১০ বছরে ৬ বার, ফের ধরাশায়ী বাইচুং ভুটিয়া, সিকিমের মসনদে ফের প্রেম সিং তামাং 

গ্যাংটক, ২ জুন –  ষষ্ঠবারেও রাজনীতির ময়দানে জয়ের মুখ দেখতে পেলেন না বাইচুং ভুটিয়া। গত এক দশকে টানা ৬টি নির্বাচনে পরাজয়ের রেকর্ড গড়লেন ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক  তথা তারকা স্ট্রাইকার বাইচুং ভুটিয়া। বাংলার পরে এবার পড়শি সিকিমেও বিধানসভা ভোটে পরাজিত হয়েছেন তিনি। ছোট্ট এই পাহাড়ি রাজ্যে কার্যত হারিয়ে গেল সিকিম ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট বা এসডিএফ।  বরফুং কেন্দ্রে আট হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন সে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিংহ তামাং ওরফে পিএস গোলের দল সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চার প্রার্থী রিকশল দোরজি ভুটিয়া।
 
১০ বছরে ৬ বার হার। ফুটবল জীবনে ব্যর্থতার স্বাদ তিনি পাননি বললেই চলে। কিন্তু, ভোটের ময়দানে একটানা ব্যর্থ ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বাইচুং ভুটিয়া। রবিবার আরও একবার নির্বাচনী রাজনীতিতে পরাজয় হল তাঁর। এদিন সিকিম বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়েছে। বরফুং আসন থেকে সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা এসডিএফ-এর হয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন বাইচুং। শাসক দল, সিকিম ক্রান্তিকারি মোর্চার প্রার্থী, রিকশাল দোর্জে ভুটিয়ার কাছে ৪,৩৪৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। তাঁর দলের অবস্থাও তথৈবচ। ৩২ আসনের সিকিম বিধানসভায় তারা মাত্র ১টি আসনেই জয়ী হয়েছে। বাকি ৩১ টি আসনেই জয়-জয়কার শাসক দল, এসকেএম-এর।
 

শুধু বাইচুং ভুটিয়াই নয়, পরাজিত হয়েছেন এসডিএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং-ও। দুটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন তিনি। দুই জায়গাতেই হেরেছেন।২০২৪ বিধানসভা নির্বাচনে ৩২টি আসনের মধ্যে মাত্র একটি আসনে জয় পেয়েছে পবন চামলিংয়ের দল।  

গত ১৯ এপ্রিল, লোকসভা ভোটের সঙ্গেই এক দফায় সিকিম বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। এদিন ফল প্রকাশের শুরুর থেকেই এগিয়ে ছিল এসকেএম। শেষ পর্যন্ত, ৩১টি বিধানসভা আসনে জিতে রাজ্যে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরছে তারা। 

২০১৯-এর নির্বাচনে এসকেএম-এর সঙ্গে জোট বেঁধেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু, চলতি বছরের মার্চে জোট ভেঙে দেয় বিজেপি। নির্বাচনে এককভাবে লড়ার সিদ্ধান্ত নেয় । কিন্তু, নরেন্দ্র মোদির দল এই পাহাড়ি রাজ্যে একটি আসনও জিততে পারেনি। ৩২ আসনের সিকিম বিধানসভায় সরকার গঠনের জন্য ১৬টি আসন লাগে। ২০১৯-এ এসকেএম জিতেছিল ১৭ আসনে। আর এসডিএফ জিতেছিল ১৫ আসনে।


ফুটবল ময়দানে তিনি যতটা দাগ কাটতে পেরেছেন নিজের কেরিয়ারে, রাজনীতির ময়দানে ততটাই ব্যর্থ বাইচুং  । হারের ডবল হ্যাটট্রিক করে ফেললেন পাহাড়ি বিছে। এক নয়, একাধিক দলের হয়ে দাঁড়িয়েও বারবার হারের লজ্জার রেকর্ড গড়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে এরাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, পাশের রাজ্যের সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, হামরো সিকিম হার্টি। তবে একটির হয়েও জয়ের খাতা খুলতে পারেননি । এবারে তিনি ৪৩৪৬ ভোটে হেরে গেলেন এসকেএম প্রার্থী রিকশাল দোর্জে ভুটিয়ার কাছে।  সিকিমের নির্বাচনে ভাইচুংয়ের দল অর্থাৎ এসডিএফকে কার্যত খড়কুটোর মতোই উড়িয়ে দিয়েছে এসকেএম। ৩২ কেন্দ্রের সিকিমে, ৩১টি আসনেই জিতেছে সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চার প্রার্থীরা, ফলে এক্ষেত্রে বাইচুংয়ের কাছে কাজটা কঠিনই ছিল।

ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর এই তারকা  স্ট্রাইকার বেছে নিয়েছিলেন বাংলাকে, নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারে সাফল্য পেতে। রাজ্যের শাসক দল ২০১৪ সালে তাঁকে দার্জিলিং কেন্দ্রে প্রার্থী করলেও তিনি সেখানে হেরে যান, এরপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাইচুংকে শিলিগুড়ি থেকে লড়ার টিকিট দেয় তৃণমূল কংগ্রেস, কিন্তু সেবারও জিততে পারেনি তিনি।  এরপর সিকিমে নিজের দল হামরো সিকিম পার্টি খোলেন বা বাইচুং। ২০১৯ বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন গ্যাংটক এবং তুমেন লিঙ্গি কেন্দ্র থেকে, কিন্তু সেখানেও হারেন তিনি। এরপর গ্যাংটকে হওয়া উপনির্বাচনে লড়াই করেও হারের মুখ দেখেন পাহাড়ি বিছে।
 
২০২৩ সালে হামরো সিকিম পার্টিকে তিনি সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত করে দেন। আশা করেছিলেন ২৪-এর বিধানসভায় হয়ত জিততে পারবেন, সেই মতো লড়ছিলেন বরফুং কেন্দ্র থেকে। কিন্তু এবারও ভাগ্য বদলালো না তাঁর। হারের লজ্জা নিয়েই এবারের রাজনৈতিক ময়দান ছাড়তে হল বাইচুংকে।