র এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে- ৬৭ শতাংশ ক্রেতাই এখন কেনাকাটা করতে বাইরে বেরোতে আগ্রহী নন। শুধু তাই নয়। ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি এবং আয় কমে যাওয়ার কারণে ৬৭ শতাংশ দেশবাসীই লকডাউনের পরবর্তী সময়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাদ দিয়ে দৈনন্দিন খরচে রাশ টানবেন। যা দেশের খুচরো বিক্রেতার জন্য মোটেই আশাব্যঞ্জক তথ্য নয়।
সমীক্ষা আরও বলছে, লকডাউনে ঢের হয়েছে শিক্ষা। আনলক ১ চালু হলেও পছন্দের রেস্তোরাঁয় গিয়ে ডাইন-আউট, উইকএন্ডে গাড়ি নিয়ে সপরিবার কাছাকাছি ঘুরতে যাওয়া বা ঘরোয়া আসবাবপত্র, গয়নাগাঁটি-ঘড়ি এবং পার্সোনাল গ্রুমিংয়ের মতো চিরকালের ‘হট’ ফেভারিট পণ্য কেনায় আর মতি নেই দেশবাসীর।
লকডাউনের নাগপাশ কাটলেই বাজারে ফের কেনাকাটার ধুম পড়বে বলে যাঁরা মনে করেছিলেন, রিটেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় তাঁরা আশাহত হবেন সন্দেহ নেই। চার হাজারের বেশি ক্রেতার প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে ‘আনলকিং ইন্ডিয়ান কনজিউমার সেন্টিমেন্ট পোস্ট লকডাউন’ শীর্ষক ওই সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, সার্বিক ভাবে দেশে লকডাউন শেষ হওয়ার প্রথম ৩ মাস কাটার পরই ৬২ শতাংশ ক্রেতা দোকানে যেতে চান।
টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ শহর ধরলে এই সংখ্যা উঠে পড়বে ৭৫ শতাংশে। অদূর ভবিষ্যতে তাঁরা কেনাকাটার পরিধি বাড়াবেন বলেছেন মাত্র ৬ শতাংশ ক্রেতা। এর ভিত্তিতে দেশের খুচরো বাজার দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও ইঙ্গিত নেই বলেই মত সমীক্ষকদের।
সমীক্ষায় মিলেছে আরও অনেক চমকপ্রদ তথ্য। যেখানে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছে, যে দোকানে নিয়মিত স্যানিটাইজেশন হয়, আগামী দিনে শুধু সেখানেই তাঁরা যেতে চান। পাশাপাশি জানিয়েছে, দোকানে যত কম সংখ্যক সেলসম্যান থাকবে, সেখানেই যাবেন তারা। ৩০ শতাংশের দাবি, ভার্চুয়াল ট্রায়াল রুমে পছন্দের পণ্য দেখে নিয়ে দোকানে সর্বনিম্ন সময় কাটাতে আগ্রহী তারা।
তবে, আশার কথা একটাই। অনলাইনে কেনাকাটার বদলে এখনও দোকানে গিয়ে যাচাই করেই পণ্য কেনার উপরে জোর দিয়েছেন দুই-তৃতীয়াংশ ক্রেতা। সমীক্ষায় উঠে আসা তথ্য সম্পর্কে রিটেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার সিইও কুমার রাজাগোপালনের দাবি, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাদ দিলে ক্রেতারা আগামী কয়েক মাসে কেনাকাটায় বিশেষ আগ্রহী হবেন না। সেক্ষেত্রে খুচরো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাইকে সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে বিপণির পরিবেশ বদলাতে হবে। ক্রেতা নিরাপদ বোধ করলেই একমাত্র দোকানে আসবেন এই সারসত্য মাথায় রেখে সবাইকে পদক্ষেপ করতে হবে।